নলছিটির হাতে ভাজা মুড়ির চাহিদা দেশ-বিদেশে

নলছিটি (ঝালকাঠি) প্রতিনিধি প্রকাশিত: মার্চ ১১, ২০২৪, ০৩:১৮ পিএম
নলছিটির হাতে ভাজা মুড়ির চাহিদা দেশ-বিদেশে

রমজানকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার মুড়ি ব্যবসায়ীরা। উপজেলার দপদপিয়া ইউনিয়নের তিমিরকাঠি গ্রাম বিখ্যাত মুড়ির গ্রাম নামে পরিচিত। ইতোমধ্যে বেড়েছে মুড়ি তৈরির ব্যস্ততা।

এ গ্রামের মুড়ির কদর রয়েছে সারাদেশেই। রমজানের আগেই মুড়ি ভেজে পাইকারদের হাতে তুলে দিচ্ছেন এখানকার মুড়ি কারিগররা।

নলছিটির মুড়ি পল্লী তিমিরকাঠি গ্রামে প্রায় শতভাগ পরিবারই মুড়ি ভাজা ও বিক্রির সঙ্গে জড়িত। মুড়ি ভাজাকে আদি পেশা হিসেবে ধরে রেখেছেন এ গ্রামের বসিন্দরা। সারাবছর এ কাজ করেই তাদের সংসার চলে। বিশেষ করে রমজান মাস এলেই তাদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। রমজানের আগেভাগেই মুড়ি ভেজে মজুত রেখে বাড়তি আয় করেন তারা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতিটি পরিবারই মুড়ি ভাজায় ব্যস্ত। হাতে ভাজা এ মুড়ি দক্ষিণাঞ্চলের চাহিদা মিটিয়ে সারাদেশে চলে যায়।

মুড়ি ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতিদিন মণকে মণ মুড়ি এ গ্রাম থেকে পাইকার ও আড়তদাররা নিয়ে যান। ইউরিয়া সারের ব্যবহারবিহীন হাতেভাজা এ মুড়ি স্বাদে অতুলনীয়। তাই প্রতিদিন মানুষের কাছে এ মুড়ি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বাজারে অনেক সাদা ও প্যাকেটজাত মুড়ি থাকলেও তিমিরকাঠি গ্রামের হাতেভাজা মুড়ির কদর বেশি।

স্থানীয় পাইকাররা জানান, যেসব মুড়ি দেখতে ধবধবে সাদা তা মেশিনে রাসায়নিক কেমিক্যাল ব্যবহার ও ইউরিয়া সার দিয়ে তৈরি করা হয়। এসব মুড়ি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হওয়ায় সর্বস্তরের মানুষের কাছে হাতেভাজা মুড়ির চাহিদা রয়েছে।

মেসার্স মা এন্টারপ্রাইজ নামে মুড়ির আড়তের মালিক মো. গিয়াস উদ্দিন খাঁন জানান, এক সময় দেশের অন্য দশটা গ্রামের মতোই এ গ্রামের লোকেরা নিজেদের পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয় মুড়ি ভাজতেন। ১৯৮৫ সালে পার্শ্ববর্তী গ্রাম জুরকাঠির বাসিন্দা আমজেদ নামের এক ব্যক্তি মুড়ি ভেজে তা বাজারে বিক্রি করতে শুরু করেন। তার দেখাদেখি তিমিরকাঠীর কয়েকটি পরিবার তাদের সংসারের আয় বাড়াতে মুড়ি ভেজে বিক্রি করতে শুরু করেন। এভাবে শুরু হয় মুড়ি ব্যবসায় প্রতিযোগিতা। এক পর্যায় গ্রামের পরিবারগুলো মুড়ি ভেঙেই তাদের সংসার চালাতে শুরু করে।

স্থানীয় মুড়ির কারিগর দেলোয়ার হোসেন ও মোসা. খাদিজা বেগম জানান, মুড়ির জন্য উপযোগী বিশেষ তিনটি প্রজাতির ধান থেকে মুড়ি উৎপাদন ভালো হয়। দপদপিয়া ইউনিয়নে মোটা নাখুচী ও সাদা মোটা নামের তিন প্রজাতির ধানের ব্যাপক চাষাবাদ ও ফলন হয়। পূর্বে একমাত্র বউড়ি ধানের মুড়ির প্রচলন থাকলেও এখন তার চেয়ে সরস ধান হিসেবে নাখুচী ধানের মুড়ির কদর বেড়েছে।

এছাড়াও দিনাজপুর থেকে ভারতের নলটি চাল ক্রয় করে তিমিরকাঠীর মানুষ মুড়ি তৈরি করেন। বাণিজ্যিকভাবে মুড়ি ভাজার সাথে তিন যুগ ধরে এ গ্রামের পরিবারগুলো জড়িত।

জানা গেছে, দৈনিক গড়ে ১০০ কেজি মুড়ি ভাজতে পারলে খরচ বাদ দিয়ে ৭ শত থেকে ৮ শত টাকা লাভ হয়। তবে নিজেরা ধান কিনে সিদ্ধ করে শুকিয়ে মুড়ি ভেজে শহরে নিয়ে বিক্রি করলে দ্বিগুণ লাভ হয়। তাই স্বল্প পুঁজির মানুষ রমজান মাসে কমপক্ষে ১৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় করতে পারেন।

স্থানীয় আড়তদাররা এ গ্রাম থেকে মুড়ি সংগ্রহ করে দক্ষিণাঞ্চলের চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, ফরিদপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, কাউখালী, পটুয়াখালী, মির্জাগঞ্জ, মহিপুর, কুয়াকাটা, গোপালগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠান।

ঝালকাঠি বিসিকের ভারপ্রাপ্ত উপব্যবস্থাপক এইচ এম ফাইজুর রহমান বলেন, মুড়ি কারিগররা বিসিক থেকে ৫০ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত সহজ শর্তে ঋণ নিতে পারবে। তারা আমাদের কাছে আসলেই হয়।

ইএইচ