সিলেটে অভিযান চললেও অব্যাহত পাথরলুট

আতিকুর রহমান নগরী, সিলেট প্রকাশিত: আগস্ট ১৯, ২০২৫, ০৬:০৭ পিএম
সিলেটে অভিযান চললেও অব্যাহত পাথরলুট
ফাইল ছবি

সাদাপাথর কাণ্ডের পর প্রশাসনের অভিযান চালানো হলেও সিলেটের বিভিন্ন এলাকায় পাথর লুট অব্যাহত রয়েছে। ভোলাগঞ্জের সাদাপাথর থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার ঘনফুট পাথর উদ্ধার করা হচ্ছে। এরপরও পাথর কোয়ারিগুলোতে লুটেরা কার্যক্রম চলছেই।

মঙ্গলবার সকালে জৈন্তাপুর উপজেলার শ্রীপুর রাংপানি থেকে লুটপাট হওয়া পাথর উদ্ধার করতে সমন্বিত টাস্কফোর্স অভিযান চালায়। 

অভিযানে আনুমানিক ২০ হাজার ঘনফুট পাথর ও ২৮ হাজার ঘনফুট বালু জব্দ করা হয়। উদ্ধারকৃত পাথর রাংপানিতে পুনঃস্থাপন করা হয়েছে।

এর আগে সোমবার বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সিলেট সদর উপজেলার টিলাপাড়া, রঙ্গিটিলা, কান্দিপাড়া ও সালিয়া গ্রামে অভিযান চালিয়ে ধানক্ষেত, বাড়ির উঠান এবং পথের ধারে লুকানো ৫১০০ ঘনফুট পাথর উদ্ধার করা হয়।

প্রশাসনের অভিযানের কারণে লুটের কৌশল পাল্টেছে। এবার নিলামকে হাতিয়ার করে কানাইঘাটের লোভা নদী এবং জৈন্তাপুরের ভারত সীমান্তঘেঁষা পর্যটনকেন্দ্র রাংপানিতে পাথর লুট হচ্ছে। নদীর দুই পাড়ে বসানো বাল্কহেড, খননযন্ত্র ও ক্রাশার মেশিন দিয়ে প্রতিদিন শতাধিক শ্রমিক পাথর উত্তোলন করছে। যদিও সরকার ২০২০ সালে এই কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধ ঘোষণা করেছিল।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, নিলামে বিক্রি হওয়া পাথর সরানোর আড়ালে নতুন করে নদী থেকে পাথর তোলা হচ্ছে। এতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কিছু প্রভাবশালী নেতারও সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে।

সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ জানান, নিলামে পাওয়া প্রতিষ্ঠানকে পাথর সরানোর জন্য ৪৫ দিন সময় দেওয়া হয়েছিল। পরে আরও ৩০ দিন বাড়ানো হলেও সময় শেষ হয়ে গেছে। দ্বিতীয় দফায় সময় বাড়ানোর আবেদন মন্ত্রণালয় নাকচ করেছে।

ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মেসার্স পিয়াস এন্টারপ্রাইজের মালিক কামরুল হাসান চৌধুরী দাবি করেন, তিনি আদালতের অনুমোদিত সময়ের মধ্যে নিলামকৃত পাথরই সরাচ্ছেন, নতুন পাথর উত্তোলন করছেন না। তবে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) বলছে, নিলামের কাগজকে ঢাল করে নতুন পাথরও তুলছে চক্রটি, যা লোভা নদীর পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতি।

কানাইঘাট থানার ওসি আব্দুল আউয়াল বলেন, প্রশাসনের অভিযান চললে পুলিশ সহযোগিতা করবে, তবে নিলামকৃত পাথর সরানোর বিষয়ে কোনো নির্দেশনা আমরা পাইনি।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, রাংপানি নদীসহ বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রে দিনদুপুরে পাথর লুট হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ ও বিজিবি নিষ্ক্রিয় থাকায় লুট অব্যাহত। রবিবারও লুটেরারা বড় পাথর উত্তোলন করেছে, যদিও বিজিবি শুধু বাঁশি বাজিয়ে চলে গেছে।

জৈন্তাপুরের রাংপানি নদীর শ্রীপুর কোয়ারি, আদর্শগ্রাম, খড়মপুর ও বাংলাবাজার ঘাট থেকে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন হচ্ছে। স্থানীয়দের মতে, উদ্ধারকৃত পাথরও জৈন্তাপুর, রাংপানি ও শ্রীপুর এলাকার, কিন্তু প্রশাসন ভোলাগঞ্জের বলে চালিয়ে দিচ্ছে।

জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জর্জ মিত্র চাকমা জানান, লুট বন্ধ ও পাথর উদ্ধারে প্রতিদিন অভিযান চলছে। সোমবার (১৮ আগস্ট) রাংপানিতে অভিযান চালিয়ে ৪০ ট্রাক বালু এবং বাংলাবাজারের একটি ক্রাশার মেশিন থেকে ৯,৫০০ ঘনফুট পাথর জব্দ করা হয়েছে।

ইএইচ