দিল্লি-মস্কো কৌশলগত ঘনিষ্ঠতা, আসছেন পুতিন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক প্রকাশিত: আগস্ট ৭, ২০২৫, ০৬:৪৪ পিএম
দিল্লি-মস্কো কৌশলগত ঘনিষ্ঠতা, আসছেন পুতিন

মস্কোতে অনুষ্ঠিত দ্বিপাক্ষিক নিরাপত্তা সংলাপে “কৌশলগত অংশীদারত্ব” বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে রাশিয়া ও ভারত। 

সংলাপটি এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হলো, যখন রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতীয় পণ্যে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন।

রুশ বার্তা সংস্থা ইন্টারফ্যাক্স জানায়, ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল জানিয়েছেন—চলতি বছরের শেষ নাগাদ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নয়াদিল্লি সফরের অপেক্ষায় রয়েছে ভারত।

রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের সেক্রেটারি সের্গেই শোইগুর সঙ্গে দোভালের বৈঠকে দুই দেশ পারস্পরিক সম্পর্কের গুরুত্ব এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদারের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে।

যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক ভারতীয় পণ্যে অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত আগামী ২৮ আগস্ট থেকে কার্যকর হওয়ার কথা। এর ফলে মার্কিন বাজারে ভারতীয় পণ্যের ওপর মোট শুল্ক বেড়ে ৫০ শতাংশে দাঁড়াবে।

বিশ্লেষকদের মতে, গত জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পুনর্নির্বাচিত হওয়ার পর এই শুল্ক আরোপই যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্কের মধ্যে সবচেয়ে বড় সংকট সৃষ্টি করেছে। এতে ভারতের অন্যতম বৃহৎ রপ্তানি বাজারে প্রবেশাধিকার ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

মস্কোতে দোভালকে উদ্দেশ করে দেওয়া এক টেলিভিশন ভাষণে রুশ নিরাপত্তা সচিব শোইগু বলেন, “আমরা একটি নতুন, আরও ন্যায্য ও টেকসই বিশ্বব্যবস্থা গঠনের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক আইনের শ্রেষ্ঠত্ব নিশ্চিত করতে এবং আধুনিক চ্যালেঞ্জ ও হুমকি মোকাবিলায় যৌথভাবে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”

জবাবে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল বলেন, “বর্তমানে আমাদের মধ্যে অত্যন্ত ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠেছে, যাকে আমরা গভীরভাবে মূল্য দিই। আমাদের মধ্যে কৌশলগত অংশীদারত্ব বিদ্যমান।”

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই রাশিয়ার অপরিশোধিত তেলের অন্যতম শীর্ষ ক্রেতা হয়ে উঠেছে ভারত ও চীন। রাশিয়ার অর্থনীতি চাপে ফেলতে পশ্চিমা দেশগুলো বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেও ভারত তা উপেক্ষা করে রুশ তেল আমদানি অব্যাহত রেখেছে।

রুশ তেল আমদানিকারী দেশগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এরই অংশ হিসেবে ভারতীয় পণ্যে বাড়তি শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়া হয়। ক্রেমলিন এই পদক্ষেপকে “অবৈধ বাণিজ্যিক চাপ” হিসেবে আখ্যায়িত করেছে এবং বলেছে, স্বাধীনভাবে যেকোনো দেশের সঙ্গে বাণিজ্য করার অধিকার ভারতের রয়েছে।

ভারতের তেল খাতের একাধিক সূত্র জানায়, মার্কিন হুমকি এবং রুশ তেলের ওপর ছাড় কমে যাওয়ায় দেশটির রাষ্ট্রীয় পরিশোধনাগারগুলো রুশ তেল কেনা বন্ধ করে দিয়েছে। তবে বেসরকারি মালিকানাধীন রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ ও নায়ারা এখনও ভারতের শীর্ষ রুশ তেল আমদানিকারক হিসেবে রয়েছে।

ভারতের সরকারি এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অজিত দোভালের এই সফরে রুশ তেল আমদানিসহ প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিয়েও আলোচনা হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে ভারত রাশিয়ার সঙ্গে ৫.৫ বিলিয়ন ডলারের একটি চুক্তি করে, যার আওতায় দেশটি পাঁচটি এস-৪০০ দূরপাল্লার ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সংগ্রহ করছে। নয়াদিল্লি জানিয়েছে, চীনের সম্ভাব্য হুমকি মোকাবিলায় এই ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

তবে এই প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহে রাশিয়ার পক্ষ থেকে একাধিকবার বিলম্ব ঘটেছে। বাকি দুটি এস-৪০০ সিস্টেম ২০২৬ ও ২০২৭ সালের মধ্যে সরবরাহ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

অস্ত্র আমদানিতে ঐতিহ্যগতভাবে রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীল হলেও, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত পশ্চিমা দেশগুলোর দিকেও ঝুঁকেছে।

সূত্র: রয়টার্স

ইএইচ