নন্দীগ্রামে ধানের শিষে পানিশূন্য, মাটি ফেটে চৌচির

নন্দীগ্রাম (বগুড়া) প্রতিনিধি : প্রকাশিত: এপ্রিল ২৯, ২০২৪, ০৬:১৬ পিএম
নন্দীগ্রামে ধানের শিষে পানিশূন্য, মাটি ফেটে চৌচির

মৌসুমের সময় বেড়ে ওঠা ধানগাছে কৃষকের মন ভরে ওঠার কথা। কিন্তু তাদের মন ভালো নেই। তীব্র তাপপ্রবাহ ও ধানের জমির মাটিতে ফাটল ধরায় ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কায় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় কৃষকদের দিন কাটছে।

বগুড়ার নন্দীগ্রামে বিদ্যুতের লোডশেডিং আর পানির অভাবে বোরো ধানের জমির মাটিতে ফাটল ধরেছে। উপজেলার বাদলাশন ও সিধইলসহ বেশকয়েকটি গ্রামের মাঠে পানির অভাবে প্রায় চারশো বিঘা জমির ধান নুয়ে পড়ছে।

শুকিয়ে যাচ্ছে ধানের নতুন শিষও। বাদলাশন মাঠে নলকূপ বিরোধে পানি সেচ না দেওয়ায় মাঠের শতবিঘা ও সিধইল মাঠে
প্রায় আড়াইশো বিঘা জমির মাটি শুকিয়ে ফেটে যাচ্ছে।

কৃষকেরা জানান, ধানে নতুন শিষ (ফুল) এলেও শুকিয়ে যাচ্ছে। এ সময় খেতে পর্যাপ্ত সেচ দিতে না পারলে ধানগুলো চিটা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আধাপাকা ধানগুলো নষ্ট হয়ে ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কা রয়েছে। তবে আগাম জাতের ধান পাকতে শুরু করেছে। কিছু মাঠে ধান কাটা-মাড়াই চলছে। ভালো ফলন পেয়ে কিছু কৃষকের মন ভরছে ঠিকই। অন্যদিকে হাজারো কৃষক আধাপাকা আর নতুন শিষ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন।

কৃষি অফিস সুত্র জানায়, চলতি বোরো মৌসুমে উপজেলার ১৯ হাজার ৮২৩ হেক্টর জমিতে ধানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরমধ্যে ৩৯৪ হেক্টর জমিতে ব্রি-ধান ৯০, কাটারি ৮ হাজার ২১৫ হেক্টর, ২ হাজার ১৮৫ হেক্টর বিনা-৭ এবং স্থানীয় জাত (মিনিকেট) ৭ হাজার ৭১৭ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে।

ব্রি-ধান ৯২, ব্রি-ধান ১০০, বিনা-২৫, সিনজেন্টা ও হাইব্রিড ধানের চাষ হয়েছে। প্রখর রোদ ও লোডশেডিংয়ে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে পানির অভাবে বোরো খেত শুকিয়ে যাচ্ছে।

অনেক জমির মাটিতে ফাটল ধরতে শুরু করেছে। কিছু মাঠে ধান আধাপাকা থাকলেও বেশিরভাগ মাঠে সবেমাত্র ধানগাছ থেকে শিষ (ফুল) বের হচ্ছে। এই সময় খেতে পর্যাপ্ত পানি না থাকলে বেশির ভাগ ধান চিটা হওয়ার উপক্রম হয়েছে।গতকাল সোমবার বাদলাশন মাঠে বোরো ধানখেত পরিদর্শন করেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা গাজীউল হক।

তিনি জানান, সেখানে নলকূপ বিরোধ নিরসনে কৃষকদের সঙ্গে কথা হয়েছে। পানির অভাবে ধানের শিষ শুকিয়ে চিঁটা হতে পারে। যেসব জমির ধান পাকতে শুরু করেছে, সেগুলো কাটতে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

কৃষি কর্মকর্তা আরও জানান, বাদলাশন বি-৫৪ গভীর নলকূপ এরিয়ার (স্কিম) মধ্যে আড়াইশ বিঘা জমি আছে। লাইসেন্স ছাড়া দুটি ডিপ মেশিন ছিল, সেগুলো বন্ধ করে দেওয়ায় এবং বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। অনেক জমিতে ধানের নতুন শিষ এসেছে, সেগুলোতে পানি সেচ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে আপাতত সব মেশিন চালু রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এর আগে গত রোববার সেচ কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর বাদলাশন এলাকার ৫৫ জন কৃষকের স্বাক্ষরিত লিখিত অভিযোগ করা হয়।

কৃষক রেজাউল শেখ, বাদশা মিয়া, মোতলেব, রাজু, আশরাফুল আলম, নজরুল, জাহিদুল, বুলু মিয়া, শাহাজান আলী, বাচ্চু মিয়াসহ অর্ধশত কৃষক অভিযোগ করেন, বাদলাশন বি-৫৪ গভীর নলকূপের নতুন অপারেটর আব্দুর রাজ্জাক নিযুক্ত হওয়ার পর থেকেই আগের কমিটির সদস্যদের জমিতে ঠিকমতো পানি সেচ দেন না। নলকূপ এরিয়ার শত বিঘারও বেশি জমি পানি সেচ বঞ্চিত অবস্থায় রয়েছে। নলকূপ কমিটি পরিবর্তনের পর থেকেই এ অবস্থা। তারা নিজেদের জমিতে ঠিকমতো পানি দিলেও নলকূপ কমিটির সাবেক সদস্যদের জমির কথা ভাবছে না।

কৃষকেরা নিরুপায় হয়ে প্রতিকারের জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য, বিএডিসি বগুড়ার সহকারী প্রকৌশলী (সওকা), উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা কৃষি অফিসার বরাবর অভিযোগের অনুলিপি দিয়েছেন। তারা বাদলাশন নলকূপের নতুন অপারেটর আব্দুর রাজ্জাককে পরিবর্তন করে ফসল রক্ষার দাবি জানিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সেচ কমিটির সভাপতি মো. হুমায়ুন কবির বলেন, বাদলাশন মাঠে নলকূপ বিরোধে জমিতে সেচ না দেওয়ার অভিযোগ পেয়েছি। দু’পক্ষের বিরোধ নিরসনের চেষ্টা করছি।

বগুড়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির নন্দীগ্রাম এরিয়ার সহকারী জেনারেল ম্যানেজার (এজিএম) মো. রকিবুজ্জামান জানান, এ মুহূর্তে উপজেলায় ২২-২৩ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে চাহিদার তুলনায় অর্ধেক। তাপপ্রবাহের কারণে লোডশেডিং বাড়ছে। যেসব এলাকায় কৃষিজমি বেশি। সেসব এলাকায় টানা ২ ঘণ্টার বেশি বিদ্যুৎ রাখার পরিকল্পনা রয়েছে।

বিআরইউ