মাগুরায় ছাত্রাবাসে গড়ে ওঠা ‘টর্চার সেল’ থেকে ৫ ব্যবসায়ী উদ্ধার

মাগুরা প্রতিনিধি প্রকাশিত: মে ২৯, ২০২৫, ০৩:৩১ পিএম
মাগুরায় ছাত্রাবাসে গড়ে ওঠা ‘টর্চার সেল’ থেকে ৫ ব্যবসায়ী উদ্ধার

মাগুরা শহরের সাজিয়াড়া এলাকায় একটি পরিত্যক্ত ছাত্রাবাসে গড়ে তোলা ‘টর্চার সেল’ থেকে পাঁচজন ব্যবসায়ীকে উদ্ধার করেছে সেনাবাহিনী। ইলেকট্রনিক পণ্য ফেরি করতে গিয়ে ওই ব্যবসায়ীরা অপহরণ ও নির্যাতনের শিকার হন। অভিযানে মাদক ও নির্যাতনের সরঞ্জাম উদ্ধারসহ মূল অভিযুক্ত ইসতিয়াক আহমেদ শান্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

জানা গেছে, গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বড়ফা গ্রামের রাজীব সরদার, হৃদয় সরদার, বাবু শেখ, ওসমান শেখ এবং রিয়াদ ইসলাম নামের পাঁচ ব্যবসায়ী গত ২১ মে মাগুরায় পণ্য বিক্রির উদ্দেশ্যে আসেন। 

এরপর স্থানীয় ইসতিয়াক আহমেদ শান্ত কৌশলে তাদের সাজিয়াড়া এলাকার একটি পরিত্যক্ত ছাত্রাবাসে নিয়ে গিয়ে জিম্মি করে রাখে। মুক্তিপণ হিসেবে দাবি করা হয় ১০ লাখ টাকা।

অর্থ না পেয়ে শান্ত ও তার আরও ৭-৮ সহযোগী মিলে ব্যবসায়ীদের শারীরিকভাবে নির্যাতন করতে থাকে। নির্যাতনের সময় চিৎকার যেন বাইরের কেউ না শুনতে পায়, সেজন্য ছাত্রাবাসে উচ্চ শব্দে সাউন্ড সিস্টেম চালানো হতো।

বুধবার রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মাগুরা সেনানিবাসের সেনা সদস্যরা ওই ছাত্রাবাসে অভিযান চালিয়ে রাত ১০টার দিকে ব্যবসায়ীদের উদ্ধার করে। অভিযানে ইসতিয়াক আহমেদ শান্তকে গ্রেপ্তার করা হয়।

আটক শান্ত মাগুরা পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক তানজেল হোসেনের বড় ভাই রফিকুল ইসলামের ছেলে।

স্থানীয়রা জানান, সাজিয়াড়ার এসএম ছাত্রাবাসটি প্রবাসী মহসিনের মালিকানাধীন হলেও দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত ছিল। কয়েক মাস আগে ইসতিয়াক এটি দখলে নিয়ে সেখানে মাদক ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড শুরু করে। ছাত্রাবাসের প্রতিটি কক্ষে তালা ঝুলিয়ে সেটিকে টর্চার সেলে পরিণত করা হয়।

অভিযানকালে সেনাবাহিনী একটি চাইনিজ চাপাতি, একটি দেশীয় চাপাতি, দুটি গাঁজা সেবনের কল্কি, সাতটি ইয়াবা সেবনের স্টিক, একটি হুক্কা, একটি রোল ফয়েল পেপার, ছয়টি মোবাইল ফোন, পাঁচটি চুলা, দুটি প্রেসার কুকার, দুটি সাউন্ড বক্স, দুটি ফ্যান, দুটি ডিনার সেট, চারটি হটপট, দুটি ইন্ডাকশন কুকার ও একটি ফিল্টার জব্দ করে। পরবর্তীতে জিম্মিদের উদ্ধার এবং আলামতসহ ইসতিয়াককে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

মাগুরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আইয়ুব আলী বলেন, “এ ঘটনায় আরও কয়েকজনের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। প্রাথমিকভাবে অপহরণ ও মুক্তিপণ দাবির অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে।”

ঘটনার পর এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়রা পরিত্যক্ত ভবনগুলোর নিরাপত্তা জোরদার এবং প্রশাসনের নজরদারি বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন।

ইএইচ