মাগুরা মসলা গবেষণা কেন্দ্রে কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ

মিরাজ আহমেদ, মাগুরা প্রকাশিত: জুন ১৪, ২০২৫, ০৩:০৫ পিএম
মাগুরা মসলা গবেষণা কেন্দ্রে কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ

মাগুরা আঞ্চলিক মসলা গবেষণা কেন্দ্রে দীর্ঘ এক যুগ ধরে ‘বৈজ্ঞানিক সহকারী (হিসাব বিভাগ)’ পদে কর্মরত অগ্নি কুমার সিকদারের বিরুদ্ধে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং অস্বাভাবিক সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠেছে। কোটি টাকার প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ, রাজনৈতিক আশ্রয়ে দপ্তরের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা এবং বছরের পর বছর জবাবদিহিতার বাইরে থেকে দুর্নীতি চালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

সূত্র জানায়, বিভিন্ন প্রকল্পের বরাদ্দ থেকে সরঞ্জাম, নির্মাণ, সরবরাহ ও প্রশিক্ষণ খাতে ভুয়া বিল-ভাউচার তৈরি করে দীর্ঘদিন ধরে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন অগ্নি কুমার। 

একটি অভ্যন্তরীণ নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, শুধু ২০২২-২৩ অর্থবছরে মরিচ ও আদা গবেষণা খাতে প্রায় ৪২ লাখ টাকার ব্যয়ের কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

গবেষণা কেন্দ্রে কর্মরত কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, “সব সিদ্ধান্ত তিনিই নেন। অনুমোদন, বিল ছাড়—সবই চলে তার নির্দেশে। কেউ আপত্তি তুললেই বদলির হুমকি দেওয়া হয়।”

অগ্নি কুমার সিকদার মাগুরা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ কুন্ডুর ঘনিষ্ঠ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেন। তার রাজনৈতিক প্রভাবের জোরেই তিনি একাধিক প্রশাসনিক সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে দীর্ঘদিন একই কর্মস্থলে থেকে দপ্তরের বাজেট, প্রকল্প, ক্রয় ও নিয়োগসহ সব ক্ষেত্রেই নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, অগ্নি কুমারের স্ত্রী বর্তমানে শহরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা হিসেবে কর্মরত। নিয়োগে ঘুষ ও তদবিরের বিষয়টি তখন ছিল প্রকাশ্য আলোচনায়। এ ছাড়া শহরের শাহাপাড়ায় নির্মিত অগ্নি কুমারের দুইতলা ভবনের বাজারমূল্য দুই কোটির বেশি, যা তার প্রকৃত আয় ও পদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

এক প্রতিবেশী বলেন, “একজন বৈজ্ঞানিক সহকারী হয়ে এত সম্পদ কীভাবে অর্জন করলেন, তা আজও আমাদের বোধগম্য নয়।”

অগ্নি কুমার ও তার পরিবারের নামে শহরসহ আশপাশের এলাকায় একাধিক জমি ও ফ্ল্যাট রয়েছে। ব্যাংক হিসাবেও মোটা অঙ্কের লেনদেন রয়েছে বলে জানা গেছে। জেলা 

প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা বলেন, “প্রাথমিকভাবে যে সম্পদের বিবরণ পাওয়া গেছে, তা তার বেতন কাঠামোর সঙ্গে কোনোভাবেই মেলে না। তদন্ত ছাড়া উপায় নেই।”

এ ঘটনায় বিভাগীয় তদন্ত শুরুর দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় সচেতন নাগরিক সমাজ ও দুর্নীতিবিরোধী সংগঠনগুলো। 

মাগুরা নাগরিক ফোরামের সভাপতি বলেন, “এমন একজন ব্যক্তি সরকারে থেকে জনগণের অর্থ লোপাট করছে—এটা মেনে নেওয়া যায় না। আমরা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) হস্তক্ষেপ, বিভাগীয় ব্যবস্থা ও ফৌজদারি মামলা দাবি করছি।”

যোগাযোগ করা হলে অভিযুক্ত অগ্নি কুমার সিকদার বলেন, “সব অভিযোগ ভিত্তিহীন ও ষড়যন্ত্রমূলক। কিছু লোক আমার সুনাম নষ্ট করতে চায়।”

তবে গবেষণা কেন্দ্রের নথিপত্র, ব্যয়ের চিত্র ও সংশ্লিষ্টদের সাক্ষ্য বলছে ভিন্ন কথা। ইতোমধ্যে কয়েকটি ভুয়া ভাউচার যাচাইয়ের জন্য তদন্ত কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে।

উল্লেখ্য, প্রশাসনের ভেতরে দীর্ঘদিন থেকে গেলে কিভাবে একজন কর্মকর্তা পুরো দপ্তরকে ব্যক্তিগত নিয়ন্ত্রণে নিতে পারে—তার ভয়াবহ দৃষ্টান্ত অগ্নি কুমার সিকদার। এসব ঘটনা প্রমাণ করে, সুশাসন প্রতিষ্ঠায় শুধু বদলি নয়, দুর্নীতিবাজদের চাকরিচ্যুতি ও কঠোর বিচারই হতে পারে স্থায়ী সমাধান।

ইএইচ