মহাদেবপুরে যেখানে সেখানে ময়লার ভাগাড়, পরিবেশ দুষণ

কাজী সাঈদ টিটো, মহাদেবপুর (নওগাঁ) প্রকাশিত: আগস্ট ৩১, ২০২৩, ০৬:২২ পিএম
মহাদেবপুরে যেখানে সেখানে ময়লার ভাগাড়, পরিবেশ দুষণ

নওগাঁর মহাদেবপুরে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের খামখেয়ালীপনায় যেখানে সেখানে ময়লার ভাগাড় গড়ে উঠেছে। গত কয়েক বছর ধরে প্রতিদিন উপজেলা সদরের আবাসিক এলাকার বিভিন্ন জায়গায়, নদীর পাড়ে ও ব্রীজ থেকে নদীতে ময়লা ফেলায় এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। ময়লা পচে জনস্বাস্থ্যের প্রতি মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে, স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী ও সর্বসাধারণের চলাচলে দারুন বিঘ্ন ঘটছে। 

এছাড়া নদীর পানি দুষিত হয়ে ছোট জাতের অনেক মাছ মরে ভেঁসে ওঠছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মাছের বংশবৃদ্ধি। পানিতে ময়লা জমে নদীর পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বিঘ্নিত হয়। পানি দুষিত হয়ে দৈনন্দিন গোসলসহ অন্যান্য কাজে ব্যবহারের অনুপযোগি হয়ে পড়েছে। প্রতিদিন প্রকাশ্য দিবালোকে এসব ময়লা আবাসিক এলাকা ও নদীতে ফেলা হলেও এটি বন্ধের উদ্যোগ নেয়নি কেউ। বরং সংশ্লিষ্টদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতাতেই চলছে এই কাজ। তারা বলছেন ময়লা ফেলার জায়গা না থাকায় এসব এখানে ফেলা হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে উপজেলা সদরের গরুহাটির আবাসিক বসতবাড়ি সংলগ্ন এলাকায় কয়েকটি স্থানে বাজারের প্রতিদিনের ময়লা আবর্জনা ফেলে জমা করা হচ্ছে। বিভিন্ন হোটেলের খাবারের উচ্ছিস্ট উপজেলা সদরের আত্রাই নদীর পুরাতন বেইলি ব্রিজ ও নতুন ব্রিজ থেকে ফেলা হচ্ছে নদীতে। উপজেলা কমপ্লেক্সের দক্ষিণ পাশে আত্রাই নদীর পূর্বপারের বাঁধ সংলগ্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, একজন রিক্সাভ্যান চালক কয়েকটি ভর্তি বস্তা তার ভ্যানে করে বয়ে নিয়ে ওই এলাকায় আসেন। নদীর পাড়ের উপর ভ্যানগাড়ি রেখে বস্তাগুলো নামান। একে একে সেগুলো ফেলেন নদীর কিনারায়। বস্তার মুখের দড়ি খুলে নদীর পানিতে ঢালেন ভিতরের বস্তুগুলো। ভ্যান সেখানে পৌঁছানোর সাথে সাথে অসংখ্য কুকুর তার পিছু নেয়। কুকুরগুলো নদীর অল্প পানিতে নেমে খেতে শুরু করে সেসব। অসংখ্য ভুবন চিল উড়তে থাকে চারিদিকে। সাথে আরও অনেক পাখি। পানির ¯্রােতে ভেঁসে যাওয়া বজ্রগুলো ছোঁ মেরে ধরে সেগুলো খাওয়ার প্রতিযোগিতা করে পাখিগুলো।

ভ্যানচালক জানান, বস্তার ভিতরের বস্তুগুলো উপজেলা সদরের বাজারের বিভিন্ন দোকানের হাঁসমুরগি আর গরুছাগলের নারি-ভুঁড়ি, পালক আরও অন্যান্য বজ্র। প্রতিদিন দুপুরে ও সন্ধ্যায় তিনি দোকানগুলো ঘুরে ঘুরে এসব সংগ্রহ করে এখানে এনে ফেলেন। এজন্য তিনি প্রতিদিন প্রায় তিনশ’ টাকা পান। আগে তিনি এসব বজ্র আত্রাই নদীর বেইলি ব্রিজের উপর থেকে নদীতে ফেলতেন। এখন এই এলাকায় ফেলছেন। অনেক বজ্র নদীতে জমা হয়ে আছে। ফলে নৌচলাচল, জেলেদের মাছ ধরা ও নদীর স্বাভাবিক পানির প্রবাহ ব্যহত হচ্ছে। ধংস হচ্ছে মাছের প্রজাতি। তার রিক্সাভ্যানে একপাশে লেখা আছে গ্রিন মহাদেবপুর, ক্লিন মহাদেবপুর, মহাদেবপুর ইউনিয়ন পরিষদ। 

তিনি জানান, উপজেলা সদরের বিভিন্ন স্থানে রাখা ডাস্টবিন থেকে ময়লা সংগ্রহ করে সেগুলো অপসারণ করার জন্য সদর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বিনামূল্যে তাকে এই রিক্সাভ্যানটি দেয়া হয়েছে।

স্থানীয় পরিবেশবিদ ও পাখি গবেষক মুনসুর সরকার বলেন, যেভাবে আত্রাই নদীতে বজ্র ফেলে নদী দুষণ করা হচ্ছে তা যেকোন উপায়ে বন্ধ করতে হবে। অন্যথায় মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুকিতে পড়তে হবে। গতবছর জেলা প্রশাসকের মতবিনিময় সভায় পরিবেশবিদরা বিষয়টি উত্থাপন করলেও এখন পর্যন্ত এই বজ্র ফেলা বন্ধ হয়নি।

জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু হাসান বলেন, কে ময়লাগুলো নদীতে ফেলছে তা শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সদর ইউপি চেয়ারম্যান সাঈদ হাসান তরফদার শাকিল বলেন, বিষয়টি নিয়ে কয়েকবার উপজেলা উন্নয়ন ও সমন্বয় কমিটির সভায় আলোচনা হয়েছে। ময়লা ফেলার জন্য শহরের বাইরে খাস জায়গা খোঁজা হচ্ছে। না পেলে প্রয়োজনে জমি কিনে এসমস্যার স্থায়ী সমাধান করা হবে।

আরএস