দীর্ঘ মাসজুড়ে চলা মূল্যস্ফীতির চাপে বিপর্যস্ত জনজীবনে কিছুটা স্বস্তি এনে দিয়েছে সদ্য শেষ হওয়া জুন মাস। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, জুনে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৪৮ শতাংশে, যা গত ৩৩ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে, ২০২২ সালের অক্টোবরে মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ৯১ শতাংশ।
সোমবার বিবিএস প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, মে মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ০৫ শতাংশ। অর্থাৎ জুনে মূল্যস্ফীতি কমেছে ০.৫৭ শতাংশ পয়েন্ট।
খাদ্যপণ্যের ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। জুনে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ, যেখানে মে মাসে এই হার ছিল ৮ দশমিক ৫৯ শতাংশ।
খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতি সামান্য কমে ৯ দশমিক ৩৭ শতাংশ হয়েছে, যা আগের মাসে ছিল ৯ দশমিক ৪২ শতাংশ।
তবে আয়-ব্যয়ের ব্যবধান এখনো নেতিবাচক। জুন মাসে জাতীয় মজুরি হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ১৮ শতাংশে। কিন্তু মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ, অর্থাৎ ব্যয় বৃদ্ধির গতি এখনো আয়ের চেয়ে বেশি।
বিবিএস-এর ভোক্তা মূল্যসূচক বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২৪ সালের জুনে যে পণ্য ১০০ টাকায় কেনা যেত, ২০২৫ সালের জুনে সেই পণ্যের মূল্য দাঁড়িয়েছে ১০৮ টাকা ৪৮ পয়সা।
তবে স্বস্তিদায়ক হলেও এ পতন পুরোপুরি আশাব্যঞ্জক নয়। সদ্য সমাপ্ত ২০২৪–২৫ অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ০৩ শতাংশে, যা গত ১৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে ২০১০–১১ অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৯২ শতাংশ।
এদিকে, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সুচিন্তিত নীতি ও কৌশলের ফলে মূল্যস্ফীতি দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে তিনি লেখেন, “২০২৫ সালের জুন মাসে পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতি ৮.৪৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। যা গত বছরের আগস্টের তুলনায় ২ শতাংশ পয়েন্ট কম।”
তিনি আরও জানান, খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৭ দশমিক ৩৯ শতাংশে নেমে এসেছে, যা গত দুই বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। একই সঙ্গে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতিও হ্রাস পেতে শুরু করেছে এবং আগামীতে তা আরও দ্রুত কমবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর সম্প্রতি আশা প্রকাশ করেছেন, আসছে সেপ্টেম্বরের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশে নেমে আসতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূল্যস্ফীতি হ্রাসের এই ধারা বজায় রাখতে হলে উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থার ওপর আরও নজরদারি ও সহায়ক নীতি নিশ্চিত করতে হবে।
ইএইচ