মাগুরায় বাজার ব্যবস্থাপনায় আধুনিকতার ছোঁয়া

মাগুরা প্রতিনিধি প্রকাশিত: জুন ৩, ২০২৫, ০৩:৫৩ পিএম
মাগুরায় বাজার ব্যবস্থাপনায় আধুনিকতার ছোঁয়া
  • চালু হলো ডিজিটাল ওজন যন্ত্র
  • সিসিটিভি ক্যামেরায় নজরদারি

বাজার ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মাগুরা পৌরসভা চালু করেছে ডিজিটাল ওজন যন্ত্র ও সিসিটিভি ক্যামেরা নজরদারি ব্যবস্থা। জেলার প্রধান বাজারগুলোতে এই প্রযুক্তি চালুর মাধ্যমে বাজার ব্যবস্থাপনায় যুক্ত হয়েছে এক নতুন মাত্রা।

পৌরসভার আওতাধীন নতুন বাজার, পুরাতন বাজার, ঢাকা রোড, ভায়না মোড়, পুলিশ লাইন, ইটখোলা ও পারনান্দয়ালী বৌবাজারে ইতোমধ্যে ডিজিটাল ওজন মেশিন ও উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন সম্পন্ন হয়েছে।

ডিজিটাল ওজন যন্ত্র: স্বচ্ছ লেনদেনের আশ্বাস

আগে কাঁচাবাজার, মাছ ও মাংসের দোকানে ম্যানুয়াল ওজনে অনিয়মের অভিযোগ ছিল নিয়মিত। এখন প্রতিটি বাজারে আধুনিক ডিজিটাল ওজন মেশিন বসানো হয়েছে, যা প্রতি ৫ গ্রাম পর্যন্ত নির্ভুল ওজন নির্ধারণে সক্ষম। এতে ঠকবাজির সুযোগ কমেছে।

মাগুরা পৌরসভার স্যানিটারি ইন্সপেক্টর কামরুজ্জামান বলেন, “ডিজিটাল ওজন ব্যবস্থায় প্রতারণা প্রায় শূন্যের কোঠায়। প্রতিদিন আমাদের মনিটরিং টিম বাজার তদারকি করছে।”

সিসিটিভি ক্যামেরা: নিরাপত্তা নিশ্চিতের অগ্রগামী উদ্যোগ

বাজারে জনসমাগম বেশি হওয়ায় চুরি, পকেটমারি ও বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা ছিল সবসময়। এসব অপরাধ প্রতিরোধে বাজারের ৪৫টি স্থানে বসানো হয়েছে হাই-রেজুলেশন সিসিটিভি ক্যামেরা। এসব ক্যামেরা সরাসরি পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের নিয়ন্ত্রণ কক্ষে সংযুক্ত।

মাগুরা সদর থানার ওসি মো. আইয়ুব আলী জানান, “সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ইতোমধ্যে দুটি চুরির ঘটনা সমাধান করা হয়েছে। এতে অপরাধ প্রবণতা অনেকটাই কমে গেছে।”

আইনি কাঠামোর বাস্তবায়ন

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ অনুযায়ী প্রতিটি বিক্রেতার নির্ধারিত মূল্যে ও সঠিক পরিমাণে পণ্য বিক্রি বাধ্যতামূলক। মাগুরা পৌরসভার এই উদ্যোগ সেই আইনি কাঠামোর বাস্তব প্রয়োগে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মাগুরা জেলার সহকারী পরিচালক মো. সজল আহম্মেদ বলেন, “প্রযুক্তিনির্ভর এই স্বচ্ছতা ভোক্তার আস্থা ফেরাচ্ছে। আমরা নিয়মিত বাজার তদারকি করছি।”

ব্যবসায়ী ও ক্রেতার প্রতিক্রিয়া

প্রথমদিকে কিছু ব্যবসায়ী প্রযুক্তি ব্যবহারে অনীহা দেখালেও এখন তারা উপকারিতা বুঝে এগিয়ে আসছেন। কাঁচাবাজারের সবজি বিক্রেতা মো. রমজান আলী বলেন, “আগে ওজন নিয়ে সমস্যা হতো, এখন ক্রেতা-দোকানি দুই পক্ষই সন্তুষ্ট।”

মাংস বিক্রেতা মিলন হোসেন বলেন, “সিসিটিভির কারণে দোকানে বিশৃঙ্খলা বা ঝামেলা অনেকটাই কমেছে।”

গৃহবধূ রাশিদা বেগম বলেন, “ডিজিটাল ওজন ও ক্যামেরা থাকায় বাজারে এসে মনটা এখন অনেক বেশি নিশ্চিন্ত।”

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী আফজাল হোসেন বলেন, “এটা আধুনিক বাজার ব্যবস্থার একটা ভালো দৃষ্টান্ত।”

চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

তবে বিদ্যুৎবিভ্রাটে ডিজিটাল মেশিন অচল হওয়া, দক্ষ জনবলের অভাব এবং সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও একটি চ্যালেঞ্জ।

মাগুরা পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান বারী জানান, “আমরা সোলার ব্যাকআপ ও আধুনিক সার্ভেইলেন্স টিম গঠনের উদ্যোগ নিচ্ছি। ভবিষ্যতে ‘স্মার্ট মার্কেট অ্যাপ’ চালুর পরিকল্পনাও রয়েছে।”

পৌর প্রশাসক মো. আব্দুল কাদের বলেন, “এই উদ্যোগ সফল হলে পৌরসভার সব হাট-বাজারে প্রযুক্তির ছোঁয়া পৌঁছে দেওয়া হবে। মাগুরাকে দেশের একটি মডেল স্মার্ট শহরে পরিণত করাই আমাদের লক্ষ্য।”

ইএইচ