মাগুরা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অফিসে ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে চাকরি নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক উপ-সহকারী পরিচালকসহ দুই কর্মচারীর বিরুদ্ধে।
বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর স্থানীয়দের মাঝে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন সচেতন এলাকাবাসী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাগুরা ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক মো. আলী সাজ্জাদ চাকরি গ্রহণের সময় ঠিকানা দিয়েছেন ঝিনাইদহ জেলার একটি ভুয়া ঠিকানা। অথচ তিনি প্রকৃতপক্ষে মাগুরার মোহাম্মদপুর উপজেলার আউনাড়া গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা। তার বাবা মো. দবির মাস্টার ছিলেন আউনাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক।
অভিযোগ রয়েছে, চাকরি পাওয়ার পর ভুয়া ঠিকানা প্রমাণ হিসেবে তিনি ঝিনাইদহে জমি ও বাড়ি ক্রয় করলেও স্থানীয় সার্ভার স্টেশনে তার কোনো স্থায়ী ঠিকানার অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
আলী সাজ্জাদের বিরুদ্ধে সরকারি গাড়ির অপব্যবহার, ঘুষ গ্রহণ ও প্রশাসনিক অনিয়মের অভিযোগও উঠেছে। জানা গেছে, অফিসে ব্যবহৃত ‘ফায়ার অ্যান্ড রেসকিউ’ (ফোটন) গাড়িটি অধিকাংশ সময় তিনি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ঘুষ ছাড়া তিনি কোনো দাপ্তরিক কাগজে স্বাক্ষর করেন না। এছাড়াও, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র (ফায়ার এক্সটিংগুইশার) বিক্রির নামে ভয়ভীতি দেখিয়ে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগও রয়েছে।
এছাড়া, মাগুরা ফায়ার সার্ভিসের ফায়ার ফাইটার মো. আলী হাসান (পিআইএন: ৭০৯৬/৫০১৭৯৯) নিয়োগের সময় স্থায়ী ঠিকানা দেখিয়েছেন ভোলা জেলার লালমোহনের বাদারপুর গ্রাম। কিন্তু অনুসন্ধানে জানা গেছে, তার প্রকৃত ঠিকানা মাগুরার শালিখা উপজেলার পুলুম মধুখালী গ্রামে। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে দেখানো হয় খাটর রামারন্দকাটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস, কিন্তু উক্ত বিদ্যালয়ে তার নামে কোনো রেকর্ড পাওয়া যায়নি। স্থানীয় ব্যবসায়ী, যেমন নিউ বেতার, জ্যোতি টেলিভিশন, মুদি দোকানি কামাল ও সার ব্যবসায়ী টিপু সুলতান গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, আলী হাসান বাজারমূল্যের চার গুণ দামে ফায়ার এক্সটিংগুইশার বিক্রি করেছেন।
এছাড়াও, ফায়ার সার্ভিসের লিডার পদে কর্মরত আলেফ মোল্লা চাকরির সময় ঠিকানা দিয়েছেন শৈলকূপা, ঝিনাইদহ। অথচ তিনি প্রকৃতপক্ষে মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার দারিয়াপুর গ্রামের বাসিন্দা।
বিষয়টি নিয়ে উপ-সহকারী পরিচালক মো. আলী সাজ্জাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “ফায়ার সার্ভিসে নিজ জেলায় চাকরি করা যায়। সাংবাদিকরা যা লেখে, তাতে কিছু যায় আসে না।”
তবে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল ৮ জুলাই দুপুরে সাংবাদিকদের বলেন, “মাগুরার বিষয়টি আমরা অবগত হয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
জনগণের অর্থে পরিচালিত একটি গুরুত্বপূর্ণ সেবাপ্রতিষ্ঠানে এ ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে আস্থার সংকট তৈরি করছে বলে মত দিয়েছেন স্থানীয় সচেতন নাগরিকরা।
ইএইচ