মেধাবী পাখিকে কম্পিউটার দিলেন ফরিদপুরের ডিসি

ফরিদপুর প্রতিনিধি প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩১, ২০২৩, ০২:২৬ পিএম
মেধাবী পাখিকে কম্পিউটার দিলেন ফরিদপুরের ডিসি

অদম্য মেধাবী ও খর্বাকৃতির মোসা.নাইমা সুলতানা পাখিকে (২২) কম্পিউটার (ল্যাপটপ) উপহার দিলেন ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার।

মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে দশটার দিকে মোসা. নাইমা সুলতানা পাখিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান এবং একটি কম্পিউটার উপহার দেন। এছাড়াও পড়ালেখার পাশাপাশি তার পরিবারের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন জেলা প্রশাসক।

এ বিষয়ে মোসা. নাইমা সুলতানা পাখি বলেন, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মহোদয়ের প্রতি আমি ও আমার পরিবার আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো। সকলে আমার জন্য দোয়া করবেন, আমি যেন আমার ও আমার পরিবারের স্বপ্ন ও আশা পূরণ করতে পারি।

এ ব্যাপারে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লিটন ঢালী বলেন, পাখিকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন জেলা প্রশাসকের নজরে আসে। পরে তিনি পাখিকে তার কার্যালয়ে ডেকে একটি কম্পিউটার (ল্যাপটপ) উপহার দেন। এ সময় তার লেখাপড়ার খোঁজ খবর নেন ভবিষ্যতে তাদের পরিবারের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন।

এ বিষয়ে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, মানুষ মানুষের জন্য জীবন জীবনের জন্য। প্রতিবেদনের মাধ্যমে জানতে পারি অদম্য মেধাবী ছাত্রী পাখির স্বপ্ন ছুঁতে প্রয়োজন একটি কম্পিউটার। সে অনুযায়ী তার স্বপ্ন পূরণে পাশে থাকতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি ল্যাপটপ উপহার দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ভালো সব কাজে জেলা প্রশাসন সকলের পাশে থাকে, আগামীতেও থাকবে বলে তিনি জানান।

মোসা. নাইমা সুলতানা পাখি একজন খর্বাকৃতির মানুষ। বয়স ২২ বছর। উচ্চতা মাত্র ২৯ ইঞ্চি। ওজন ২০ কেজি। অভাব অনটনের সংসার তাদের। তবুও বড় হওয়ার স্বপ্ন পূরণে প্রতিনিয়ত করছেন জীবনযুদ্ধ। বিভিন্ন বাধা পেরিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন নিজের পড়াশোনা। যুক্ত আছেন বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে।

ফরিদপুর সদর উপজেলার শহরতলীর কানাইপুর ইউনিয়নের উলুকান্দা গ্রামের নাদের মাতুব্বর ও সাহিদা বেগম দম্পতির তিন মেয়ের মধ্যে পাখি সবার বড়। গ্রামের স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেছেন পাখি। বর্তমানে ফরিদপুর সারদা সুন্দরী মহিলা কলেজের অনার্স (বাংলা) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। বাবা নাদের মাতুব্বর একসময় পাট-ভুসিমালের ব্যবসা করতেন। ১২ বছর আগে ব্রেন স্ট্রোক করে ঘরবন্দি হয়ে পড়েছেন তিনি। একেবারেই চলাফেরা করতে পারেন না।

পাখির মেজো বোন আফসা আক্তার নার্সিংয়ের ছাত্রী, ছোট বোন সামিয়া সুলতানা নবম শ্রেণিতে পড়ে। সংসারে আয় করার মতো কেউ নেই। বাবার জমানো কিছু টাকা আর কৃষি জমি বর্গা দিয়ে কোনোমতে চলে তাদের পরিবার। পাখির বাবা অসুস্থ। সংসারে রোজগারের মতো কেউ নেই। পড়াশোনা তো দূরে থাক ঠিকমতো সংসারই তো চলে না। পদে পদে বাধা। এরপরও কষ্টের মধ্য দিয়ে পড়া চালিয়ে যাচ্ছেন পাখি।

পাখি বলেন, মানুষ ছোট হলেও আমার স্বপ্নটা বড়। চাই লেখাপড়া করে যোগ্যতা অনুযায়ী সরকারি একটা চাকরি করে পরিবারের হাল ধরতে। বাবা-মা, বোনদের মুখে হাসি ফোটাতে। কারও করুণা কিংবা ভিক্ষা করে নয়, মাথা উঁচু করে বাঁচতে, নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে সমাজের দৃষ্টান্ত হতে চায়।

সমাজের প্রতিবন্ধী হয়ে থাকতে চান না, যার কারনে পড়াশোনার পাশাপাশি কয়েকটি টেকনিক্যাল কোর্সও করেছেন পাখি। কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে নিজের কোনো কম্পিউটার নেই। একসঙ্গে এত টাকা দিয়ে কম্পিউটার কেনা সম্ভব হয়নি। এ নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় ছিলেন তিনি। ফরিদপুরের জেলা প্রশাসকের নিকট থেকে কম্পিউটার পেয়ে তাই খুশি পাখি।

আরএস