গরু চুরির আতঙ্কে সালথা উপজেলার মানুষ

সালথা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি প্রকাশিত: জুলাই ৮, ২০২৫, ০৩:৪৩ পিএম
গরু চুরির আতঙ্কে সালথা উপজেলার মানুষ

ফরিদপুরের সালথা উপজেলায় গরু চুরির ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে। বিশেষ করে উপজেলার বল্লভদী ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে রাতের আঁধারে সংঘবদ্ধ চোরচক্রের তাণ্ডবে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন স্থানীয় কৃষক ও খামারিরা। একের পর এক গরু চুরির ঘটনায় জনমনে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।

স্থানীয়দের দাবি, গত এক সপ্তাহেই শুধু চণ্ডীবরদী গ্রাম থেকে ৬টি গরু চুরি হয়েছে। 

সর্বশেষ সোমবার (৮ জুলাই) রাতে ওই গ্রামের সেলিম শেখের গোয়ালঘর থেকে তিনটি গরু চুরি হয়। 

কান্নাজড়িত কণ্ঠে সেলিম শেখ বলেন, “এই গরুর দুধ বিক্রি করেই সংসার চলত। সারাজীবনের জমানো টাকায় কেনা তিনটি গরু চুরি করে চোরেরা আমাকে পথে বসিয়ে দিয়েছে। এখন আমি কী করব?”

এর আগেও একই ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে একাধিক গরু চুরির ঘটনা ঘটেছে। ভুক্তভোগী মিলন চৌকিদার বলেন, “কিছুদিন আগে আমার তিনটি গরু চুরি হয়। সেই গরুগুলোর উপরই আমার পরিবারের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছিল। এখন আমি নিঃস্ব।”

চণ্ডীবরদী গ্রামের শাজাহান সরদার, পিলি মুন্সি এবং চরবল্লভদী গ্রামের হাসেম মোল্লার গরু চুরির কথাও উঠে এসেছে স্থানীয়দের ভাষ্যে। বারবার গরু চুরির ঘটনায় অতিষ্ঠ হয়ে অনেকে গরু পালন বন্ধ করে দিয়েছেন। খালিশা বল্লভদী গ্রামের কোবাদ মোল্লা বলেন, “আমার দুটি গরু চুরি হওয়ার পর থেকে গরু পালা ছেড়ে দিয়েছি। এত কষ্ট করে বড় করে যখন চোরেরা নিয়ে যায়, তখন আর কোনো উৎসাহ থাকে না।”

এলাকাবাসীর অভিযোগ, পুলিশের টহল কম থাকায় চোরেরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। চণ্ডীবরদী গ্রামের শাজাহান শরিফ বলেন, “এলাকাটি ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পাশে হওয়ায় চোরেরা পিকআপ ভ্যানে করে সহজেই পালিয়ে যেতে পারে। এরা কোনো ছিঁচকে চোর নয়, বরং একটি সংঘবদ্ধ চক্র।”

উত্তর চণ্ডীবরদী গ্রামের মুদি দোকানদার মহিনুর শিকদার বলেন, “একজন কৃষক গরুকে সন্তানের মতো লালন-পালন করেন। গরু চুরি হলে সেই কষ্ট সন্তান হারানোর মতোই।” তিনি চুরি রোধে প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের আরও সক্রিয় ভূমিকার আহ্বান জানান। সেইসাথে চণ্ডীবরদী স্ট্যান্ড, চরবল্লভদী মোড় ও বাউশখালির মতো গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পাহারা জোরদার এবং চণ্ডীবরদীতে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের দাবি জানান।

এ বিষয়ে সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আতাউর রহমান বলেন, “গত রাতের চুরির বিষয়ে এখনো কোনো অভিযোগ পাইনি। তবে অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মিলন চৌকিদারের গরু চুরির ঘটনায় একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি, পুলিশ সেটি নিয়ে কাজ করছে। আমরা সর্বদা তৎপর এবং ইনশাআল্লাহ খুব শিগগিরই চোরদের শনাক্ত করতে পারব।”

ইএইচ