অভয়নগরে হাত বাড়ালেই মিলছে মাদক, অভিযানের পরও বেপরোয়া কারবারিরা

অভয়নগর (যশোর) প্রতিনিধি প্রকাশিত: জুলাই ৩, ২০২৫, ০৬:৪৭ পিএম
অভয়নগরে হাত বাড়ালেই মিলছে মাদক, অভিযানের পরও বেপরোয়া কারবারিরা

যশোরের অভয়নগরে সেনা ও পুলিশের যৌথ অভিযানের পরও মাদকের করাল গ্রাস থেকে মুক্ত হয়নি জনপদ। বরং কিছু এলাকার মাদক কারবারিরা আগের চেয়েও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। 

অভিযোগ রয়েছে, এরা রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকা প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ছত্রছায়া এবং কিছু অসাধু পুলিশ সদস্যের সহযোগিতায় এই অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, উপজেলার আটটি ইউনিয়ন ও নওয়াপাড়া পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের পাড়া-মহল্লায় মাদকের ভয়াবহ বিস্তার ঘটেছে। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে তরুণ-তরুণীরা পর্যন্ত এই মরণ নেশায় জড়িয়ে পড়ছে। আটক মাদক ব্যবসায়ীরা জামিনে মুক্ত হয়ে পুনরায় এই কারবারে জড়িয়ে পড়ছে। জানা গেছে, কিছু পুলিশ সদস্য ও প্রভাবশালী ব্যক্তি তাদের পুনরায় মাদক ব্যবসায় নামতে বাধ্য করছেন। কেউ এতে রাজি না হলে সাপ্তাহিক বা মাসিক চাঁদা দিতে হয়, অন্যথায় মিথ্যা মামলায় হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।

সম্প্রতি কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত হওয়া এক মাদক কারবারি সরোয়ার হোসেন (ছদ্মনাম) জানান, বেনাপোলের পর নওয়াপাড়া মাদক সরবরাহের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। নওয়াপাড়ার কিছু প্রভাবশালীর মাধ্যমে মাদকের বড় বড় চালান দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় পাঠানো হয়। কারণ, এ শহরে রেল, নৌ ও সড়কপথের সুবিধাজনক অবস্থান রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কলেজছাত্র জানান, অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় এক বন্ধুর মাধ্যমে তিনি মাদক সেবন শুরু করেন। নওয়াপাড়া বাজারের গরুহাটা, বৌবাজার, প্রফেসরপাড়া ও শাহীমোড় এলাকা থেকে তিনি মাদক সংগ্রহ করতেন। বিকাশে অর্থ পাঠানোর পর নির্ধারিত স্থানে গিয়ে কাঙ্ক্ষিত মাদক সংগ্রহ করা যেত।

এ বিষয়ে স্থানীয় অভিভাবক আব্দুল্লাহ রানা মুহিত বলেন, “নওয়াপাড়ায় হাত বাড়ালেই মাদক মেলে।” তিনি জানান, কলেজে পড়ুয়া তার দুই সন্তান মাদকাসক্ত হয়ে পড়ায় তাদের রিহ্যাবে পাঠাতে বাধ্য হয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেন, সেনাবাহিনী ও পুলিশের মাদকবিরোধী অভিযানের মধ্যেও প্রকৃত মাদক কারবারিরা রয়ে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।

এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে অভয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল আলিম বলেন, “মাদক কারবারিরা কৌশল পরিবর্তন করে মাদক সরবরাহ করছে। তবে তারা যত কৌশলই অবলম্বন করুক, মাদক নির্মূলে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। এছাড়া পুলিশের কেউ মাদকের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে দাপ্তরিক ও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

স্থানীয়রা জানান, মাদকবিরোধী অভিযান কেবল লোক দেখানো না হয়ে প্রকৃত কারবারিদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির মাধ্যমে কার্যকর হলেই অভয়নগর মুক্ত হতে পারে এই মরণ নেশার ভয়াবহতা থেকে।

ইএইচ