বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ: জনবল সংকটে অস্থিরতা ছাড়াই কার্যক্রম চলছে

সাপাহার (নওগাঁ) প্রতিনিধি প্রকাশিত: আগস্ট ১১, ২০২৫, ০৫:২৪ পিএম
বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ: জনবল সংকটে অস্থিরতা ছাড়াই কার্যক্রম চলছে

বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে প্রয়াত ড. মো. আসাদ উজ জামানের হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে এগিয়ে চলছে। বিএমডিএ-এর বর্তমান নির্বাহী পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. তরিকুল আলমের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠানটি কোন অস্থিরতা ছাড়াই কার্যক্রম পরিচালনা করছে। 

তবে সদ্য প্রয়াত ড. মো. আসাদ উজ জামানের মৃত্যুর কারণে চেয়ারম্যান পদটি শূন্য রয়েছে।

নওগাঁর সাপাহার উপজেলার শিতলডাঙ্গা গ্রামের আতাউর রহমান (৫৬) বলেন, বিএমডিএ উত্তরাঞ্চলের জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ। দেশের শস্যভাণ্ডার গড়ে ওঠায় বিএমডিএর ভূমিকা অনস্বীকার্য।

১৯৮৫ সালে বরেন্দ্র সমন্বিত এলাকা উন্নয়ন প্রকল্প (বিআইএডিপি) থেকে জনবল নিয়ে কার্যক্রম শুরু হয়। ১৯৯২ সালে নাম পরিবর্তন করে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ রাখা হয়। ২০১৮ সালে সংসদে বিএমডিএ অধ্যাদেশ পাশ হয়। রাজশাহী বিভাগের ১৬টি জেলা (বর্তমানে রংপুর বিভাগ গঠনের পর ৮ জেলা) এবং মোট ১৩৫টি উপজেলা এলাকায় গভীর নলকূপ স্থাপন, বনায়ন, সেচনালা নির্মাণ, খাল খনন ও গ্রামীণ সড়ক নির্মাণসহ নানা প্রকল্পের মাধ্যমে বিএমডিএর কার্যক্রম চলছে। এর ফলে উত্তরাঞ্চল খাদ্যশস্য উৎপাদনে উদ্বৃত্ত অঞ্চলে পরিণত হয়েছে এবং ব্যাপক সবুজায়ন ঘটেছে।

২০২৪-২৫ অর্থবছরে বিএমডিএ ১২২ কিলোমিটার খাস খাল/খাড়ি পুনঃখনন, ৫৬টি খাস পুকুর পুনঃখনন, ২২টি ক্রসড্যাম নির্মাণ, ৫৬টি সেচযন্ত্রে সোলার সিস্টেম স্থাপন, ৪৫০টি গভীর নলকূপ পুনর্বাসন, ১৩০৫ কিলোমিটার ভূ-গর্ভস্থ পাইপলাইন নির্মাণ, ৫০০ মেট্রিক টন বীজ উৎপাদন ও ৫৫০ জন কৃষককে প্রশিক্ষণ প্রদান করেছে।

প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক কার্যক্রমে খাস খাল/খাড়ি পুনঃখনন ২ হাজার ৬৪৯ কিলোমিটার, খাস পুকুর পুনঃখনন ৪ হাজার ৩১৩টি, ক্রসড্যাম নির্মাণ ৮০০টি, সোলার সিস্টেম স্থাপন ৬৭৬টি, গভীর নলকূপ পুনর্বাসন ৪ হাজার ৭৯০টি, ভূ-গর্ভস্থ পাইপলাইন নির্মাণ ১৫ হাজার ৩৪৮ কিলোমিটার, ৮ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন বীজ উৎপাদন ও ১ লাখ ৫৮ হাজারের বেশি কৃষককে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। জলাবদ্ধতা দূরীকরণ করা হয়েছে ১৩ হাজার হেক্টর জমির।

২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত মোট ১৫৫৬০টি গভীর নলকূপ এবং ৯৯১টি সেচযন্ত্র ব্যবহার করে প্রায় ৬ লক্ষ ২৮ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ প্রদান করা হয়েছে। এর ফলে প্রায় ৭০ লক্ষ ৫৯ হাজার মেট্রিক টন ফসল উৎপাদন সম্ভব হয়েছে এবং উপকারভোগী কৃষকের সংখ্যা প্রায় ১১ লক্ষ ৬১ হাজার।

বর্তমানে বিএমডিএতে ১২৫ কর্মকর্তার মধ্যে ৯৫ জন দায়িত্বে রয়েছেন। দীর্ঘ সময় জনবল কাঠামো না থাকায় পদায়ন, পদোন্নতি ও বেতনভাতায় বৈষম্যের অভিযোগ রয়েছে। অতীতে ১ হাজার ২৫০ জন কর্মী থাকলেও বর্তমানে ৭০৩ জন কর্মরত আছেন। বাকি জনবল অস্থায়ী ও আউটসোর্সিংয়ে নিয়োজিত। ২০০৬-০৭ সালে অনুমোদিত ৬৫০ জনের কাঠামোর কার্যকর বাস্তবায়ন হয়নি। বর্তমানে মন্ত্রণালয়ে ১ হাজার ৯১১ জনের প্রস্তাবিত জনবল কাঠামো পাঠানো হয়েছে।

অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (পরিকল্পনা অনুবিভাগ) মো. শামসুল হোদা বলেন, জনবল কাঠামোর বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে এবং দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশা করছি।

নির্বাহী পরিচালক মো. তরিকুল আলম বলেন, মন্ত্রণালয়ে ৬০০ জনের একটি আদেশ অপেক্ষমান রয়েছে। এরপর ১ হাজার ৯১১ জনের কাঠামোর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।

ইএইচ