সব বাধা পেরিয়ে মধুপুরের ইউএনওর অনুপ্রেরণার গল্প

আ. হামিদ, মধুপুর (টাঙ্গাইল) প্রকাশিত: মে ৮, ২০২৫, ০৩:৪৯ পিএম
সব বাধা পেরিয়ে মধুপুরের ইউএনওর অনুপ্রেরণার গল্প

দেশের সাধারণ জনগণের কাছাকাছি সরকারি সেবা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে মাঠ পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি কাজ করছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা।

জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার বিপ্লব পরবর্তী সময়ে একাধারে উপজেলার ইউএনও, সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতি, উপজেলা পরিষদের প্রশাসক এবং পৌরসভার প্রশাসক হিসেবে কাজ করছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা।

উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা সরকারি সকল সিদ্ধান্তের সঠিক বাস্তবায়নসহ জনগণের প্রকৃত সেবায় নিয়োজিত হবেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু দায়িত্বের বাইরে গিয়েও অনেক সময় যখন কোনো কোনো সরকারি কর্মকর্তা সাধারণ জনগণকে ভালো রাখার জন্য দিন-রাত কাজ করেন আর তাদের কাজের ধারাবাহিক গতি যখন মনে দাগ লাগার মতো হয় তখন তারা সাধারণ জনগণসহ আপামর জনতার শ্রদ্ধার পাত্রে পরিণত হন। এমনই একজন টাঙ্গাইল জেলার মধুপুরের উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. জুবায়ের হোসেন।

মো. জুবায়ের হোসেন ২০০৪ সালের গ্রামীণ অপচিকিৎসায় বাম হাত হারান মাত্র ১৪ বছর বয়সে। নানা প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে নিজ কর্মগুণ ও চেষ্টায় হয়েছেন বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের সদস্য।

চাকরির শুরু হয় জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে। সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে কাজ করেছেন টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে তিনি জয় করেছেন মধুপুরবাসীর মন।

উপজেলার পৌরসভাসহ প্রতিটি ইউনিয়নে ব্যাপক উন্নয়ন কাজ করছেন যেমন, রাস্তাঘাট, ড্রেন নির্মাণ, টিআর কাবিখা কাজ পরিদর্শন, হাটবাজারের উন্নয়ন।

মধুপুর উপজেলায় যোগদানের পর থেকে তিনি উপজেলার উন্নয়নে অসংখ্য প্রশংসনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। তার কাছে আসা সব সেবাপ্রার্থীকে তিনি হাসিমুখে কাঙ্ক্ষিত সেবা দেয়ার চেষ্টা করার পাশাপাশি সাধারণ মানুষ যাতে সম্পূর্ণরূপে দালালমুক্ত হয়ে সরকারি সেবা পেতে পারে সেই উদ্যোগ নিয়েছেন।

উপজেলায় যোগদানের পর থেকে তার সততা ও কর্মদক্ষতায় পাল্টে গেছে উপজেলা পরিষদের প্রশাসনিক কার্যক্রম ও সার্বিক চিত্র। সরকারি-বেসরকারি প্রতিটি দপ্তরের কর্মকাণ্ডে ফিরে এসেছে গতিশীলতা ও স্বচ্ছতা। কমেছে জনভোগান্তি আর বৃদ্ধি পেয়েছে জনসেবার মান। মধুপুর উপজেলা ও পৌরসভাকে একটি উন্নত আধুনিক জনপদ হিসেবে গড়ে তুলতে নিরলসভাবে কাজ করছেন তিনি। জনবান্ধব এই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কর্মকাণ্ডে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন উপজেলার রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, গণমাধ্যমকর্মী ও সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।

