নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার ২নং বড়াইগ্রাম ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের বাগডোব বাজারের পরিচিত মুখ ইয়াদ আলী। প্রতিদিন ভোরে তিনি বাড়ি বাড়ি গিয়ে ডিম কিনে ঝুড়ি ভর্তি করে বাজারে আসেন।
কয়েক বছর আগে ডিম বিক্রির আয়-রোজগার দিয়ে কোনোমতে সংসার চলত। কিন্তু এখন বাজারের অস্থিরতা ও প্রতিযোগিতার কারণে ব্যবসা কমে গেছে।
বেশিরভাগ মুদি দোকানদার নিজেরাই ডিম বিক্রি করায় মানুষ আর তার কাছ থেকে কিনতে চায় না। কিছুদিন আগে সামান্য লাভের টাকা দিয়ে এক বান্ডিল টিন কিনে ছাপড়া ঘর বানালেও সেটি এখন জং ধরে ছিদ্র হয়ে গেছে। ফলে বর্ষায় ফোঁটা ফোঁটা পানি পড়ে, শীতে ঠান্ডা হাওয়া ঢুকে পড়ে ঘরের ভেতর।
গ্রীষ্মে ঝোড়ো বাতাস ও ঝড়-বৃষ্টিতে পানি ঢুকে পড়ে ঘরের মধ্যে। টাকার অভাবে তিনি ঘরের বেড়াও দিতে পারছেন না। মাঝেমধ্যে শিয়াল, কুকুর, বেজি ও নানা বন্য প্রাণী ঘরে ঢুকে পড়ে, সবসময় আতঙ্কে থাকতে হয়।
ইয়াদ আলী জানান, তার একমাত্র মেয়ে ইয়াসমিন খাতুন (৩২) ১৩ বছর আগে বিয়ে করেছিলেন। কিন্তু স্বামীর সংসারে নির্যাতনের শিকার হয়ে মেয়ে দুই কন্যা সন্তান নিয়ে বাবার এই ঝুপড়ি ঘরে ফিরে এসেছে। বড় নাতনি শিমু খাতুন (১২) পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে, কিন্তু অর্থাভাবের কারণে পোশাক, বই, খাতা-কলম কিনে দিতে পারেন না। ছোট নাতনির নাম সামিয়া (৪)। মেয়ের স্বামী অন্যত্র বিয়ে করে চলে গেছে এবং আর কোনো খোঁজখবর নেয় না।
শীতকালে ইয়াদ আলী বাড়ি বাড়ি গিয়ে ডিম কিনে এনে সেদ্ধ করে বিক্রি করেন। যা আয় হয়, তা দিয়ে অল্প কিছু চাল-ডাল কিনে কোনোরকমে দিন কাটান। গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়; তখন এনজিও বা মানুষের কাছ থেকে ধার করে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করতে হয় পাঁচ সদস্যের পরিবারকে।
পাড়া-প্রতিবেশীরা জানান, ইয়াদ আলী পরিশ্রমী ও সৎ মানুষ। কিন্তু বাজারে ডিমের দাম ওঠানামা এবং বাড়তি খরচের কারণে তার জীবনযুদ্ধ থামছে না। তারা আশা করছেন, সাহায্যের হাত বাড়লে তার পরিবারের জীবনযাত্রা কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবে।
২নং বড়াইগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মমিন আলী ও ৬নং ওয়ার্ড সদস্য মো. ওয়ারসেল আলী আকন্দ বলেন, “ইয়াদ আলী নিতান্তই অসহায় ও দরিদ্র মানুষ। তার নিজস্ব জমি নেই, অন্যের জমিতে টিনের ঘর তুলে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছেন। সরকারি উদ্যোগে তার জন্য একটি ঘরের ব্যবস্থা হলে তিনি উপকৃত হবেন।” তারা সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় তার জন্য একটি আবাসন ঘর তৈরির আহ্বান জানান।
ইএইচ