‘শিরক’ আখ্যা দিয়ে কেটে ফেলল শতবর্ষী বটগাছ

জাহিদ হাসান, মাদারীপুর প্রকাশিত: মে ৬, ২০২৫, ০৮:৫৮ পিএম
‘শিরক’ আখ্যা দিয়ে কেটে ফেলল শতবর্ষী বটগাছ

অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী খ্যাত বটগাছ ঘিরে পূজা ও মানতের অভিযোগ তুলে শিরক ও বিদআত (ইসলাম বিরোধী) আখ্যা দিয়ে শতবর্ষী বটগাছটি বেশিরভাগ অংশ কেটে ফেলা হয়েছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। গাছ কাটার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নড়েচড়ে বসেন উপজেলা প্রশাসন ও বন কর্মকর্তারা। 

অন্যদিকে গাছ কাটার সাথে জড়িতরা এরই মধ্যে গা ঢাকা দিয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে মাদারীপুর সদর উপজেলার শিরখাড়া ইউনিয়নের আলম মীরের কান্দি গ্রামে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বিশাল বটগাছটির প্রায় ৯০ শতাংশ কেটে ফেলা হয়েছে। গাছটিতে মাটির সঙ্গে অনেক মূলকান্ড থাকলেও কেটে ফেলার পর এখন শুধু দুটো মূলকান্ড ডালপালা বিহীন দাঁড়িয়ে আছে। বাকি মূলকান্ডগুলো ও গাছের সকল ডালাপাল কেটে ফেলা হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, সকাল ৯টার দিকে কিছু হুজুর গাছ কাটা শুরু করেন। তারা প্রথমে গাছের ডালপালা কেটে ফেলে। এরপর মাটি থেকে যে কান্ডগুলো উঠে গেছে সেগুলো করাত দিয়ে কাটতে শুরু করে। স্থানীয় অনেকে বিষয়টি দেখে ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। এছাড়া স্থানীয় বাসিন্দারা বিষয়টি নিয়ে অসন্তোষ ও ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকলে এক পর্যায় হুজুররা একে একে সেই স্থান ত্যাগ করে।

স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, শিরখাড়া ইউনিয়নের কুমার নদের আলম মীরের কান্দি গ্রামের খেয়াঘাটে এই বট গাছটি তারা ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছে। এ গাছটি কে লাগিয়েছে বা কিভাবে এখানে বড় হয়েছে তা কেউ জানেনা। এই গাছটির অলৌকিক ক্ষমতা রয়েছে বলে অনেক মানুষ যুগ যুগ ধরে বিশ্বাস করে আসছে। সেই বিশ্বাস থেকে নদীর পাড়ের এই বটবৃক্ষে লাল শাড়ি ও কাপড় বেঁধে এবং মোমবাতি ও আগরবাতি জ্বালিয়ে অনেকেই মানত করেন। এগুলোও যুগ যুগ ধরে চলে আসছিল। এতদিন কেউ গাছটি নিয়ে কোন কথা বলেনি। হঠাৎ করে কিছু আলেম এই বিষয়টিকে বিদআত ও শিরক আখ্যা দিয়ে গাছটি কেটে ফেলে।

শিরখাড়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য বাবুল হোসেন বলছিলেন, “স্থানীয় কয়েকজন বটগাছটি কেটে ফেলেন। তারা গাছ কাটার বিষয়ে আমাদের কিছু জানায়নি। তবে লোকমুখে শুনেছি, যারা গাছ কেটেছে, তারা দাবি করেছেন- এই বটগাছে এসে মানুষ পূজা করে; মানত করে। অনেকে মনে করত, গাছটির অলৌকিক ক্ষমতা আছে।

এই বিষয়টিই এক শ্রেণির লোকজন মনে করেছে যে, বিদআত ও শিরক। এই অভিযোগ তুলে তারা গাছটি কেটে ফেলেছে। এখন প্রশাসনের কাছে দাবি করছি, এই ঘটনার একটি সুষ্ঠু বিচার তারা করুক।
এ বিষয়ে মাদারীপুর বন নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের বন কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “আমি সকালেই আলম মীরের কান্দি গিয়ে বট গাছটি দেখে এসেছি। গাছটির ৯০ শতাংশই কেটে ফেলা হয়েছে। মাটির সঙ্গে ১০ ফুট উচ্চতার দুটো মূলকান্ড ডালাপালা বিহীন দাঁড়িয়ে আছে। বাকি সব মূলকান্ড ও ডালাপাল কেটে ফেলা হয়েছে। আমরা তদন্ত করছি। তদন্ত প্রতিবেদন আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে অবহিত করব। পরে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।”

মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াদিয়া শাবাব বলেন, “শিরখাড়ায় যে বট গাছটি স্থানীয়রা কেটে ফেলেছে। আমরা সেখানে প্রশাসনের লোক পাঠিয়েছি। যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে, তারা এখন গা ঢাকা দিয়েছে। আমরা তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”

আরএস