বাণিজ্যিক রাজধানী ও দেশের একমাত্র বৃহৎ অর্থনৈতিক জোন চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে সরকারের মহাপরিকল্পনা রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী।
বৃহস্পতিবার সকালে চট্টগ্রাম বন্দরের পতেঙ্গা এলাকায় লালদিয়া টার্মিনাল, বে-টার্মিনাল প্রকল্প এবং নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিদর্শন করেন তিনি।
এ সময় তার সাথে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান, এবং বিডার উপ-প্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার।
বিডা চেয়ারম্যান বলেন, “চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে সরকারের মহাপরিকল্পনা বিদেশি বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে। ইতোমধ্যে মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল (এফটিজেড) স্থাপনের জন্য একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে, যা আন্তর্জাতিকভাবে অভিজ্ঞ পরিচালকদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে সম্ভাব্যতা যাচাই করছে।”
তিনি জানান, পতেঙ্গার লালদিয়া চরে প্রস্তাবিত নতুন টার্মিনাল প্রকল্পে নেদারল্যান্ডভিত্তিক শীর্ষস্থানীয় বন্দর অপারেটর এপিএম টার্মিনালস ৮০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে। এটি বিশ্বের অন্যতম বড় বন্দর অপারেটর এবং তারা এই প্রস্তাবিত বন্দরটিকে স্টেট-অফ-দ্য-আর্ট ও পরিবেশবান্ধব গ্রিন পোর্ট হিসেবে গড়ে তুলতে চায়। এতে আনুমানিক ৮০০ মিলিয়ন ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ আসবে এবং এটি সম্পূর্ণ এফডিআই হিসেবে হবে—সরকার এক টাকাও দেবে না।
চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় ৪০০ একর জমির ওপর একটি মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল স্থাপন করা হবে, যা দেশের অর্থনীতিতে “গেম চেঞ্জার” হিসেবে ভূমিকা রাখবে। এখানে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো কারখানা স্থাপন করে পণ্য রপ্তানি করতে পারবে, এবং এটি দেশের শ্রমশক্তির জন্য অনেক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে।
আশিক চৌধুরী আরও বলেন, “চট্টগ্রাম বন্দর ও বিমানবন্দরের কাছাকাছি হওয়ায় আনোয়ারা অঞ্চলের জমি প্রাথমিকভাবে বিবেচনায় রয়েছে। আমরা এই অঞ্চলের জন্য উপযুক্ত জমি খুঁজছি। আমরা চাই, ২০৩১ সালের মধ্যে এই প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু করতে।”
তিনি আরও জানান, “বাংলাদেশকে গ্লোবাল ফ্যাক্টরি বানানোর লক্ষ্য অর্জনে পোর্ট ক্যাপাসিটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের ৫০ শতাংশ জনগণ ২৫ বছরের নিচে, তাই তাদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হলে ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের সম্প্রসারণ প্রয়োজন।”
চট্টগ্রাম বন্দর ও এর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে বিডা চেয়ারম্যান বলেন, “এপিএম এবং ডিপি ওয়ার্ল্ডের মতো অভিজ্ঞ কোম্পানিগুলোর সাহায্যে বন্দরের অপারেশন আধুনিকভাবে পরিচালিত হবে। এসব প্রকল্পে এক বিলিয়ন ডলার করে বিনিয়োগ আসবে, এবং ২০৩০ সালের মধ্যে এই টার্মিনালগুলো কার্যক্রম শুরু করবে।”
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান বলেন, “বে-টার্মিনাল প্রকল্পটি ২৫ হাজার মানুষের সরাসরি কর্মসংস্থান তৈরি করবে, এবং এটি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে আমূল পরিবর্তন আনবে।”
ইএইচ