দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে আত্রাইয়ের বাঁশ ও বেতের তৈরি সামগ্রী

আত্রাই (নওগাঁ) প্রতিনিধি প্রকাশিত: জুলাই ২১, ২০২৩, ০৯:২৯ পিএম
দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে আত্রাইয়ের বাঁশ ও বেতের তৈরি সামগ্রী

নওগাঁর আত্রাই উপজেলায় দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে বাঁশ ও বেতের তৈরি বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী, বাজারে প্লাস্টিক, মেলামাইন ও স্টিলের তৈরি পণ্যের দাপটে হারিয়ে যাচ্ছে ওই পণ্য, ফলে এসব পেশার সাথে জড়িত মানুষগুলোকে আর্থিক অনটনের মধ্যে দিয়ে দিন অতিবাহিত করতে হচ্ছে।

নিজ পেশার সাথে  টিকতে না পেরে ভিন্ন পেশায় চলে গেছে উপজেলার পাঁচ শতাধিক শিল্পের কারিগর, পুঁজি স্বল্পতা, বাঁশ ও বেতের উৎপাদন হ্রাস, আর্থিক অসচ্ছতা, উপকরণের অভাবেই আজ বিলুপ্তির পথে।

ঐতিহ্যবাহী বাঁশ বেত শিল্প, সারা দেশের মত একসময় ব্যাপক প্রচলন ছিল বাঁশের তৈরি কুলা, ঝুড়ি, চাটাই, হাঁস মুরগির খাঁচা, বেতের চেয়ার, ধামা, চালুনি, খলই, হাতপাখা, কিন্তু বাজারে প্লাস্টিক, মেলামাইন ও স্টিলের তৈরি বিভিন্ন সামগ্রীর চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বাঁশ ও মাটির তৈরি জিনিসগুলো প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে।

উপজেলার কালিকাপুর, তিলাবাদতুরি, জামগ্রাম, নওদুলী, ঝনঝনিয়া, ব্রজপুরসহ আরও কয়েকটি এলাকর বংশ পরস্পরায় বাঁশ ও বেত শিল্পের সঙ্গে জড়িত ছিল প্রায় পাঁচশতাধিক পরিবার। কিন্তু বতমানে বেশিরভাগই পরিবারের সদস্যরাই পেশা বদল করে জীবিকানির্বাহ করছেন।

নিত্য নতুন প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী তৈরি করে থাকেন যা উপজেলার বিভিন্ন হাচ-বাজারে এবং গ্রামগঞ্জে কাঁধে করে ফেরি করে বিক্রি করে থাকে, এমনকি তৈরি এসব কুটির শিল্প সামগ্রী বেশ কয়েকটি দেশে যাচ্ছে।

বৃহস্পতিবার আহসানগঞ্জ ইউপির ঐতিহ্যবাহী আহসানগঞ্জ হাট সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সিংসাড়া গ্রামের আব্দুল জলিল,ভাদঘরপাড়া গ্রামের ইনতাজ আলী, মির্জাপুর গ্রামের শরিফুল ইসলাম ও নওদুলী গ্রামের ব্যবসায়ী শাহাদত হোসেন জানান, এক সময় তাদের কাছে দশ-বারো করে বাঁশ ও বেত শিল্পের কারিগর ছিল।

তখনকার দিনে একজন কারিগরের বেতন ছিল প্রতিদিন দুইশ থেকে আড়াইশ টাকা। এখনকার দিনে সে কারিগরের বেতন দিতে হয় চারশ থেকে পাঁচশ টাকা। তাও সিজনের সময় পাওয়া যায় না, তারা আরো জানান, কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় বাঁশ ও বেতের তৈরি জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে।

আগে একটি বাঁশের দাম ছিল পঞ্চাশ থেকে ষাট টাকা, সেখানে এখন প্রতিটি বাঁশ কিনতে দুইশ থেকে তিনশ টাকায়, আর  নির্বিচারে বন জঙ্গল উজার হওয়ার ফলে বেত গাছ খুব একটা চোখে পড়ে না। তাই এ শিল্পের সাথে জড়িত পরিবারগুলো আর্থিক অনাটনের মধ্যে দিন অতিবাহিত করছে।

উপজেলার নওদুলি হাট এলাকার শশীকান্ত জানান, কয়েক বছর হলো পৈত্রিক পেশা ছেড়ে দিয়ে এখন দিন মজুরি কুরছেন। তিনি বলেন, বেত শিল্পে টাকা বিনিয়োগ করে খুব একটা লাভ হতো না।

এখন গতর খেটে কাজ করি, দিনবাদে চার-পাঁচশ রোজগার হয়। পরিবার নিয়ে খেয়ে পড়ে চলছি। তবে যে দিন কাজ না থাকে সে দিন অনেক কষ্ট হয়। তবে আগের চেয়ে অনেক ভালো আছি।

এইচআর