৩৫তম বিসিএসের এই কর্মকর্তা ২০২৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি মধুপুর উপজেলায় যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকে উপজেলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, সরকারি খাস জমি উদ্ধার, শিক্ষার মান বৃদ্ধি, দ্রব্যমূল্যের নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী ভূমিকা পালন, অবৈধ ফুটপাত দখলমুক্তকরণ, যেকোনো সময়ের তুলনায় সর্বাধিক উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণ এবং সাধারণ মানুষের সরকারি সেবা নিশ্চিত করাসহ সরকারের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়ন করে ইতিমধ্যে তিনি উপজেলায় একজন মানবিক কর্মকর্তা হিসেবে সাধারণ মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছেন।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, যোগদানের পর তিনি উপজেলার বনের খাসজমি, রেকর্ডিয় খাসজমি উদ্ধারে কার্যকরী পদক্ষেপ নেন। মো. জুবায়ের হোসেন মধুপুরে যোগদানের পর উপজেলার শিক্ষার মান বৃদ্ধিতে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছেন। সরকারি কাজে উপজেলার বিভিন্নপ্রান্তে উপস্থিতির পাশাপাশি তিনি প্রায়ই বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক, মাধ্যমিক, মাদরাসা ও কলেজ পরিদর্শন করছেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে শিক্ষকদের সাথে আলাপ-আলোচনা করে শিক্ষার মান বৃদ্ধিতে করণীয় নির্ধারণে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন। এছাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ঝড়ে পড়া রোধে তিনি বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নিয়েছেন।

মধুপুর উপজেলা পাহাড়ি লাল মাটি এবং পাহাড়ি টিলা কাটা বন্ধে তিনি দিন-রাত মোবাইলকোর্ট পরিচালনা করে উপজেলায় নজির স্থাপন করেছেন এবং অনেক টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েছেন। মধুপুর উপজেলায় প্রায় ২৫ হাজার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বসবাস। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী এলাকায় ইতিমধ্যে ৩৮টি বাড়ি, ৪২ জনকে বাইসাইকেল, হাঁস-মুরগি, গরু ও ৮০০ জনকে সরকারি শিক্ষাবৃত্তি সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে উপকারভোগী নির্বাচন করেছেন।

বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি মধুপুর উপজেলা শাখার সভাপতি ও কালা মাঝি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল বাশার বলেন, আমাদের উপজেলার ইতিহাসে এমন জনবান্ধব ইউএনও আমরা আগে দেখিনি। তিনি অল্প কয়েকদিনে যেভাবে সকলের ভালোবাসা পেয়েছেন, তার মতো এমন ভালো লোকের কারণেই এই দেশ একদিন উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছাবে। তিনি উপজেলার সকল মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন।

উপজেলার ফুলবাগচালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফরিদ আলী ফরিদ বলেন, আমাদের বর্তমান উপজেলা নির্বাহী অফিসার একজন ব্যতিক্রমী জনবান্ধব কর্মকর্তা। তিনি মধুপুর উপজেলায় যোগদানের পর থেকে উপজেলার সার্বিক উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন।

ইউএনওর এসব সাফল্যের বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে মধুপুর উপজেলা প্রেসক্লাবের সাংবাদিক জলিল বলেন, সরকারের মাঠ প্রশাসনের একজন  কর্মকর্তা এবং মানবসেবক হিসেবে মধুপুর  উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অসাধারণ একজন মানুষ। সরকারের অর্পিত প্রতিটি দায়িত্ব পেশাদারিত্বের সাথে তিনি সঠিক ভাবে পালন করে যাচ্ছেন।

একান্ত সাক্ষাৎকারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. জুবায়ের হোসেন আমার সংবাদকে বলেন, সরকারি কর্মকর্তারা জনগণের সেবক। নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সবসময় চেষ্টা করি মানুষের দুঃখ-কষ্ট লাঘবের। জেনে বুঝে কখনো আমার দায়িত্বে অবহেলা করিনি। মাঠ প্রশাসনে উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে গ্রামের প্রান্তিক মানুষের সাথে কাজ করার এই সুযোগ। এই সুযোগ হাতছাড়া করতে চাচ্ছি না।

তিনি আরও বলেন, এই উপজেলার মানুষ খুবই আন্তরিক। যেকোনো প্রয়োজনে জনপ্রতিনিধি ও রাজনীতিবিদ ও সুশীল সমাজের সহযোগিতা পাওয়া যায়। যতদিন মধুপুর উপজেলায় আছি মানুষের জীবনযাত্রাসহ উপজেলার সার্বিক উন্নয়নে কাজ করে যাব।

তিনি দায়িত্ব পালনে উপজেলা পরিষদের কর্মকর্তা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শিক্ষার্থী, সাংবাদিকসহ সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতা চান তিনি।

ইএইচ