৬০ বছর আগের নির্মিত ভবন

মানুষের প্রাণ রক্ষায় ঝাঁপিয়ে পড়াদের জীবন কাটছে ঝুঁকিতে

কক্সবাজার প্রতিনিধি: প্রকাশিত: মে ৫, ২০২৪, ০৪:৫৫ পিএম
মানুষের প্রাণ রক্ষায় ঝাঁপিয়ে পড়াদের জীবন কাটছে ঝুঁকিতে

সার্বক্ষণিক জনগণের জানমাল রক্ষায় ঝাঁপিয়ে পড়া ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরাই এখন জীবন অনিশ্চয়তায় রয়েছে। তিন বছর আগের পরিত্যক্ত ভবনেই চলছে তাদের অফিস, বসবাস, রান্না ও ডাইনিং।

৬০ বছর আগের নির্মিত কক্সবাজার জেলা সদর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন ফায়ার সার্ভিসের ভবনটিতে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা দিনকে দিন বাড়ছে। নতুন ভবনের আবেদন জানালেও পুরাতন ভবন সংস্কারের মধ্যেই আটকে আছে সমাধান। জেলা প্রশাসকের বাংলোর নিচে অস্থায়ীভাবে অফিসের কার্যক্রমের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানায় কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক অতীশ চাকমা।

রবিবার (৫ মে ) সরেজমিনে দেখা যায়, ঝুঁকিপূর্ণ ভবন আর ব্যারাকে থেকেই প্রতিদিন কাজ করতে হচ্ছে জনগণের প্রাণ রক্ষায় ঝাঁপিয়ে পড়াদের জীবন কাটছে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, দুর্যোগ আর দুর্ঘটনায় সেবার হাত বাড়িয়ে যারা মানুষের পাশে দাঁড়ান, তারাই আছেন ভয়াবহ দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে।

কক্সবাজার সদর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের সভাপতি এবং কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক কর্তৃক ২০২১ সালের ১১ অক্টোবর স্বাক্ষরিত ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন কক্সবাজারের মূল ভবন কনডেম ঘোষণার লক্ষ্যে গঠিত সুপারিশ প্রণয়ন কমিটির একটি চিঠি প্রতিবেদকের কাছে আসে।

সেই চিঠিতে দেখা যায়, কক্সবাজার সদর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সদস্য সচিব ও নির্বাহী প্রকৌশলী, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, কক্সবাজার কর্তৃক কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের মূল ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণাপূর্বক নিলামে বিক্রির জন্য গণপূর্ত বিভাগ কর্তৃক ২০২১ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ৩৩২নং স্মারক মূলে প্রেরিত প্রতিবেদন প্রস্তাবকৃত প্রাক্কলন প্রস্তাবনা সভায় উপস্থাপন করা হয়। এই বিষয়ে সভায় বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।

কক্সবাজার গণপূর্ত বিভাগ কর্তৃক দাখিলকৃত প্রাক্কলনে ৩২,৩৩৮.৬৫ টাকা নিলাম মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে মর্মে সভায় অবহিত করা হয়। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন, কক্সবাজারের মূল ভবন কনডেম ঘোষণার লক্ষ্যে গঠিত সুপারিশ প্রণয়ন কমিটি, কক্সবাজার, গণপূর্ত বিভাগের মতামতের সঙ্গে একমত পোষণ করে ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা যেতে পারে মর্মে মতামত ব্যক্ত করা হয় ও অন্যান্য সদস্যের মতামত আহ্বান করা হয়। সভায় উপস্থিত সদস্যরা ওই প্রাক্কলনের বিষয়ে মতামত উপস্থাপন করেন এবং ভবনটি কনডেম ঘোষণা করা যেতে পারে মর্মে একমত পোষণ করেন।

চিঠিতে আরো দেখা যায়, কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচিত হওয়ায় কমিটি এই ভবনটি কনডেম ঘোষণা করে নতুন ভবন নির্মাণের সুপারিশ করে। বিদ্যমান ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটি নিলামের মাধ্যমে বিক্রির জন্য নির্বাহী প্রকৌশলী, গণপূর্ত বিভাগ, কক্সবাজার কর্তৃক প্রণীত প্রাক্কলন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বিস্তারিত আলোচনা শেষে ৩২,৩৩৮/৬৫ টাকার প্রাক্কলনটি সঠিক বিবেচিত হওয়ায় প্রাক্কলনসহ ভবনটি অপসারণ ও তদস্থলে নতুন ভবন নির্মাণের সুপারিশ সুরক্ষা সেবা বিভাগে প্রেরণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন ভবনটি ১৯৬৪ সালে নির্মিত হয়। বর্তমানে এখানে ৪০ জন কর্মী রয়েছেন। ভবনটির নিচতলা ও ২য় তলার বিমের বিভিন্ন জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে। ছাদ ও বিমের বিভিন্ন জায়গায় কংক্রিট ধসে পড়ে রড উন্মুক্ত হয়ে গেছে এবং এতে মরিচা ধরে গিয়েছে। বেশ কয়েকটি কলামে ফাটল দেখা দিয়েছে। ভূমিকম্পসহ যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষেত্রে ভবনটি দুর্ঘটনার সম্মুখীন হতে পারে। জেলা সদর ফায়ার স্টেশনের পুরো ভবন আর ব্যারাক রয়েছে ভয়াবহ ঝুঁকির মুখে।

কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সিনিয়র স্টেশন অফিসার প্রতিবেদককে বলেন, আমরা নিজেরা সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দিয়ে থাকি কিন্তু আমাদের থাকতে হয় ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে। বর্তমানে এখানে ৪০ জন কর্মী রয়েছেন। যেকোনো মুহূর্তে আমরা দুর্ঘটনার কবলে পড়তে পারি।

কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক অতীশ চাকমা জানান, তিন বছর আগে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটি কনডেম ঘোষণা করেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক। সঙ্গে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে এবং এলজিইডি কক্সবাজারকে ২০২৪ সালের ভেতরে ৬-তলা বিশিষ্ট একটি মডেল ভবন নির্মাণ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়।

উপসহকারী পরিচালক জানান, সমন্বয়ের অভাবে ভবনের কাজ এখনো শুরু হয়নি। আমাদের ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের প্রতিদিনই ঝুঁকির মধ্যে কাজ চালাতে হচ্ছে।

উপসহকারী পরিচালক অতীশ চাকমা জানান জেলা প্রশাসকের বাংলোর নিচে অস্থায়ীভাবে অফিসের কার্যক্রমের প্রক্রিয়া চলছে৷

কক্সবাজার গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহ জাহানের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুইবার কল রিসিভ করে ফোন কল কেটে দেন।

বিআরইউ