যেসব দাবিতে আন্দোলন করছেন ইউআইইউ’র শিক্ষার্থীরা

আমার সংবাদ ডেস্ক প্রকাশিত: জুন ২১, ২০২৫, ০৩:৩০ পিএম
যেসব দাবিতে আন্দোলন করছেন ইউআইইউ’র শিক্ষার্থীরা

রাজধানীর নতুন বাজার এলাকায় রাস্তা অবরোধ করে ৫ দফা দাবি বাস্তবায়নের জন্য আন্দোলন করছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি শিক্ষার্থীরা (ইউআইইউ)। সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনের কারণে নতুন বাজার এলাকার রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী মানুষজনকে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।

শনিবার (২১ জুন) সকাল সাড়ে ৮টা থেকে শিক্ষার্থীরা মূল সড়কে অবস্থান নিলে নতুন বাজার-গুলশান-বনশ্রী সংযোগ সড়কে যান চলাচলে বড় ধরনের বিঘ্ন ঘটে।

সর্বশেষ দুপুর একটা পর্যন্ত দেখা যায়, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বাটারা থানা সংলগ্ন কুড়িল থেকে রামপুরাগামী রাস্তা অবরোধ করে আন্দোলন করছেন। তবে সকাল থেকে রামপুরা থেকে কুড়িলগামী রাস্তাও যান চলাচল বন্ধ ছিল তাদের আন্দোলনের কারণে। পরবর্তীতে দুপুরের পর এ রাস্তা থেকে ব্যারিকেড উঠিয়ে নেয় পুলিশ, ফলে যান চলাচল পুনরায় শুরু হয়।

শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলছেন তাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে পুলিশ লাঠিচার্জ করেছে এবং তাদের কয়েকজন শিক্ষার্থীকে আহত করেছে। তারা পুলিশের এই আচরণের তীব্র নিন্দা জানান এবং দোষীদের শাস্তি দাবি করেন। এছাড়া শিক্ষার্থীরা আরও যোগ করেন তাদের দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত তারা রাস্তা ছেড়ে যাবেন না।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ইউআইইউ রিফর্ম আন্দোলনে অংশগ্রহণের কারণে গত ২৬ এপ্রিল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ‘নানা নাটকীয়তা ও বিলম্বের’ মধ্যেও ন্যায্য বিচার থেকে বঞ্চিত রয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনে ধরনা দিলেও কার্যকর কোনো সমাধান আসেনি। এর ফলে ‘আরেকটি জুলাই’ আসার আগেই তারা আবারও রাজপথে নামতে বাধ্য হয়েছেন।

আন্দোলনকারীদের একজন লাবিব মুহান্নাদ জানান, জুলাই অভ্যুত্থানে যে শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়েছিলেন, তাদের ২৫ জনকে বহিষ্কার করেছে ইউনাইটেড ইউনিভার্সিটি। ইউনাইটেড গ্রুপ আওয়ামী লীগ ও তাদের অঙ্গসংগঠনগুলোকে টাকা দিতো। তারা জুলাই অভ্যুত্থানে জড়িত শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।

তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা তাদের অধিকার রক্ষার জন্য আন্দোলন করেছিলেন, তাদের আশ্বাস দিয়ে আট মাস বসিয়ে রাখা হয়। পরে তারা ভিসির পদত্যাগসহ তাদের অধিকার রক্ষায় ফের আন্দোলনে নামেন। ওই আন্দোলন দমানোর জন্য ২৫ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আমরা তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার চাই।

আন্দোলন থেকে শিক্ষার্থীরা ৫ দফা আন্দোলন উপস্থাপন করেছেন। দাবিগুলো হল—

১। ইউআইইউ কর্তৃক অন্যায়ভাবে সব বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীদের নিঃশর্ত বহিষ্কার প্রত্যাহার ও ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে। যেসব শিক্ষার্থীরা শোকজ পেয়েছেন ও বহিষ্কৃত হয়েছেন তারা বিগত ২ মাস যাবত ক্লাস ও পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেননি। এছাড়াও নানা মানসিক, সামাজিক ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কেবলমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অন্যায় সিদ্ধান্তের জন্য। সেজন্য বহিষ্কৃতদের বহিষ্কারাদেশ বিনা শর্তে তুলে নিতে হবে এবং যেসব একাডেমিক ও অন্যান্য ক্ষতি হয়েছে সেসবের ক্ষতিপূরণ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে দিতে হবে।

২। বহিষ্কারের সঙ্গে জড়িত সব ছাত্র-শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঠিক তদন্তের মাধ্যমে শাস্তির আওতায় আনা। যেসব কর্তৃপক্ষ সদস্য, ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য, শিক্ষক, স্টাফ ও শিক্ষার্থীদের প্রমাণ ছাড়া মিথ্যা অভিযোগের কারণে ও কুট-কৌশলে শিক্ষার্থীরা অন্যায়ভাবে বহিষ্কৃত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের অন্যায়ের সুষ্ঠু তদন্ত ও শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

৩। ইউআইউতে দীর্ঘদিন ধরে চলা অনিয়ম-অসুবিধা ও স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে রিকর্ম দাবিসমূহ বাস্তবায়ন। ইউআইইউ রিফর্মের যেসব দাবি পূরণ করা হয়নি সেসব দাবি পূরণ করতে হবে। পাশাপাশি যেসব কর্তৃপক্ষ সদস্যের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা ও রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার অভিযোগ আছে তাদের বহিষ্কার নিশ্চিত করতে হবে। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক ব্যবসাকরণ ও মান অবনতির জন্য দায়ী।

৪। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য একটি স্বাধীন সংস্কার কমিশন গঠন করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ইউআইইউর সাম্প্রতিক অস্থিরতাসহ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো সমস্যা সমাধানে উদাসীন। শত ছুটাছুটি করেও ইউআইইউর ক্রিটিক্যাল সমস্যার সমাধান তারা করতে পারেননি এবং তারা নিজেরাই তাদের অপারগতা স্বীকার করেছেন। তারা মূলত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সমস্যাগুলোকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। এজন্য কেবল প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিষয় তদারকির জন্য একটি আলাদা ও স্বতন্ত্র মঞ্জুরি কমিশন গঠন করতে হবে।

৫। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশ কর বাতিল করতে হবে। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর সরকারের আরোপিত ১৫ শতাংশ  কর মওকুফ করতে হবে এবং সরকারি তদারকিতে এই বাঁচানো অর্থ শিক্ষার্থীদের গবেষণা ও শিক্ষার মানোন্নয়নের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে কি না তা নিশ্চিত করতে হবে।

এদিকে বেলা দেড়টার দিকে ভাটারা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. রাকিব হাসান বলেন, এখনো সড়ক অবরোধ করে রেখেছেন শিক্ষার্থীরা।

আরএস