৪০বছর পর বীরমুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জমি উদ্ধার

জামালপুর প্রতিনিধি প্রকাশিত: এপ্রিল ১৭, ২০২৪, ০৭:৩৬ পিএম
৪০বছর পর বীরমুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জমি উদ্ধার

সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কুদ্দুসের জামালপুর পৌর শহরের সাহাপুর মৌজার ১৪.২৫ শতাংশ জমি উদ্ধার হয়েছে। 

বুধবার সকালে জামালপুর  জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট গাজি আশিক তার  প্রশাসনের জনবল নিয়োগ করে এ জমি উদ্ধার করেন। 

এ সময় জামালপুর সদর থানার ওসি মহব্বত কবীর,জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার সুজায়েত আলী ফকিরসহ গণমাধ্যম কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। উদ্ধার কর্মীরা বেদখল হওয়া চারতলার একটি ভবন ও তিন তলার একটি ভবন বুল ড্রেজার মেশিন দিয়ে গুড়িয়ে দেয়া হয়। 

জানা গেছে, বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কদ্দুস ১৯৭৯ সালে মৃত ঊজির আলী সরদারের স্ত্রী হালিমা খাতুন এর কাছ থেকে জামালপুর পৌর এলাকার সাহাপুর মৌজার দক্ষিণ মুকন্দবাড়ী এলাকায় ১৪.২৫ শতাংশ ভূমি বায়না দলিল মূলে ক্রয় করেন।পরে  মৃত উজির আলীর সন্তানাদি নাবালক থাকায় তার স্ত্রী অভিভাবক  হয়ে আদালতে আবেদন করলে তা মঞ্জুর হয়।পরে  বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কুদ্দুস ভূমির মালিককে জমিটি সাব- কবলা দলিল করে দেয়ার জন্য অনুরোধ করেন । ভূমির মালিক নানা তাল বাহানা করতে থাকলে এবং একই জমি বীর মুক্তিযোদ্ধা  আব্দুল কুদ্দুস ৫৭/১৯৮৫ নং চুক্তি প্রবলের মামলা দায়ের করেন। ইতোমধ্যে জনৈক মাহাবুবুল ভূমির মালিক এর সাথে যোগসাজশে মুক্তিযোদ্ধা  আব্দুল কদ্দুছ এর বায়না দলিল এর পূর্বের তারিখ দেখিয়ে একটি জাল বায়না দলিল তৈরি করেন যা পরবর্তীতে আদালতে প্রমাণিত হয়। পরে ৫/১০/১৯৯২ ইং তারিখে বিজ্ঞ সাব জজ আদালতে মামলার বাদী বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কুদ্দুস এর পক্ষে রায় প্রদান করেন, সেই সাথে পণ মূল্যের বিক্রি  টাকা জমা প্রদানের নির্দেশসহ বায়না সংশ্লিষ্ট তফশিল ভূমি আদালতের মাধ্যমে  রেজিস্ট্রেশন করে দেয়ার নির্দেশ প্রদান করা হয়। পরে  বিগত ২৯/০৯/১৯৯৯ তারিখে বিজ্ঞ আপিল আদালতে জেলা জজ কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে মাহাবুবুল হক গং মহামান্য হাইকোর্ট ডিভিশনে ১০৬৩/২০০০ ও ১০৬৪/২০০০ নং সিভিল রিভিশন দায়ের করেন এবং ২৪/০৩/২০১১ তারিখে মাহাবুবুল হকে গং দের পক্ষে রায় প্রদান করেন । মহামান্য হাইকোর্ট ডিভিশনের রায়ের বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা আবুল কুদ্দুস মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট ডিভিশনের আপীলেট ডিভিশনে লিভ টু আপিল এবং স্থিতি অবস্থা স্ট্যাটাস কিউও এর আবেদন করলে বিজ্ঞ সুপ্রিম কোর্ট আবেদন গ্রহণ করে সকল পক্ষকে স্থিতি অবস্থা বিরাজ করার নির্দেশ প্রদান করেন ।

পরে  হাইকোর্ট এর রায়ের সুবাদে মাহাবুবুল হক স্থানীয় কিছু  ব্যক্তির কাছে চতুরতার সাথে নালিশি ভূমি বিক্রয় করে স্বপরিবারে রাতের আঁধারে জামালপুর ত্যাগ করেন । এবং রাতারাতি নালিশি ভূমি মাটি ভরাট করে বহুতল ভবন নির্মাণ করবেন তারা। পরে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কুদ্দুস মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনার কপিসহ জামালপুর সদর থানায় সাধারণ ডাযরি( জিডি) করলে থানার পুলিশ তদন্ত করে প্রতিবেদন প্রদান করে । সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা অবজ্ঞা করে জমি দখল করে বহুতল ভবন নির্মাণ করায় কনটেম্প্ট পিটিশন  শুনানি অন্তে মাহাবুবুল হক গংদের বিরুদ্ধে কোর্ট অব কনটেম্প্ট  আনয়ন করেন । 

পরিশেষে মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ০৪/১০/২০২১ তারিখে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কদ্দুসের পক্ষে রায় প্রদান করে । সাথে মামলা চলমান অবস্থায়  মাহাবুবুল  হকের সমস্ত দলিল বাতিল করে আদালত মাধ্যমে  বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কুদ্দুস কে জমির দখল বুঝিয়ে দেয়ার নির্দেশনা প্রদান করে ।
যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কদ্দুছ বিগত ১৩/০২/২০২২ ইং তারিখে ৮৫ বছর বয়সে স্ত্রী এবং দুই পুত্র রেখে পরলোক গমন করেন ।

দীর্ঘ ৩৯ বছর পর বহু প্রতীক্ষার পর রায় বাস্তবায়ন এবং ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা হওয়ায় যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কদ্দুছ এর পরিবারেরপক্ষ থেকে জ্যেষ্ঠ পুত্র খাজা ওয়াছিউল্লাহ্ মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বিশেষ ধন্যবাদ জানান।

আরএস