আধুনিক প্রযুক্তিতে গোপালগঞ্জে ৫ হাজার হেক্টর অনাবাদি জমি চাষের উদ্যোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: জানুয়ারি ২১, ২০২৪, ০১:০৬ পিএম
আধুনিক প্রযুক্তিতে গোপালগঞ্জে ৫ হাজার হেক্টর অনাবাদি জমি চাষের উদ্যোগ
ছবি: আমার সংবাদ

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান যে উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন তা আজ বাস্তবায়িত হচ্ছে তারই সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে। এ লক্ষ্য টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ঠ (এসডিজি) ২০৩০ রূপকল্প ২০৪১ এবং ডেল্টাপ্লান ২১০০ অর্জনের লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুসারে কৃষি মন্ত্রণালয় ও এর অধীনস্ত দপ্তর/সংস্থাসমূহ নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে কাজ করে চলছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গৃহীত বিভিন্ন কার্যক্রমের ধারাবাহিকতার ফলে ধান, সবজি, ভুট্টা, তেল ফলসহ বিভিন্ন ফসলের উৎপাদনের পরিমান ধারাবাহিকভাবে বেড়ে চলছে। পারিবারিক পুষ্টি নিরাপত্তা অর্জনের জন্য বসতবাড়ির আঙ্গিনায় সারাবছর সবজি উৎপাদনসহ নানা কার্যক্রম চলছে ।

বাংলাদেশের দক্ষিণাংশের ১ হাজার ৪৮৯.৯২ বর্গ কিমি. এলাকা নিয়ে গঠিত গোপালগঞ্জ জেলা। গোপালগঞ্জ জেলা একটি নিম্ন ভূমি, উর্বর ও স্বল্প উপযোগী কৃষিক্ষেত্র। এখানকার ভূমির বন্ধুরতা, মাটি, পানি, খালবিল, নদীনালা, জোয়ারভাটার প্রভাব, বন্যা, খরার মত প্রাকৃতিক দুর্যোগ এ জেলায় এক ভিন্ন কৃষি পরিবেশ জোনে পরিণত করেছে। এ জেলায় কৃষি কাজের অনুকূল অবস্থা ৬ মাস, ডিসেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত বিরাজিত থাকে। বাকি ছয় মাস বর্ষার পানিতে অধিকাংশ জমি ডুবে থাকে। যা জুন মাস থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত স্থায়ী থাকে। জেলায় রবি মৌসুমে শীতকালীন ফসল উৎপাদন নিরাপদ এবং ঝুঁকি কম থাকায় এ মৌসুমে উপযোগী ফসল উৎপাদনে অধিক জোর দেওয়া হয়। রবি মৌসুমে প্রধানতঃ বোরো, গম, ডাল, তৈল, তরমুজ ও মসলাজাতীয় ফসল উৎপাদন ছাড়াও আখ, চিনাবাদাম, আলু, গর্জন তিল, তিসি ও বিভিন্ন প্রকারের শাক সব্জি উৎপাদন হয়ে থাকে।

গোপালগঞ্জ জেলার মাটি ও জলবায়ু ধান চাষের জন্য খুবই উপযোগী। দীর্ঘদিন ধরে জেলার ৫ হাজার ২৯০ হেক্টর জমি জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে থাকায় মাঠে ফসলের আবাদ ও উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। উঁচু ঢিবি প্রকৃতির বাড়িতে বসবাসরত জনসাধারণ কর্মবিমুখ হয়ে পড়ে। ওই অঞ্চলের মানুষ যুগ যুগ ধরে এই প্রতিকূল পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে এবং নিজের খাদ্যের চাহিদা পূরণের জন্যে কচুরিপানার স্তুপ কে বেডে রুপান্তির করে এক চমৎকার কৃষি পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছে যা ভাসমান বেড হিসেবে পরিচিত।

বর্তমান সরকার এ ভাসমান পদ্ধতির চাষকে আরো প্রযুক্তিগত উন্নয়ন করার লক্ষ্যে ‘গোপালগঞ্জ জেলার জলাবদ্ধ ও অনাবাদী পতিত জমিতে ফসল উৎপাদন কর্মসূচি’ শীর্ষক একটি কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

যার মাধ্যমে জেলায় ৫টি উপজেলায় পারিবারিক সমন্বিত খামার উন্নয়ন, ডালি পদ্ধতিতে ফসল চাষাবাদ, ভার্মি কম্পোস্ট, বস্তা পদ্ধতিতে ফসল চাষ, সেমিল্ফোটিং পদ্ধতি, ঢিবি পদ্ধতি ইত্যাদিসহ উন্নত প্রযুক্তি কৃষকদের দেওয়া হচ্ছে।

এতে করে  প্রথাগত প্রাচীন পদ্ধতি থেকে ওই অঞ্চলের কৃষকেরা বেরিয়ে এসে কর্মসূচির নিত্যনতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে বেশি ফলন উৎপাদন করতে পারছে বলে স্থানীয় কৃষকরা জানান।

এ ব্যপারে কর্মসূচি পরিচালক কৃষিবিদ বিবেকানন্দ হীরা বলেন, আমাদের এ কর্মসূচির মাধ্যমে গোপালগঞ্জ জেলার ৫ হাজার ২৯০ হেক্টর অনাবাদি ও জলাবদ্ধ জমির মধ্যে অধিকাংশ  জলাবদ্ধ অনাবাদি পতিত জমি কর্মসূচির বিভিন্ন প্রযুক্তির মাধ্যমে যেমন বসত বাড়িতে পুষ্টিকর ও নিরাপদ ফসল উৎপাদন, ভাসমান  বেডে সবজি চাষসহ আরও কর্মসূচিতে বর্ণিত বিভিন্ন প্রযুক্তির মাধ্যমে চাষের আওতায় নিয়ে আসার চেষ্টা করছি। এতে করে ওই অঞ্চলের নারী ও বেকার যুবকদের কৃষি কর্মকাণ্ডে যুক্ত করার মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে বিরাট ভূমিকা রাখবে। একই সাথে শস্যের নিবিড়তা বহুলাংশে বাড়বে বলে আমার বিশ্বাস।

এঅরাএস