সাভার মডেল কলেজ

জামায়াত কর্মীকে অধ্যক্ষের দায়িত্ব দিতে বেপরোয়া সাবেক অধ্যক্ষ!

মো. শরিফ শেখ, সাভার প্রকাশিত: আগস্ট ২৮, ২০২২, ০৪:৫৩ পিএম
জামায়াত কর্মীকে অধ্যক্ষের দায়িত্ব দিতে বেপরোয়া সাবেক অধ্যক্ষ!

সাভার মডেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মো. তৌহিদ হোসেনের এমপিও অবৈধ ঘোষিত হওয়ার পরপরই প্রতিষ্ঠানটির ৯ম গ্রেডের শিক্ষক মিরাজুল ইসলাম অধ্যক্ষের দায়িত্ব পেতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। মডেল কলেজের শিক্ষার্থীদের কে আন্দোলনের উস্কানি দিয়ে খেপিয়ে তুলেছেন তিনি। কোমলমতি এসব শিক্ষার্থীদের দিয়ে আন্দোলন করিয়ে সরকার বিরোধী মহলের এই শিক্ষক অন্য খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে। ষড়যন্ত্রকারী মহল এই আন্দোলনকে উস্কে দিয়ে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চায়। তারা সরকারকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করছে। বিগত সময়ে কোটা আন্দোলনেও জামায়াত-শিবির ও বিরোধী মহল উশৃঙ্খলতা করেছে।

অভিযোগ রয়েছে, সাভার মডেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মিরাজুল ইসলাম ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের একাংশকে ফুঁসলিয়ে নিয়মিত পাঠদানে বাধাগ্রস্ত, বর্তমান অধ্যক্ষের নিয়ম-কানুন না মানা ও সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে কলেজের সুনাম ক্ষুণ্ণ করছেন।

মিরাজুল ইসলাম জামায়াতের একজন সক্রিয় কর্মী বলে জানা গেছে। তিনি সাভার মডেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ তৌহিদ হোসেনের অনুগত ছিলেন। সাবেক অধ্যক্ষ তৌহিদ হোসেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে সূরার সদস্য ও ঢাকা জেলা জামায়াতের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক। এছাড়াও তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার প্রাক্তন ইসলামী ছাত্রশিবির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। তার বিরুদ্ধে সারা দেশের বিভিন্ন আদালতে একাধিক রাষ্ট্রীয় বিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য মামলা রয়েছে।

২০২১ সালের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড, ঢাকা (স্মারক নং:১১১/ক/স্বী/৯৬(অংশ-১)/১৭৪, তাং-২৬/০৯/২০২১) ইং মো. তৌহিদ হোসেনর বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-১৯৯৫ এর পরিশিষ্ট ‘ক’ এর ১(খ) মোতাবেক কাম্য শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা না থাকায় মো. তৌহিদ হোসেনর নিয়োগ বিধিসম্মত হয়নি মর্মে এক জ্যেষ্ঠ এমপিও ভুক্ত শিক্ষককে দায়িত্ব প্রদানের চিঠি প্রদান করা হয়।

মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর আবু তালেব মো. মোয়াজ্জেম হোসেনের স্বাক্ষরিত এ নোটিশে প্রতিষ্ঠানটির এডহক সভাপতির দায়িত্বে থাকা সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে প্রতিষ্ঠানের বেতন ভাতা উত্তোলনসহ সকল কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে ওই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত জ্যেষ্ঠ এমপিও ভুক্ত একজন শিক্ষককে দায়িত্ব প্রদান করতে বলা হয়।

উল্লিখিত নির্দেশের আলোকে চলতি বছরের ২৩ জুন সাভার মডেল কলেজের শিক্ষকদের মধ্যে ৭ম গ্রেডের জ্যেষ্ঠ এমপিওভুক্ত শিক্ষক দিলারা খানমকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদান করা হয়।

এরপর সাবেক অধ্যক্ষ মো. তৌহিদ হোসেন মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের নোটিশের আলোকে রিটপিটিশন (১০৩৮০/২১) দায়ের করলে হাইকোর্ট বিভাগ ৬ (ছয়) মাসের স্থিতিবস্থা জারি করেন। ঢাকা শিক্ষা বোর্ড উক্ত আদেশের বিরুদ্ধে লিভ-টু-আপিল দায়ের করলে মহামান্য আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায়কে স্টে করে দেন।

