কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংবাদ সম্মেলন

৩৮ দুর্বল ব্যাংক নিয়ে পরিষ্কার ব্যাখ্যা দেননি মুখপাত্র

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক: প্রকাশিত: মার্চ ১২, ২০২৪, ০৩:১৪ পিএম
৩৮ দুর্বল ব্যাংক নিয়ে পরিষ্কার ব্যাখ্যা দেননি মুখপাত্র

৩৮টি দুর্বল ব্যাংকের বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেও এ বিষয়ে পরিষ্কার কোনো ব্যাখ্যা দেননি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক। বর্তমানে কতটি ব্যাংক দুর্বল অবস্থায় আছে-এমন প্রশ্নেরও কোনো জবাব দেননি মুখপাত্র।

গতকাল মঙ্গলবার বেলা আড়াইটায় ব্যাংক একীভূতকরণ ও সমসাময়িক বিষয়ে কথা বলতে সংবাদ সম্মেলন ডাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র কথা বলেন ও সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।

এসময় মেজবাউল হক বলেন, আমাদের বিভিন্ন বিভাগ বিভিন্নভাবে মূল্যায়নের কাজ করে। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিয়মিত প্রতি ছয় মাস পরপরই ব্যাংকগুলোর বিভিন্ন সূচকের ওপর ভিত্তি করে মূল্যায়ন প্রতিবেদন তৈরি করে। এটা ক্যামেলস রেটিংয়ের আলোকে এ মূল্যায়ন হয়ে থাকে। তবে এগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশযোগ্য না। এটা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ বিষয়। গণমাধ্যম এটা প্রকাশ করতে পারে না। 

মুখপাত্রের এ কথার পরিপ্রেক্ষিতে একজন সাংবাদিক বলেন, আপনারা যেটা প্রকাশ করেন সেটা আমাদের কাছে রিপোর্ট আর যেটা আপনারা গোপন করেন সেটাও আমাদের জন্য রিপোর্ট। এসময় হালকা উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের দুই-তৃতীয়াংশের বেশি ব্যাংক এখন দুর্বল। ‍‍`রেড জোনের‍‍` ব্যাংকগুলো সবচেয়ে খারাপ (পুওর) এবং ইয়েলো জোনের ব্যাংকগুলো দুর্বল (উইক) অবস্থায় রয়েছে। আর ‍‍`গ্রিন জোনের‍‍` ব্যাংকগুলো ভালো মানের (গুড)। ৫৪টি ব্যাংকের মধ্যে ১২টির অবস্থা অত্যন্ত নাজুক, যার ৯টি ইতিমধ্যে রেড জোনে চলে গেছে। ইয়েলো জোনে আছে ২৯টি ব্যাংক; এর মধ্যে ৩টি ব্যাংক রেড জোনের খুব কাছাকাছি অবস্থানে রয়েছে।

অন্যদিকে মাত্র ১৬টি ব্যাংক গ্রিন জোনে স্থান পেয়েছে। এর মধ্যে ৮টিই বিদেশি ব্যাংক। অর্থাৎ গ্রিন জোনে দেশীয় ব্যাংকের সংখ্যা মাত্র ৮টি। ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত বিগত ছয়টি অর্ধবার্ষিক সময়ে ৫৪টি ব্যাংকের তথ্যের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।

তবে এসব দুর্বল ব্যাংকের বিষয়ে পরিষ্কার কোনো ব্যাখ্যা দেননি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক। এই হেলথ ইনডেক্সকে তিনি ব্যাংকগুলোর উপর চূড়ান্ত কোনো প্রতিবেদন না বলেও দাবি করেন।

তিনি বারবার একই কথা বলছিলেন যে, আমাদের বিভিন্ন বিভাগ বিভিন্নভাবে মূল্যায়ন করে থাকে। আর ব্যাংকগুলোর উপর আমরা সার্বিক মূল্যায়ন করে থাকি ক্যামেলস রেটিংয়ের আলোকে। এটা আমরা কখনো প্রকাশ করি না।

দুর্বল ও সবল ব্যাংকের গোপন এ প্রতিবেদন অভ্যন্তরীণ গবেষণার জন্য করা হয়েছে দাবি করে মুখপাত্র বলেন, কয়েকটি গণমাধ্যমে দুর্বল ও সবল ব্যাংকের তালিকা প্রকাশ হয়েছে। এটা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রকাশিত কোনো প্রতিবেদন নয়। একটি বিভাগ তাদের নিজস্ব কিছু তথ্য গবেষণা বা বিশ্লেষণের জন্য এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন বিভাগ বিভিন্ন কম্পোনেন্ট নিয়ে অ্যাসেসমেন্ট করে। রেগুলার ফাইনেন্সিয়াল রিস্ক ম্যানেজমেন্টের জন্য করা হয়, এটা প্রকৃত হেলথ ইনডিকেটর নয়। তাই এটি দিয়ে কোনো ব্যাংকের সার্বিক আর্থিক অবস্থা নির্ণয় বা তুলনা করা ঠিক হবে না। 

মেজবাউল হক বলেছেন, ব্যাংকগুলো মার্জারের মূল ভিত্তি হবে প্রম্পট কারেক্টিভ অ্যাকশন (পিসিএ)। অন্য কোনো প্রক্রিয়ায় মার্জার হবে না। সব কিছু পর্যবেক্ষণের পর যদি মনে করা হয় যে এসব কারণে ব্যাংকগুলোকে মার্জ করা দরকার তাহলে মার্জ হবে। মার্জারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাবে আমানতকারীদের স্বার্থ। তাদের আমানতের সুরক্ষা দেয়া হবে। আমানতকারীদের স্বার্থেরহানী হবে না।

তিনি বলেন, একই সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থও দেখা হবে। আমানতকারী ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সমুন্নত রেখেই মার্জ করা হবে।

মেজবাউল হক, মার্জারের ক্ষেত্রে আমানত বীমার প্রশ্ন আসবে না। এখানে কোনো ব্যাংক বন্ধ হচ্ছে না। এখানে একটি ব্যাংকের সাথে আরেকটি ব্যাংক একীভূত হবে। ব্যাংক বন্ধ হলে তখন আমানত বীমার প্রশ্ন আসবে না।

মুখপাত্র বলেন, মার্জার নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলছেন। আমরা বারবার বলছি, ব্যাংক মার্জার হলে আরও বেশি শক্তিশালী হবে। মার্জার করলে ব্যাংক দুর্বল হবে না। আমানতকারীরা তাদের আমানতের সুরক্ষা পাবে। মার্জারের আগে অডিট ফার্মের মাধ্যমে ব্যাংকগুলোকে মূল্যায়ন করা হবে বলেও জানান তিনি।

বিআরইউ