গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন

লন্ডনে সালমান এফ রহমান পরিবারের ১৫০০ কোটি টাকার সম্পত্তি জব্দ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক প্রকাশিত: মে ২৪, ২০২৫, ১২:৫২ পিএম
লন্ডনে সালমান এফ রহমান পরিবারের ১৫০০ কোটি টাকার সম্পত্তি জব্দ

লন্ডনে বাংলাদেশের সাবেক শাসকগোষ্ঠীর ঘনিষ্ঠদের মালিকানাধীন প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার সম্পদ জব্দ করেছে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ)। শুক্রবার (২৩ মে) ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান-এর এক প্রতিবেদনে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।

জব্দ করা এসব সম্পদের মালিক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে আহমেদ শায়ান রহমান ও তার চাচাতো ভাই আহমেদ শাহরিয়ার রহমানকে। তারা দুজনই ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ সহকারী ও শিল্প উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের ছেলে ও ভাতিজা।

ব্রিটিশ আদালতের আদেশে এখন থেকে তারা জব্দ হওয়া সম্পদগুলো বিক্রি বা হস্তান্তর করতে পারবেন না। এসবের মধ্যে রয়েছে লন্ডনের অভিজাত গ্রোসভেনর স্কয়ারে অবস্থিত বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট, যার প্রতিটির মূল্য কোটি কোটি পাউন্ড।

জানা গেছে, এসব সম্পত্তি ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড, আইল অব ম্যান ও জার্সির মতো অফশোর জোনের কোম্পানির নামে কেনা হয়। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল ইউকের সঙ্গে যৌথ তদন্তে দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, শুধু রহমান পরিবারের নয়, সাবেক সরকার ঘনিষ্ঠদের যুক্তরাজ্যে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন পাউন্ডের সম্পদ রয়েছে। এরই অংশ হিসেবে নয়টি সম্পদ জব্দ করা হয়েছে।

জব্দ হওয়া একটি সম্পত্তি লন্ডনের গ্রেশাম গার্ডেনসে, যেখানে এক সময় শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা বসবাস করতেন বলে ফিন্যান্সিয়াল টাইমস জানিয়েছে। এটির মূল্য প্রায় ৭.৭ মিলিয়ন পাউন্ড।

শেখ হাসিনার ভাগনি ও ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধেও বাংলাদেশে দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। তিনি সম্প্রতি সিটি মিনিস্টারের পদ থেকেও সরে দাঁড়িয়েছেন। তবে টিউলিপ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, এটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসা।

২০১১ সালের গৃহযুদ্ধ পরবর্তী সময় থেকে যুক্তরাজ্যে স্থায়ীভাবে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের দীর্ঘ শাসনের সময় এসব সম্পদ গড়ে তোলা হয়। গত বছর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হন এবং ভারতে আশ্রয় নেন। বর্তমানে তিনি দিল্লিতে অবস্থান করছেন।

তার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়, যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি প্রশাসনিক ও বিচারিক সংস্কারসহ অর্থপাচার রোধে জোর পদক্ষেপ নিচ্ছেন।

অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন জানিয়েছেন, রহমান পরিবার অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে তদন্তাধীন।

আহমেদ শায়ান রহমানের মুখপাত্র দাবি করেছেন, ‘তিনি কোনো অপরাধে জড়িত নন এবং যুক্তরাজ্যের যেকোনো তদন্তে সহযোগিতা করবেন।’ একইসঙ্গে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে শত শত ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজরে আসা উচিত।’

যুক্তরাজ্যের এনসিএ বলেছে, এ ঘটনা একটি চলমান বেসামরিক তদন্তের অংশ এবং আরও সম্পত্তি জব্দের বিষয়ে তারা কাজ করছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, যুক্তরাজ্যে বিদেশি দুর্নীতিবাজদের জন্য এই অভিযান একটি শক্ত বার্তা।

বিআরইউ