বরিশালে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতাকে হত্যার ঘটনায় সাতজন আটক

বরিশাল ব্যুরো প্রকাশিত: আগস্ট ১, ২০২৫, ০৮:০৪ পিএম
বরিশালে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতাকে হত্যার ঘটনায় সাতজন আটক

বরিশালের এয়ারপোর্ট থানার পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতিতে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতার বাড়ি ভাঙচুরসহ তিনজনকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে গুরুতর জখম করার পর একজন নিহতের ঘটনায় সাতজনকে আটক করা হয়েছে।

অ্যাকটকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে এবং হত্যার ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতিও চলছে। 

শুক্রবার বিকেলে বরিশাল মহানগর পুলিশের এয়ারপোর্ট থানার ওসি জাকির শিকদার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সূত্রমতে, স্বামী-স্ত্রীর পারিবারিক দ্বন্দ্বের জের ধরে বরিশাল সদর উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের পূর্ব বিল্ববাড়ি গ্রামের নজির সিকদারের ছেলে, নগরীর ২৯ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের বহিস্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক লিটন সিকদার লিটুকে (৪২) বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পুলিশের উপস্থিতিতে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। 

একই ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই সুমন সিকদার (৩৫) ও বোন মুন্নি বেগম (৩৮) কুপিয়ে গুরুতর আহত করা হয়েছে। এ সময় হামলাকারীরা লিটুর ঘরে ভাঙচুরসহ তার মোটরসাইকেল লুট করে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়।

শুক্রবার দুপুরে শেবাচিম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মুন্নি বেগম জানান, তার স্বামী জাকির হোসেন গাজী গোপনে আরেক বিয়ে করেছেন। বিষয়টি নিয়ে তাদের মধ্যে পারিবারিক বিরোধ সৃষ্টি হয় এবং তারা পাল্টাপাল্টি মামলা করেছেন।

মামলার আসামি হিসেবে আদালত থেকে জামিন নিয়ে তারা বৃহস্পতিবার বাড়িতে ফিরলে পুলিশের উপস্থিতিতে একদল লোক তাদের ওপর হামলা চালিয়ে ঘর ভাঙচুর ও আগুন দেয়। এ সময় লিটন সিকদারকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয় এবং বোন ও ভাইকেও আহত করা হয়।

অন্যদিকে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, লিটনের বাড়িতে হামলা চালানো একদল লোকের সামনের একটি পিকআপে এয়ারপোর্ট থানার এসআই শহীদুল ইসলাম উঠছেন। এক ব্যক্তি তাকে বলছেন, ‘আপনি এ পরিস্থিতিতে কোথায় যাচ্ছেন? তাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যান, নয়তো তাকে মেরে ফেলবে।’ ভিডিওতে দেখা যায়, এসআই শহীদুল ইসলামের সামনে উত্তেজিত জনতা লিটুর বাড়ি ভাঙচুর করছে।

এসআই শহীদুল ইসলাম বলেন, তিনি লিটুর বোনের দায়ের করা মামলার তদন্তের জন্য ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। তিনি চলে যাওয়ার পর হামলা শুরু হয়। খবর পেয়ে আবার ঘটনাস্থলে গিয়ে আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছেন।

নিহত লিটুর ঘনিষ্ঠজনরা অভিযোগ করেছেন, হামলার সময় পুলিশ ঘটনাস্থলে থাকা সত্ত্বেও কার্যকর পদক্ষেপ নেননি। পরে হামলা তীব্র হলে পুলিশ উপস্থিত হয়। হামলাকারীরা ঘরের দরজা-জানালা ভেঙে ঘরে ঢুকে হামলা চালায়। আহতদের দাবি, কুপিয়ে লিটুর একটি হাত শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারাত্মক আঘাত পেয়েছেন। ছোট ভাই ও বোনকেও গুরুতর কুপিয়ে জখম করা হয়।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, পারিবারিক বিরোধ থেকে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হলেও এয়ারপোর্ট থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেননি, যার কারণে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।

মহানগর পুলিশের এয়ারপোর্ট থানার ওসি জাকির শিকদার এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, পারিবারিক বিরোধের জেরেই এ ঘটনা ঘটেছে। দুই পক্ষের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। জাকির সিকদারের পক্ষের লোকজন হামলা চালিয়ে বাড়িঘর ভাঙচুর এবং তিনজনকে কুপিয়ে জখম করেছে। এর আগে লিটু ও তার লোকজন জাকির সিকদারকে আটক করে মারধর এবং বিদ্যুৎ শক দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে।

ইএইচ