ইউএসএআইডি’র ‘বিশ্ব মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা দিবস’ ২০২৩’উদযাপন

মো. মাসুম বিল্লাহ প্রকাশিত: মে ৩০, ২০২৩, ১১:৫৪ পিএম
ইউএসএআইডি’র ‘বিশ্ব মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা দিবস’ ২০২৩’উদযাপন

ইউএসএআইডি’র সুখী জীবন প্রকল্পের আয়োজনে ‘বিশ্ব মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা দিবস ২০২৩’উদযাপন করা হয়েছে। রবিবার বাংলাদেশ শিশু একাডেমিতে এ দিবস উদযাপন করা হয়।

দিনব্যাপি অনুষ্ঠানে ঢাকার বিভিন্ন স্কুলের চার শতাধিক শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিগণ অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানের মূল উপজীব্য বিষয় ছিল কিশোরী ও নারীদের মাসিক ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ডিএসএইচই-এর ডিরেক্টর (প্লানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট) প্রফেসর ড. এ কিউ এম শফিউল আজম বলেন, ‘বিশ্ব মাসিক স্বাস্থ্য দিবসকে ঘিরে আমাদের প্রত্যাশা, মাসিক স্বাস্থ্যকে কেন্দ্র করে বিদ্যমান যে সকল কুসংস্কার, বদ্ধমূল ধারণা, সামাজিক রীতিনীতি, অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস রয়েছে, সেগুলো পরিবর্তিত হবে এবং নারীর স্বাস্থ্যের জন্য সহায়ক ও কল্যাণকর পরিবেশ তৈরী হবে। ফলে মাসিক নিয়ে কিশোরী ও নারীরা কোনো রকম লজ্জা, ভয়, সংশয়বোধ করবে না, বরং তারা নারীর জীবনের এই প্রাকৃতিক ও স্বাভাবিক বিষয়টি মর্যাদার সাথে সুসম্পন্ন করতে সমর্থ হবে।’

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ফ্যামিলি প্ল্যানিং-ঢাকার ডিভিশনাল ডিরেক্টর মো. মাহবুব আলম। সভাতিত্ব করেন ইউএসএআইডি সুখী জীবন প্রকল্পের প্রজেক্ট ডিরেক্টর মাহবুব আলম (কান্ট্রি ডিরেক্টর, পাথফাইন্ডার ইন্টারন্যাশনাল)। আরও বক্তব্য রাখেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, এটুআই এর কর্মকর্তা আফজাল হোসেন সারোয়ার, আনিসুল হক প্রমুখ।

বর্তমানে পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ৪৯.৯ শতাংশ নারী (বিশ্ব ব্যাংক, ২০২১) এবং বাংলাদেশের প্রায় ৫০.৪৬ শতাংশ (বাংলাদেশ ব্যুরো অব স্ট্যাটিসটিকস শুমারি, ২০২২)। দেশের মোট নারীর ৫৩.৯৫% প্রজননসক্ষম (১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সি) এবং ৬৭.৪৯ শতাংশ বিবাহিত (বাংলাদেশ ব্যুরো অব স্ট্যাটিসটিকস শুমারি, ২০২২)। প্রজননক্ষম সকল নারীর স্বাভাবিক শরীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া হিসেবে প্রতি মাসেই তাদের মাসিক হয়। কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত, বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অনেক দেশে এ সম্পর্কে নানান ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত রয়েছে। এই ভুল ধারণা সমূহের কারণে প্রতিনিয়ত নানাবিধ শারিরীক, সামাজিক, মানসিক সমস্যা ও বৈষম্যের সম্মুখীন হয় নারীরা যার ভয়াবহতার দেখা মিলছে আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর সকল প্রজননক্ষম মেয়েরা আজ স্বাভাবিক জীবন যাপনে বাধার সন্মুখীন, বৈষম্যের শিকার ও সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন শুধুমাত্র তাদের জীবন চক্রে মাসিক একটি অবিচ্ছেদ্দ্য অংশ বলে।

ওয়াস ইউনাইটেড (জার্মান ভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন) ২০১৩ সালে প্রথম মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা দিবস (Menstrual Hygiene Management Day) উদযাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করে। তারই ধারাবাহিকতায় নিরাপদ, স্বাস্থ্যকর, স্বস্তিদায়ক এবং লজ্জা ও ভীতিহীন একটি মাসিক চক্র ব্যবস্থাপনা জীবন ধারনের অত্যাবশ্যকীয় বিষয় হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে প্রতি বছর ২৮ মে বিশ্বব্যাপী মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা দিবস (Menstrual Hygiene Management Day) উদযাপিত হয়ে আসছে। এখানে দিবসটি মে মাসের ২৮ তারিখে উদযাপনের পেছনের যৌক্তিকতা হলো; একটি মাসিক চক্র সাধারণত ২৮ দিনের এবং সচারাচর ৫ দিন স্থায়ী হয় বলে এটি মে মাসের (পঞ্চম মাস) ২৮ তারিখে নির্ধারণ করা হয়েছে।

মাসিক কেবল শরীরবৃত্তিয় ব্যাপারই নয়, এর সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে আবেগিক, মানসিক ও সামাকিজ দিকসমূহ সহ কৈশোর স্বাস্থ্যের নানাদিক। পাথফাইন্ডার ইন্টারন্যাশনাল বাস্তবায়িত ইউএসএআইডি সুখী জীবন প্রকল্প দেশের সার্বিক প্রজনন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সেবার মানোন্নয়নে বিশেষ করে কিশোর-কিশোরী প্রজনন স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে- বাংলাদেশ সরকারের সাথে কাজ করে যাচ্ছে।

দিবসটিতে দিনব্যাপী কার্যক্রমের অংশ হিসেবে কিশোরী-কিশোরদের অংশগ্রহণে মাসিক স্বাস্থ্যের নানাদিক নিয়ে সচেতনতামূলক খেলাধূলা ও আলোচনার আয়োজন করা হয়। মাসিক সংক্রান্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে দেওয়াল লিখন, ছবি আঁকা, মাসিককালীন ব্যায়াম ও পুষ্টি, মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয় উপকরণ পরিচিতি, ক্যারিক্যাচার আঁকা, খেলাধুলা, বিশেষজ্ঞের সাথে গল্প ইত্যাদির মাধ্যমে মাসিক সংক্রান্ত আলোচনাকে সহজ ও স্বাভাবিক করার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

আরএস