বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সমাবেশে বক্তারা

এক দফার আন্দোলন চান তৃণমূল বিএনপি

সাদিকুল ইসলাম স্বপন, রাজশাহী অফিস প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৩, ২০২২, ০৭:৪২ পিএম
এক দফার আন্দোলন চান তৃণমূল বিএনপি

আজ বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে নগরীর হাজী মুহম্মদ মহসিন উচ্চ বিদ্যালয় (ঐতিহাসিক মাদ্রাসা) মাঠে। বিএনপি ঘোষিত এটি ছিলো ৯ম বিভাগীয় সমাবেশ। এ সমাবেশের মধ্যে দিয়ে ঢাকার বাইরে শেষ হলো বিএরপির বিভাগীয় সমাবেশ।

মহাসমাবেশে বিএনপি মহাসচিবের প্রতি তৃণমূলের নেতারা আহ্বান জানিয়ে বলেন, দেশ ও জাতিকে বাঁচাতে, গণতন্ত্রের মাতা বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে ১ দফার ডাক দিন। আমরা জীবন বাজি রেখে আন্দোলন করবো। গত ৩ দিন ধরে রাজশাহী বিভাগের চলছে পরিবহন ধর্মঘট, আর সে কারণেই গত বুধবার থেকেই রাজশাহী বিভাগের ৮ জেলার বিএনপি নেতাকর্মীদের আগমন ঘটে পদ্মাপাড়ের শহর রাজশাহীতে। সমাবেশ সফল করতে বিএনপির নেতাকর্মীরা পায়ে হেঁটে, সাইকেল, মোটরসাইকেল, নৌপথে বিভিন্নভাবে এসে জড়ো হন সমাবেশে।

গতকাল সকাল ৬টার মধ্যেই অবস্থান নেন সমাবেশস্থলে। সভা শুরু হয় সকাল সাড়ে ১০টায়। সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। সমাবেশের বিশেষ অতিথি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।

রাজশাহী নগর বিএনপির সদস্য সচিব মামুন অর রশিদ মামুনের সঞ্চলনায় সভায় সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এডভোকেট মো. এরশাদ আলী (ঈশ)।

এতে কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি অন্যন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও রাজশাহী বিভাগীয় সমাবেশের দলনেতা সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু তিনি বলেন, আজকের এই সমাবেশ দেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এই সমাবেশের ঢেউ ঢাকায় পৌঁছে যাবে। আজ রাজশাহী সমাবেশের নগরীতে পরিণত হয়েছে। দেশে হাহাকার চলছে মানুষের ঘরে খাবার নেই, গরিব মানুষ নাখেয়ে মরছে। মানুষ অভাবে সন্তান বিক্রি করছে, ক্ষুধায় আত্ম হত্যা করছে। এই সরকার খালেদা জিয়াকে তিলেতিলে মেরে ফেলার দ্বারপ্রান্তে। সামনে একটাই পথ তা হলো পরিবর্তন, এই স্বৈরাচার হাসিনার পরিবর্তন ছাড়া কোন পথ নেই। এই মাস বিজয়ের মাস এই মাসে আমরা দেশ বিজয় করেছিলাম আর একবার আমাদের শেষ চেষ্টা করতে হবে।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক এমপি শাহজাহান মিঞা বলেন, একাত্তরে যুদ্ধ করেছিলাম মানুষকে সুখে রাখার জন্য, আইনের শাসনের জন্য কিন্তু এই সরকার সব শেষ করে দিয়েছে। আমাদের আর একটি যুদ্ধ করতে হবে দেশকে মুক্ত করার জন্য।

বিএনপি চেয়ারপারসনের অরেক উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, সমাবেশে আসা মানুষের খবার লুট করেছে পুলিশ। এ সরকারের কাছে কোন বিচার চাইনা, ক্ষমতার পালা বদল হলে আমরা বিচার করবো।

বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের  সংসদ সদস্য আমিনুল ইসলাম বলেন, আজ সমাবেশের মঞ্চে একটি চিয়ার শূন্য রয়েছে, কিন্তু আমরা এ চিয়ার আর বেশিদিন শূন্য রাখতে চায়না। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত না করে ঘরে ফিরবোনা।

বিএনপির নির্বাহী কমিটির বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক  সাবেক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, দেশের যত টাকা পাচার হয়েছে তা ফিরিয়ে আনতে হবে। এই সরকার মানুষের কথা বলার অধিকার কেড়ে নিয়েছে। আমাদের দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে।

বিএনপির নির্বাহী কমিটির ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সহ সম্পাদক এডভোকেট শফিকুল হক মিলন বলেন, সমাবেশগামী মানুষকে পথে পথে বাধা দিয়েছে। শহরে হোটেল রেস্তরা বন্ধ করে দিয়েছে। সব বাধা উপেক্ষা করে সমাবেশ সফল হয়েছে। যে খেলা চট্টগ্রামে শুরু হয়েছে তা ১০ তারিখ ফাইনাল হবে ঢাকায়। এক দফার আন্দোলনের জন্য মহাসচিবকে আহ্বান জানান।

বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও  রাজশাহী বিভাগীয় সমাবেশের প্রধান সমন্বয়ক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু। মাঠে উপস্থিত জনতাকে মাথার ক্যাপ খুলে সরকারকে হলুদ কার্ড দেখান।  তিনি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দিয়ে তিনি বলেন, আমাদের একদিনের সমাবেশ তিনদিনে পরিণত করেছেন।

বগুড়া সদর আসনের সংসদ সদস্য বিএনপি নেতা গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ বলেন, তারেক রহমানের ছবির সাথে খেলতেই শেখ হাসিনা হিমসিম খাচ্ছে স্বশরিরে মাঠে নামলে কি অবস্থা কি হবে? দেশ স্বাধীন হলেও সুফল পাচ্ছেনা দেশের মানুষ। আইনের শাসন নেই গণতন্ত্র নেই ভোটের অধিকার নেই। 
রাজশহী-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সদ্য কারামুক্ত নাদিম মোস্তফা বলেন, বাংলাদেশের মানুষ ভালো নেই। এই সরকার দেশের মানুষের সাথে জালিয়তি করেছে। রাজশাহী বিভাগীয় সমাবেশ সফল করার জন্য আমি যখন ব্যস্ত তখন আমাকে এমন এক মামলায় পুলিশ গ্রেফতার করে যে মামলায় আমার নামই নেই।

যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুলতান সালাউদ্দীন টুকু বলেন, এই সরকারের আমলে একাত্তরের ও নব্বইয়ের চেতনা ভুলণ্ঠিত হয়েছে। অবিলম্বে বিএনপি চেয়ারপারসনের মুক্তি দাবি করেন তিনি।

বিএনপির মুলদলের পাশাপাশি যুবদল, কৃষক দল স্বেচ্ছাসেবক দল, তাঁতীদল, মহিলা দলসহ অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন।

এসএম