চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে পরিবর্তনের একটি বড় সুযোগ তৈরি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
শুক্রবার জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে আয়োজিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, "বাংলাদেশের রাজনীতিতে পরিবর্তন আনার একটি বড় রকমের সুযোগ তৈরি হয়েছে। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে রাষ্ট্র সংস্কারের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে যতটা সম্ভব স্বচ্ছতার সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।"
তিনি জানান, কমিশন ইতোমধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে পৌঁছেছে। ব্যবস্থাপনা ও প্রক্রিয়াগত দিক নিয়ে এখন বিশেষজ্ঞ এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের আলোচনা হবে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রাথমিক পর্যায়ের আলোচনায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মোট ৬২টি বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে জানান তিনি। দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনায় উত্থাপিত ২০টি বিষয়ের মধ্যে ১১টিতে কোনো ভিন্নমত বা 'নোট অব ডিসেন্ট' ছিল না। তবে বাকি ৯টি বিষয়ে 'নোট অব ডিসেন্ট'সহ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় সরকারে সংসদ সদস্যদের প্রভাব নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক রীয়াজ বলেন, "জাতীয় সংসদের সদস্যদের স্থানীয় সরকারের কার্যক্রমে অংশগ্রহণ আইনত বৈধ নয়। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত ৬২টি বিষয়ের মধ্যেও সাংসদদের প্রভাব নিয়ন্ত্রণে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব রয়েছে।"
জাতীয় সনদের চূড়ান্তকরণের পর নোট অব ডিসেন্ট থাকা বিষয়ের ভবিষ্যৎ কী হবে—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, "বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা ও বাস্তব পরিস্থিতি পর্যালোচনার মাধ্যমে তা নির্ধারণ করা হবে। বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়া হবে, পাশাপাশি যেসব বিষয়ে ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠ দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছেছে, তা গুরুত্বসহ বিবেচনা করা হবে।"
কোনো কোনো রাজনৈতিক দল জাতীয় সনদের ভিত্তিতে আগামী নির্বাচনের কথা বলছে—এ বিষয়ে অধ্যাপক রীয়াজ বলেন, “নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে ঐকমত্য কমিশন যুক্ত নয়।”
তিনি জানান, কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ প্রণয়নের কাজ করছে। এ সনদের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় বিশেষজ্ঞ ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক আলোচনা চলবে, তবে তা দীর্ঘমেয়াদি হবে না।
তিনি আরও বলেন, “বিশেষজ্ঞ ও রাজনৈতিক দলগুলোর পরামর্শের ভিত্তিতে সরকারের পক্ষ থেকে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ড. মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
উল্লেখ্য, অন্তর্বর্তী সরকারের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দেওয়া সংস্কার প্রস্তাব কীভাবে বাস্তবায়িত হবে এবং ‘জুলাই সনদে’ স্বাক্ষরের বাধ্যবাধকতা কেমন হবে—তা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কমিশন পুনরায় আলোচনা করবে।
ইএইচ