নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার চলনবিল অধ্যুষিত এলাকায় এখন বোরো ধান কাটার মৌসুম। ধান গোলায় তোলার কাজে কৃষক-কৃষাণীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। প্রচণ্ড তাপদাহ উপেক্ষা করে কৃষি শ্রমিকরা সকাল থেকেই মাঠে কাজ করছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর গুরুদাসপুরে মোট ৪,৪৩০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩২,০২৮ মেট্রিক টন। এর মধ্যে ইতোমধ্যে ৩,৩৫০ হেক্টর জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে এবং প্রায় ২৪,৪৫৭ মেট্রিক টন ধান কৃষকের গোলায় উঠেছে।
গত বছর উপজেলায় ৫,৬১০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়েছিল এবং উৎপাদন হয়েছিল ৪০,৭২৮ মেট্রিক টন। সে তুলনায় এবছর আবাদ কমেছে ১,১৮০ হেক্টর এবং উৎপাদন কমেছে প্রায় ৮,৭০০ মেট্রিক টন।
চলনবিলের বিলশা গ্রামের কৃষক গোলাম মোস্তফা বলেন, “এবছর ধানের পাশাপাশি কিছু ভুট্টাও চাষ করেছি। ফলন ভালো হয়েছে। কিছু ফসল ঘরে তুলেছি, বাকিটা মাঠে রয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে লাভবান হবো।”
খুবজিপুরের বামনবাড়িয়া গ্রামের কৃষি শ্রমিক আব্দুল কুদ্দুস বলেন, “ভোর ৫টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ধান কাটার কাজ করি। পরে মাথায় করে কৃষকের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে মাড়াই করে মেপে বুঝিয়ে দিই। প্রতি মণে সাড়ে ৬ কেজি করে ধান পাই, এতে আমাদের ভাগে প্রায় ১৫-২০ কেজি ধান আসে। রোদের কষ্ট হলেও এই কাজে আনন্দ পাই।”
এক কৃষাণী জানান, “ধান কাটা শুরু হলে সেটি পরিষ্কার করে শুকিয়ে গোলায় তুলতে আমাদের দিনভর ব্যস্ত থাকতে হয়। তবে এতে আনন্দও থাকে।”
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হারুনর রশীদ বলেন, “বোরো আবাদ কিছুটা কম হলেও ফলন ভালো হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবং বাজারে যেভাবে ধানের দাম রয়েছে, তাতে কৃষকরা লাভবান হবেন। এবছর লাভজনক ভুট্টা ও রসুন চাষ বেড়েছে, ফলে ধান চাষে কিছুটা ভাটা পড়েছে। তবে বিগত পাঁচ বছরে ১,৫১০ হেক্টর জমি পুকুর খননের জন্য হারালেও এবছর নতুন করে কোনো ফসলি জমিতে পুকুর খনন হয়নি, যা একটি ইতিবাচক দিক।”
তিনি আরও বলেন, “এটি সম্ভব হয়েছে সাবেক ইউএনও সালমা আক্তার এবং বর্তমান ইউএনও ফাহমিদা আফরোজের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে।”
গুরুদাসপুরের কৃষিজীবী জনগোষ্ঠীর কঠোর পরিশ্রম এবং অনুকূল আবহাওয়ার কারণে চলতি বোরো মৌসুমে ভালো ফলনের আশায় আশাবাদী স্থানীয়রা।
ইএইচ