রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা এখন এক চরম ভোগান্তির নাম হয়ে উঠেছে। চিকিৎসক সংকট, দীর্ঘ লাইনে রোগীদের অপেক্ষা এবং চাঁদাবাজির অভিযোগে থেমে থাকা ২৫০ শয্যার হাসপাতাল ভবনের নির্মাণকাজ—সব মিলিয়ে স্বাস্থ্যসেবা প্রায় ভেঙে পড়ার পথে।
সদর হাসপাতালের বহির্বিভাগ এখন যেন যুদ্ধক্ষেত্র। একশ শয্যার এই হাসপাতালে প্রতিদিন চিকিৎসা নিতে আসেন প্রায় ১২০০ থেকে ১৩০০ রোগী।
টিকিট কাটার জন্য দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াতে হয়; এরপর ডাক্তার দেখাতে আরও দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। এত অপেক্ষার পর দেখা মেলে মাত্র একজন চিকিৎসকের।
এই ভোগান্তির প্রধান কারণ চিকিৎসক সংকট। সিনিয়র কনসালটেন্ট থাকার কথা ১০ জন, অথচ কর্মরত আছেন মাত্র ২ জন। গাইনী, শিশু, চক্ষু, রেডিওলজি ও সার্জারিসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে কোনো চিকিৎসক নেই। চোখের চিকিৎসক না থাকায় চক্ষু সেবা ও ছানি অপারেশন মাসের পর মাস বন্ধ। রেডিওলজিস্ট না থাকায় গত আট মাস ধরে বন্ধ রয়েছে আলট্রাসনোগ্রাম সেবা। ফলে রোগীদের বেসরকারি ক্লিনিকে অতিরিক্ত টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে।
এই অব্যবস্থার সমাধানে বছর কয়েক আগে শুরু হয়েছিল সদর হাসপাতালকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করার প্রকল্প। সময়সীমা কয়েক দফা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয়েছিল ২০২৪ সালের জুন। কিন্তু এক বছর অতিবাহিত হলেও কাজ থমকে আছে লিফট বসানো ঘিরে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দাবি, সাত মাস আগে লিফট স্থাপনের কাজ শুরু হলে স্থানীয় কিছু চাঁদাবাজ বাধা দেয় এবং দামী যন্ত্রপাতি চুরি করে নিয়ে যায়। লিখিত অভিযোগ দিলেও গণপূর্ত বিভাগ বা প্রশাসন থেকে নেওয়া হয়নি কোনো কার্যকর ব্যবস্থা।
সম্প্রতি জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসে। এরপর পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করে। বর্তমানে কাজের স্থানে নেওয়া হয়েছে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা, এবং পুনরায় শুরু হয়েছে লিফট স্থাপনের কাজ।
একদিকে চিকিৎসক সংকটে জর্জরিত রোগীরা, অন্যদিকে চাঁদাবাজদের বাধায় থমকে থাকা কাঙ্ক্ষিত ২৫০ শয্যার হাসপাতাল ভবন—এই দুই দিক থেকে রাজবাড়ীর সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ দীর্ঘায়িত হচ্ছে। যতদিন না দ্রুত জনবল নিয়োগ ও নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়, ততদিন এই দুরবস্থা থেকে মুক্তির আশা দেখছেন না সংশ্লিষ্টরা।
ইএইচ