যশোরের অভয়নগরের ভবদহ অঞ্চলে টানা এক সপ্তাহের বৃষ্টিতে আবারও সৃষ্টি হয়েছে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে শত শত পরিবার। ভেসে গেছে অসংখ্য মৎস্যঘের, তলিয়ে গেছে আউশ ও আমন ধান, সবজি এবং মরিচ ক্ষেত। পানিপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি করছে অবৈধ নেট-পাটা, কারেন্ট জাল এবং কচুরিপানা, ফলে পানি নিষ্কাশনব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়েছে।
উপজেলা কৃষি ও মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলমান জলাবদ্ধতায় ভবদহ এলাকার প্রায় ১২৯ হেক্টর আবাদি জমি পানির নিচে চলে গেছে। এর মধ্যে ২৫ হেক্টর আউশ, ৪৫ হেক্টর আমন ধান, ৫৮ হেক্টর সবজি এবং ১ হেক্টর মরিচ ক্ষেত সম্পূর্ণ তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া উপজেলার পায়রা, চলিশিয়া, শ্রীধরপুর, সিদ্ধিপাশা ও প্রেমবাগ ইউনিয়নে ২৮৪টি মাছের ঘের (মোট ২২৫ হেক্টর) পানিতে ভেসে গেছে। তবে সংশ্লিষ্ট দুই দপ্তর এখনো আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির নির্দিষ্ট পরিমাণ জানাতে পারেননি।
সোমবার সরেজমিনে দেখা গেছে, ভবদহের ২১ ভেন্ট স্লুইসগেটে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রায় ৮টি পানিপাম্প দিয়ে পানি নিষ্কাশনের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। তবে শ্রীহরি ও টেকা নদী, আমডাঙ্গা ও অন্যান্য সরকারি খালে অবৈধ নেট-পাটা ও কারেন্ট জাল বসানো এবং বিপুল কচুরিপানার উপস্থিতির কারণে পানি চলাচলে মারাত্মক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে।
পায়রা, চলিশিয়া, সুন্দলী ও প্রেমবাগ ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রাম এবং নওয়াপাড়া পৌরসভার ৫ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের প্রায় ২০টি গ্রামে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে নিজের মাছ রক্ষায় ঘেরপাড়ে বালুর বস্তা ফেলে বাঁধ দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
ডুমুরতলা গ্রামের নবনিতা রানী বিশ্বাস ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমাদের ভবদহের জলাবদ্ধতার কোনো স্থায়ী সমাধান হবে কি? সরকার আসে, সরকার যায়, কিন্তু সমস্যার কোনো সমাধান হয় না।”
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মুশফিকুর রহমান বলেন, “টানা বৃষ্টির কারণে ভবদহ এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে শত শত পরিবার। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। নির্দেশনা পেলে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হবে।”
অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পার্থ প্রতিম শীল জানান, “নবনিযুক্ত হিসেবে বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখছি। পানিবন্দি পরিবারগুলোর মাঝে দ্রুত ত্রাণ সহায়তা পৌঁছাতে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি অবৈধ নেট-পাটা ও জাল অপসারণ এবং কচুরিপানা পরিষ্কারের কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড খাল সংস্কারের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “নদী, খাল ও বিলে যারা অবৈধভাবে নেট-পাটা ও জাল বসিয়ে পানি চলাচলে বাধা সৃষ্টি করেছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ইএইচ