এদিকে শিক্ষক মিরাজুল ইসলাম ২০২১ সালের ১৫ জুলাই সাভার মডেল কলেজের তৎকালীন গভর্নিং বডির সভাপতি বরাবর এমপিও প্রত্যাহারের জন্য আবেদন করেন। যে আবেদনটি ১৬/৯/২০২১ তারিখে গভর্নিং বডির সভায় অনুমোদিত হয়। পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠানের তৎকালীন অধ্যক্ষ মো. তৌহিদ হোসেন এবং তৎকালীন সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল হাইয়ের যৌথ স্বাক্ষরে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের সচিব বরাবর প্রেরণ করা হয়।

এমপিও প্রত্যাহারের আবেদনের ধারাবাহিকতায় সাভার মডেল কলেজের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের বেতনের সরকারি অংশের টাকা গত একবছর উত্তোলন করছেন না শিক্ষক মিরাজুল ইসলাম। এছাড়াও গত এক বছর এমপিও সিটে শিক্ষক মিরাজুল ইসলামের কোন স্বাক্ষর নেই।

জানা যায়, সাবেক অধ্যক্ষ মো. তৌহিদ হোসেনের নাশকতার মামলায় গ্রেফতার হন তিনি। সেই থেকে এমপিও অবৈধ ঘোষিত হওয়ার পর তার অনুগত শিক্ষক জামায়াত কর্মী সাবেক অধ্যক্ষ মিরাজুল ইসলামকে তিনি অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্বে বসাতে নানাভাবে চেষ্টা করছেন।

কিন্তু মিরাজুল ইসলাম এমপিও প্রত্যাহারের জন্য আবেদন করেন। যে আবেদনটি গভর্নিং বডির সভায় অনুমোদিত হয়। পরবর্তীতে তা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের সচিব বরাবর প্রেরণ করা হয়। এছাড়াও তিনি গত এক বছর এমপিও সিটে স্বাক্ষর না করায় জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে ওই প্রতিষ্ঠানের সপ্তম গ্রেডের শিক্ষক দিলারা খানমকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, সাভার মডেল কলেজের শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফিসহ বিভিন্ন বিষয়ের প্রায় অর্ধ কোটি টাকা অফিসের তহবিলে জমা না রেখে নিজের কাছে রেখে দেন সাবেক অধ্যক্ষ মিরাজুল ইসলাম। পরে বিষয়টি জানতে পেরে প্রতিষ্ঠানটির এডহক কমিটির সভাপতি সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠালে এরপর থেকে তিনি বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে বর্তমান অধ্যক্ষের দায়িত্বে থাকার বিষয়টি আদালত অবমাননা বলে প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছেন তিনি।

এ বিষয়ে সাভার মডেল কলেজের এডহক কমিটির সভাপতি ও সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাজহারুল ইসলাম বলেন, মহামান্য আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানের সকল কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। যেকোনো সমস্যা আইন অনুযায়ী নিষ্পত্তি করা হবে।

এবিষয়ে সাভার মডেল কলেজের শিক্ষক মিরাজুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অর্ধ কোটি টাকা আমার কাছে রেখে দেওয়ার বিষয়টি পুরোপুরি সত্য নয়। সম্পূর্ণ টাকাটাই আমি প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিষয়ে ব্যয় করেছি। অধ্যক্ষের দায়িত্বের বিষয়ে বললে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে আমিই দাবিদার।

এ বিষয়ে সাভার মডেল কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিলারা খানম বলেন, জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে আমাকে এই দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। আমি আমার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করার চেষ্টা করছি। তবে শিক্ষক মিরাজুল ইসলামের কুবুদ্ধিতে কিছু শিক্ষক আমার কোন নির্দেশনা মানছেন না। প্রতিদিনের হাজিরা খাতায়ও তারা স্বাক্ষর করেন না। নির্ধারিত সময় বেঁধে দেওয়া থাকলেও তারা যথাসময়ে প্রতিষ্ঠানে আসেন না। এছাড়াও আমাকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হচ্ছে।

আমারসংবাদ/এসএম