পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকাগামী সকল ট্রেনের স্টপেজ চায় কালুখালীবাসী

কালুখালী (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি প্রকাশিত: অক্টোবর ২৯, ২০২৩, ০৫:১১ পিএম
পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকাগামী সকল ট্রেনের স্টপেজ চায় কালুখালীবাসী

আগামী ১ লা নভেম্বর থেকে ঢাকার কমলাপুর-পদ্মা সেতু হয়ে খুলনা ও বেনাপোলগামী সকল ট্রেনের স্টপেজ চায় রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ।

পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা-খুলনা রুটে সুন্দরবন এক্সপ্রেস ও ঢাকা-বেনাপোল রুটে বেনাপোল এক্সপ্রেস  ট্রেন চালুর খবরে মানুষের মাঝে উৎসব মূখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছিলো। কিন্তু শিডিউল দেখে কালুখালী জংশনে স্টপেজ না থাকায় মানুষের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে।

জানা যায়, ১৮৬২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ‘ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ে কোম্পানী’ কলকাতা (বর্তমান শিয়ালদহ) থেকে রানাঘাট পর্যন্ত রেলপথ উদ্বোধন করেন। এই রেলাইনটিকে বর্ধিত করে ১৮৬২ সালের ১৫ নভেম্বর দর্শনা থেকে কুষ্টিয়া জেলার জগতি পর্যন্ত রেললাইন উব্দোধন করা হয়। পরবর্তীতে কুষ্টিয়া (জগতি) থেকে পদ্মাপাড়ে অবস্থিত অভ্যন্তরীন নদীবন্দর গোয়ালন্দঘাট পর্যন্ত ৭৫ কিলোমিটার দীর্ঘ রেললাইন ১৮৭১ সালের ১লা জানুয়ারী উদ্বোধন করা হয়। সে সময় কালুখালী রেলস্টেশনটি নির্মাণ করা হয়। পরবর্তী সময়ে ১৯৩২ সালে গোপালগঞ্জ জেলার মধুমতি নদীর তীরবর্তী ভাটিয়াপাড়া ঘাট পর্যন্ত নতুন রেললাইন নির্মাণ করা হলে কালুখালী স্টেশনটি জংশন রেলওয়ে স্টেশনে পরিণত হয়।

ব্রিটিশ শাসনামল এবং পাকিস্তান শাসনামলে এই সেকশনে ট্রেন চললেও নব্বই দশকের শুরুতে তৎকালীন সরকার যাত্রী সংকট ও লোকসান দেখিয়ে কালুখালী জংশন-ভাটিয়াপাড়া রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেয়। ২০০৮ সালে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় এলে ২০১৩ সালের ২রা নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কালুখালী জংশন-ভাটিয়াপাড়া সেকশনে ৩২০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা ব্যয়ে পুনরায় রেলপথটি উদ্বোধন করেন। পরে এই সেকশনের কাশিয়ানি স্টেশন জংশন থেকে গোবরা পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ করা হয়। এই রেলপথে ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর আন্তনগর টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেস ট্রেনটি রাজশাহী-গোবরা চলাচল করছে।

কালুখালী জংশন থেকে রাজশাহী-ভাঙ্গা রুটে মধুমতি এক্সপ্রেস, রাজশাহী-গোবরা রুটে টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেস, খুলনা-গোয়ালন্দ ঘাট রুটে নকশীকাঁথা এক্সপ্রেস, রাজবাড়ী-ফরিদপুর-কালুখালী-ভাটিয়াপাড়া রুটে ভাটিয়াপাড়া এক্সপ্রেস, পোড়াদহ-গোয়ালন্দঘাট রুটে লোকাল নিয়মিত এক্সপ্রেস নিয়মিত চলাচল করছে। তবে পদ্মা সেতু চালু হবার পর এই রেলজংশন ব্যবহারকারী বিভিন্ন যাত্রী ঢাকায় যাতায়াত করার জন্য নতুন দিগন্তের সূচনা হিসেবে দেখেছিলো।

ঢাকার তিতুমীর কলেজের স্নাতক ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, পড়ালেখার প্রয়োজনে প্রতিনিয়ত ঢাকা যাতায়াত করতে হয়। ঢাকার ট্রেনের কালুখালী জংশনে স্টপেজ না থাকায় আমাদের দূর্ভোগ থেকেই গেল।

ঢাকার একটি বেসরকারী কোম্পানীর চাকুরীজীবি টুটুল আহসান বলেন, চাকুরির সুবাদে আমাদের ঢাকায় যাতায়াত করি। ট্রেনের স্টপেজ চালু হলে আমাদের অনেক সুবিধা হতো।

কালুখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খায়রুল ইসলাম খায়ের বলেন, রাজধানী ঢাকায় যাতায়াতে পদ্মা সেতু হয়ে ট্রেন চলাচল আমাদের জন্য গর্বের। তবে কালুখালী জংশন স্টেশনে স্টপেজ না থাকায় আমরা চিন্তিত। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়ের নিকট অনুরোধ করবো তিনি যেন এই রুটে চলাচলকারী সকল ট্রেনের স্টপেজের ব্যবস্থা করেন।

এ ব্যপারে বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক (পাকশী) নুর মোহাম্মদ এর সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, ঢাকা-খুলনা রুটে সুন্দরবন এক্সপ্রেস এবং ঢাকা-বেনাপোল রুটে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনটি ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী জংশন দিয়ে খুলনা ও বেনাপোল নিয়মিত ভাবে যাতায়াত করবে। কাশিয়ানী- খুলনা রুটের রেলপথ নির্মাণ কাজ চলমান থাকায় স্বল্প সময়ের জন্য ভাঙ্গা-রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া হয়ে এই ট্রেন দুটি চলাচল করবে। মূলত এই কারণে আমরা খুব বেশি স্টপেজ দিতে চাচ্ছি না। তবে এই সেকশনে রাজশাহী-পদ্মাসেতু-ঢাকা রুটে মধুমতি এক্সপ্রেস ট্রেনটি নিয়মিত চলাচল করবে এবং খুলনা-গোয়ালন্দঘাট চলাচলকারী মেইল ট্রেন নকশীকাঁথা এক্সপ্রেস ট্রেনটি খুলনা-ঢাকা রুটে চলাচলের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে।

এআরএস