ঢাকার মিটফোর্ড এলাকায় চাঁদা না দেওয়ায় নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ (৩৯) নামের এক ব্যবসায়ীকে। পাষাণের মতো পাথর দিয়ে আঘাত করে কেড়ে নেওয়া হয় একজন স্বামী, একজন বাবা, একজন ছেলের জীবন।
শনিবার (১২ জুলাই) বরগুনা সদরের ঢলুয়া ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামে নিজ মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হয় সোহাগকে। সকাল থেকে সেখানে কান্না আর শোকের ছায়া নেমে আসে।
নিহতের ১০ বছরের ছেলে সোহান ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে বলে, আমরা এখন এতিম হয়ে গেছি। বাবাকে মেরে ফেলেছে ওরা। আমরা কোথায় গিয়ে দাঁড়াব?
১৪ বছরের মেয়ে সোহানা জানায়, আমরা চাই, যারা বাবাকে মেরেছে, তারা যেন শাস্তি পায়।
স্ত্রী লাকি বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, চাঁদা না দিলেই কি মানুষকে পাথর দিয়ে মেরে ফেলা যায়? ওরা প্রতি মাসে দুই লাখ টাকা চেয়েছিল। আমার স্বামী রাজি হয়নি বলেই ওদের রাগ হয়। এরপরই ওকে ডেকে নিয়ে হত্যা করে।
পরিবারের দাবি, গত কয়েক মাস ধরে একটি সন্ত্রাসী চক্র সোহাগের দোকান থেকে নিয়মিত চাঁদা দাবি করছিল। রাজি না হওয়ায় তাঁর দোকানে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। বুধবার বিকেলে তাঁকে বাসা থেকে ডেকে নেওয়া হয়। ফিরে আসেননি আর।
সোহাগের বোন ফাতেমা বেগম বলেন, ভাই ১৫ বছর ধরে ব্যবসা করছিল। ব্যবসা দখলের পাঁয়তারা করছিল তারা। শেষ পর্যন্ত নির্মমভাবে হত্যা করল। এভাবে কেউ পশুকেও মারে না।
নিহতের মামা মন্টু মিয়া বলেন, ও অনেক ভালো ছেলে ছিল। শুধু আমাদের নয়, বরগুনার মানুষের মনেও কষ্ট দিয়েছে তার মৃত্যু। আমরা খুনিদের ফাঁসি চাই।
সোহাগের জন্ম বরগুনার কাকচিড়া ইউনিয়নে হলেও বেড়ে ওঠা ঢাকায়। মাত্র সাত মাস বয়সে বাবাকে হারান বজ্রপাতে। মা আলেয়া বেগম ঢাকায় এসে সন্তানদের মানুষ করেন। সোহাগ ঢাকার মিটফোর্ড এলাকায় ‘মেসার্স সোহানা মেটাল’ নামে একটি ব্যবসা চালাতেন বহু বছর ধরে।
এই হত্যাকাণ্ডে পুরো এলাকাজুড়ে চলছে তীব্র প্রতিক্রিয়া। স্থানীয়রা বলছেন, সোহাগের মৃত্যু যেন শুধুই একটি ব্যক্তিগত ক্ষতি নয়—এটি পুরো দেশের শান্তিকামী মানুষের নিরাপত্তার ওপর সরাসরি আঘাত।
বিআরইউ