ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় টানা বৃষ্টি ও ভারতের পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় পরিস্থিতির কিছুটা অবনতি হয়েছে। নতুন করে প্লাবিত হয়েছে বেশ কয়েকটি গ্রাম। তলিয়ে গেছে গ্রামীণ সড়ক, কৃষিজমি, পুকুর ও জলাশয়।
আখাউড়া স্থলবন্দরের শুল্ক অফিস এবং ইমিগ্রেশন অফিসসংলগ্ন চত্বরে পানি ঢুকে পড়েছে।
এছাড়া স্থলবন্দরের নিকটবর্তী আখাউড়া-আগরতলা আন্তর্জাতিক সড়কের প্রায় ১০০ মিটারজুড়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এ অবস্থায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছে অন্তত ৪৫০ পরিবার।
পানিবন্দী মানুষদের জন্য উপজেলা প্রশাসন ১১টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু করেছে। এখন পর্যন্ত ১৩টি পরিবারের প্রায় ৫০ জন এসব আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় পানির উচ্চতা ৩৬ সেন্টিমিটার কমেছে।
রোববার বিকেলে সীমান্তঘেঁষা উপজেলার ৩টি ইউনিয়নের অন্তত ৮–১০টি গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। হঠাৎ পানি বৃদ্ধিতে সৃষ্ট বন্যায় মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার দক্ষিণ ইউনিয়নের কালিকাপুর, আব্দুল্লাহপুর, রহিমপুর, বঙ্গেরচর, বীরচন্দ্রপুর, সাহেবনগর; মোগড়া ইউনিয়নের আওড়ারচর, সেনারবাদী, ধাতুরপহেলা, বাউতলা, উমেদপুর, আদমপুর, রাজেন্দ্রপুর, ছয়গড়িয়া, জয়নগর, খলাপাড়া; এবং মনিয়ন্দ ইউনিয়নের ইটনা, আইড়লসহ অন্তত ১৮–১৯টি গ্রামের নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করেছে। এতে এসব এলাকার চার শতাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে এবং গ্রামীণ সড়ক প্লাবিত হওয়ায় যাতায়াতে বিঘ্ন ঘটছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, আকস্মিক বন্যায় ৬১ হেক্টর কৃষিজমি পানিতে তলিয়ে গেছে। এর মধ্যে রয়েছে আউশ ধানের চারা, শাকসবজি, আদা, হলুদ এবং পুষ্টি বাগান।
আখাউড়া স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি নেছার উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, “হঠাৎ বন্যায় বন্দরের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে কিছুটা বিঘ্ন ঘটছে। সিএন্ডএফ অফিসে পানি ঢুকে গেছে, কাজ করতে সমস্যা হচ্ছে। তবুও বিকল্প উপায়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। পানি আরও বাড়লে বন্দর কার্যক্রম চালু রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।”
মোগড়া ইউনিয়ন প্রশাসক ও উপজেলা সহকারী প্রোগ্রামার প্রকৌশলী মো. শামিম আলম বলেন, “মোগড়া ইউনিয়নের ৯টি গ্রামে পানি প্রবেশ করেছে। আমরা তাদের খোঁজখবর রাখছি।”
আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জি. এম. রাশেদুল ইসলাম বলেন, “সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ১৮–১৯টি গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে এবং প্রায় ৪৫০ পরিবার পানিবন্দী রয়েছে। ১১টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু করা হয়েছে, যেখানে এখন পর্যন্ত ৫০ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। তাদেরকে চাল, ডাল, মসলা, মুড়িসহ শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে। আমরা সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।”
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মনজুর রহমান বলেন, “গত ২৪ ঘণ্টায় পানি ৩৬ সেন্টিমিটার কমেছে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।”
আখাউড়া স্থলবন্দরের সহকারী পরিচালক (ট্রাফিক) মাহমুদুল হাসান বলেন, “বন্যার মধ্যেও বন্দরের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম এখনো স্বাভাবিক রয়েছে। সোমবার সকালে ৬টি ট্রাকে প্রায় ২৫ মেট্রিক টন মাছ ভারতে রপ্তানি হয়েছে।”
ইএইচ