ঘোড়াঘাটে এক বছরে ২০ লাখ টাকার মাদক জব্দ

ঘোড়াঘাট (দিনাজপুর) প্রতিনিধি প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৪, ০৩:৫৪ পিএম
ঘোড়াঘাটে এক বছরে ২০ লাখ টাকার মাদক জব্দ

সীমান্তবর্তী হওয়ায় মাদককারবারি ও ব্যবসায়ীদের কাছে পরিচিত নাম দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা। এক সময় মাদক চোরাচালানের অন্যতম রুট হিসেবে ব্যবহৃত এই উপজেলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়মিত মাদক বিরোধী অভিযানে অনেকটা কমেছে মাদকের প্রভাব।

পুরাতন অনেক মাদক ব্যবসায়ী স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে শুরু করলেও, তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন মাদক ব্যবসায়ী ও পাচারকারী। শুধুমাত্র ২০২৩ সালে এই থানা এলাকা থেকে প্রায় সাড়ে ২০ লাখ টাকার মাদক জব্দ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

চারটি ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত ঘোড়াঘাট উপজেলা থেকে মাদক নির্মূলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়মিত অভিযানে মাদক ব্যবসায়ীরা বারংবার গ্রেপ্তার হলেও, জামিনে বেরিয়ে তারা আবারও সেই পুরোনো ব্যবসায় ফিরছেন।

বিট পুলিশিংসহ অন্যান্য সচেতনতামূলক কার্যক্রম স্থানীয়দের সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজে লেগেছে। গ্রামের সচেতন মানুষ মাদকের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিয়মিত তথ্য দিচ্ছেন বলে দাবি পুলিশের।

পুলিশ, র‌্যাব ও ডিএনসি থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, ২০২৩ সালের পহেলা জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঘোড়াঘাট থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের বিভিন্ন ধারায় মামলা হয়েছে ৪৮টি। এসব মামলায় এজাহারভুক্ত ৮২ জন আসামির মধ্যে ৬৫ জনকে গ্রেপ্তার করতে পেরেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পলাতক অন্যরাও বিভিন্ন সময়ে গ্রেপ্তার হয়েছে। গত এক বছরে হওয়া এসব মামলার মধ্যে র‌্যাব, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এবং আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) দুটি করে পৃথক ৬টি মামলা করেছে। বাকি ৪২টি মামলা করেছে থানা পুলিশ।

এই ৪৮টি মামলার নথি বলছে গত বছরজুড়ে এই উপজেলা থেকে ইয়াবা জব্দ করা হয়েছে ১ হাজার ১৯৯ পিস, গাঁজা ৪ কেজি ৫৫০ গ্রাম, হেরোইন ১ কেজি ৫৫ গ্রাম, চোলাই মদ ২০০ লিটার, ফেন্সিডিল ১৬৬ পিস, টাপেন্টাডল ট্যাবলেট ৮৪১ পিস এবং এ্যাম্পল ১ হাজার ১১৪ পিস। জব্দ করা এসব মাদকদ্রব্যের স্থানীয় বাজার মূল্য আনুমানিক ২০ লাখ ২৩ হাজার ৮০০ টাকা।

একই সময় এই উপজেলায় ভারতীয় আমদানি নিষিদ্ধ ফেন্সিডিলের স্বর্গরাজ্য থাকলেও, উচ্চমূল্য ও পুলিশের কঠোর অবস্থানে সীমান্তবর্তী হাকিমপুর ও বিরামপুর উপজেলা থেকে ফেন্সিডিল আগের মতো পাচার করতে পারছেন না কারবারিরা। পাশাপাশি রয়েছে সীমান্তে বিজিবির নিরাপত্তা বেষ্টনী। এসব কারণে এই থানা এলাকায় ফেন্সিডিল ব্যবসায়ী ও সেবীর সংখ্যা অনেকাংশে কম। সেই সুযোগে স্থানীয় মাদকের বাজারে চাহিদা বেড়েছে ইয়াবা ও ব্যথানাশক টাপেন্টাডল ট্যাবলেটের।

পুলিশের দেয়া তথ্য বলছে, এর আগে গত ২০২২ সালে এই থানা এলাকা প্রায় অর্ধ কোটি টাকার মাদক জব্দ করেছিল আইন প্রয়োগকারী বিভিন্ন সংস্থা। সেই তুলনায় ২০২৩ সালে মাদক উদ্ধার হয়েছে অর্ধেকের কম। একে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। তাদের দাবি নিয়মিত অভিযান এবং নতুন নতুন কৌশলের কারণে মাদক ব্যবসায়ী ও কারবারিরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে।

তবে অনেক কর্মকর্তার দাবি নির্বাচনি বছর হওয়ায় মাদকবিরোধী অভিযানের পাশাপাশি অন্যান্য বিভিন্ন দাপ্তরিক কাজ করতে হয়েছে তাদেরকে। সে কারণে মাদক উদ্ধার কিছুটা কম হতে পারে।

এসবের পাশাপাশি গত ২০২৩ সালে মাদকবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে ১০৩ জন মাদকসেবীকে আটক করেছে থানা পুলিশ। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে চলা এসব অভিযানে আটক ১০৩ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ড প্রদান করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

ঘোড়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি এবং দিনাজপুরের পুলিশ সুপারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আমাদেরকে সার্বক্ষণিক বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন। সে অনুযায়ী আমরা দিনরাত ২৪ ঘণ্টা মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি। আগের তুলনায় ঘোড়াঘাটে মাদকের প্রভাব অনেকাংশে কমে গেছে। নতুন কিছু মাদক ব্যবসায়ী তৈরি হয়েছে। আমরা তাদের তালিকা তৈরি করেছি। তাদেরকে নিয়ে আমাদের গোয়েন্দারা কাজ করছে। আমরা ঘোড়াঘাটকে মাদকমুক্ত উপজেলা হিসেবে উপহার দিতে চাই।

ইএইচ