মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচার পেতে নিজেদেরই কথা বলতে হবে

শ্যামনগর (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি প্রকাশিত: মে ১৫, ২০২৫, ০৮:৩১ পিএম
মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচার পেতে নিজেদেরই কথা বলতে হবে

সাতক্ষীরার শ্যামনগরে আদিবাসীদের জাতীয় পর্যায়ের গণমাধ্যম আইপিনিউজের আয়োজনে আর্টিকেল-১৯, ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন ও ফ্রি প্রেস আনলিমিটেডের সহযোগিতায় "সুন্দরবন অঞ্চলের আদিবাসীদের মানবাধিকার পরিস্থিতি ও আদিবাসী গণমাধ্যমের ভূমিকা" শীর্ষক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টায় শ্যামনগর উপজেলার সুন্দরবন আদিবাসী মুন্ডা সংস্থা (সামস্) এর কনফারেন্স রুমে অনুষ্ঠিত সভায় নির্ধারিত আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সুন্দরবন আদিবাসী মুন্ডা সংস্থার সভাপতি ও স্থানীয় মুন্ডা নেতা গোপাল মুন্ডা, মুন্ডা নারী নেত্রী সঞ্জলী মুন্ডা, মানবাধিকার কর্মী ত্রিজিনাদ চাকমা, সুন্দরবন প্রেসক্লাবের সভাপতি বিলাল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক জিএম মাছুম বিল্লাহ, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের ঢাকা মহানগর সভাপতি জগদীশ চাকমা, সামস্ প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর রাম প্রসাদ মুন্ডা প্রমুখ।

মডারেটর ছিলেন আইপিনিউজের নির্বাহী সম্পাদক সতেজ চাকমা।

সভায় আইপিনিউজ যুগ্ম সম্পাদক অমর শান্তি চাকমা বলেন, আদিবাসীরা দীর্ঘদিন ধরে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত ও সংকুচিত হচ্ছে। তারা মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ নানা সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছেন। সুন্দরবনের মুন্ডা আদিবাসীদের বর্তমান পরিস্থিতি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি বিষয়ক নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে এ বিষয়গুলো তুলে আনার জন্যই এই আয়োজন করা হয়েছে। 

এছাড়া আদিবাসী গণমাধ্যম হিসেবে আইপিনিউজের ভূমিকা এবং আদিবাসীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধির বিষয়েও আলোচনা হবে।

মুন্ডা নারী নেত্রী সঞ্জলী মুন্ডা বলেন, আমাদের প্রধান সমস্যা ভূমি অধিকার এবং জলবায়ু পরিবর্তন। তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও বাল্যবিবাহ আমাদের সমাজে বড় চ্যালেঞ্জ। ইউনিয়ন পরিষদে বিচার চাইলেও ন্যায্যতা পাওয়া যায় না, বরং সরকারি ভাতা দাবির সময় টাকার দাবি করা হয়। এসব অন্যায় যদি আমরা না বলি, চুপ থাকি তবে তা বাড়তেই থাকবে, তাই আমাদের নিজেদের কথা নিজেদের বলতে হবে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের ঢাকা মহানগর সভাপতি জগদীশ চাকমা বলেন, বাংলাদেশে পাহাড় ও সমতলে ৫৪টিরও বেশি আদিবাসী জনগোষ্ঠী বসবাস করে, যাদের অধিকাংশই অধিকারবঞ্চিত। ১৯৯৭ সালের চুক্তি সত্ত্বেও আদিবাসীদের অধিকার এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। নারীরা ধর্ষণ, হত্যা ও নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন। তাই আদিবাসীদের ঐক্যবদ্ধ লড়াই ছাড়া বিকল্প নেই।

সামস্ প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর রাম প্রসাদ মুন্ডা বলেন, আদিবাসীদের আত্মপরিচয়ের অধিকার মানবাধিকার। আমাদের কথা বলার স্বাধীনতায় বাধা দেওয়া হচ্ছে, যা মানবাধিকার লঙ্ঘন। তাই এসব বিষয় গণমাধ্যমে তুলে আনা প্রয়োজন। আইপিনিউজ আদিবাসীদের একমাত্র গণমাধ্যম হিসেবে এই কাজ করছে, তবে নিজেদের কথা নিজেদের বলার জন্য আদিবাসী তরুণদের সাংবাদিকতায় প্রশিক্ষণ দেওয়া উচিত।

সুন্দরবন প্রেসক্লাব সভাপতি বিলাল হোসেন বলেন, আদিবাসীদের নিজস্ব গণমাধ্যম থাকার কারণে তাদের কথা নিজেদের বলার সুযোগ পাচ্ছে। কিন্তু আদিবাসীরা ভয় পাবার কারণে বেদনার কথা প্রকাশ করতে পারে না, যা সমস্যা। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ক্রমেই বাড়ছে, অথচ এনজিওগুলো খুব বেশি কাজ করতে পারছে না।

সাধারণ সম্পাদক জিএম মাছুম বিল্লাহ বলেন, মুন্ডাদের শিক্ষার হার বেড়েছে এবং তারা এখন নিজেরা ভয়েস রেইজ করছে। আশা করি তারা একদিন তাদের অধিকার পাবে এবং সুন্দরবনের অবদানকে সবার কাছে স্বীকৃতি মিলবে।

মানবাধিকার কর্মী ত্রিজিনাদ চাকমা বলেন, রাষ্ট্র যদি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল হতো, তাহলে আমাদের এত অধিকার নিয়ে কথা বলতে হত না। রাষ্ট্রের দায়িত্ব হচ্ছে নাগরিকদের মানবাধিকার রক্ষা করা।

ইএইচ