আসন্ন ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে নাটোরে জমে উঠেছে কোরবানির পশুর হাট। মালা পরানো রঙ-বেরঙের গরু-ছাগল নিয়ে প্রতিদিন হাটে ভিড় করছেন খামারি ও বিক্রেতারা।
জেলার আশপাশের এলাকা থেকে নছিমন, ভটভটি, ভ্যানগাড়িতে করে বিভিন্ন জাতের ছোট, মাঝারি ও বড় গরু-ছাগল আনা হচ্ছে হাটে।
ঐতিহ্যবাহী তেবাড়িয়া, সিংড়া ও মৌখড়া হাট ছাড়াও গড়ে উঠেছে আরও কয়েকটি বড় হাট। এর মধ্যে করোটা, ডাঙ্গাপাড়া, গুনাইখাড়া, গোপালপুর, দয়ারামপুর, মালঞ্চি ও জোনাইল অন্যতম।
ঈদের আগের দিন পর্যন্ত এসব হাটে প্রতিদিন থাকছে ব্যাপারী, খামারি এবং স্থানীয় ক্রেতা-বিক্রেতাদের কোলাহল।
তবে এক সময়ের জমজমাট তেবাড়িয়া হাটে বর্তমানে কোরবানির পশুর সমাহার অনেকটা কমে গেছে। গরু কিনতে আসা মামুন, দবিরুল ও আফসারসহ অনেকে অভিযোগ করে বলেন, “তেবাড়িয়া হাটে এখন দালালদের দৌরাত্ম্য চরমে। একটি গরুর সঙ্গে ৪-৫ জন দালাল ঘিরে থাকে। ফলে দামও বেশি পড়ে যায়। হাটে গরু যত্রতত্র দাঁড় করিয়ে রাখা হয়, নেই সুশৃঙ্খল বাঁশের সারি। গোবর ও কাদায় হাটে চলাফেরা করা কঠিন হয়ে পড়ে। তাছাড়া খাজনাও বেশি দিতে হয়।”
এই অব্যবস্থাপনার কারণে অনেকেই এখন সিংড়া, মৌখড়া, করোটা, গোবিন্দপুর ও ডাঙ্গাপাড়ার মতো হাটগুলোতে যাচ্ছেন। এসব হাটে গরুর সরবরাহ ও পরিবেশ অপেক্ষাকৃত ভালো বলে ক্রেতারা জানিয়েছেন। বড় জাতের গরুর দাম তুলনামূলকভাবে কম থাকলেও ছোট ও মাঝারি গরুর দাম কিছুটা চড়া। তবে এবার ভারতীয় গরুর তুলনায় দেশি জাতের গরুর সরবরাহ বেশি।
ক্রেতাদের ভাষ্য, ভারতীয় গরু আমদানির সুযোগ না থাকায় দেশি গরু-ছাগল পালনে উৎসাহিত হয়েছেন গৃহস্থরা। ফলে দেশীয় খামারিরাই এখন চাহিদা পূরণ করছেন।
জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের তথ্যমতে, এবছর নাটোরে কোরবানিযোগ্য মোট পশু রয়েছে ৫ লাখ ১৪ হাজার ২১৫টি। এর মধ্যে গরু ১ লাখ ১৮ হাজার ৩১৭টি, মহিষ ৭ হাজার ৯২৮টি, ছাগল ৩ লাখ ৪৯ হাজার ৪৮৭টি, ভেড়া ৩৮ হাজার ৪৫১টি এবং দুম্বা ৩২টি। জেলার চাহিদা প্রায় ২ লাখ ৭৩ হাজার ২০৫টি পশু, ফলে উদ্বৃত্ত প্রায় ২ লাখ ৪১ হাজার পশু দেশের অন্যান্য জেলায় রপ্তানি হবে।
খামারিরা এবার রাসায়নিক ওষুধ ব্যবহার না করে নিরাপদ উপায়ে পশু মোটাতাজা করেছেন। জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ জানায়, এ লক্ষ্যে ১ হাজার ৯৫ জন খামারিকে উন্নত প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ১১৪টি উঠান বৈঠক, এবং প্রায় ৫ হাজার লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে পশু ব্যবস্থাপনা, পরিবহন ও নিরাপদ লেনদেন সংক্রান্ত সচেতনতায়।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জুলফিকার মো. আখতার হোসেন বলেন, “জেলায় প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার কোরবানির পশু প্রস্তুত রয়েছে। প্রতিটি হাটেই সার্বক্ষণিক মেডিকেল টিম ও ভেটেরিনারি ক্যাম্প থাকবে। কোনো পশু অসুস্থ হলে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দেওয়া হবে। এবার নাটোরে লাম্পি স্কিন রোগের কোনো প্রাদুর্ভাব নেই।”
ইএইচ