এটিইও নিয়োগে জটিলতা, ফের আদালতে যাবেন নতুন শিক্ষকরা

আদালত প্রতিবেদক প্রকাশিত: আগস্ট ১২, ২০২৩, ০৩:০২ পিএম
এটিইও নিয়োগে জটিলতা, ফের আদালতে যাবেন নতুন শিক্ষকরা

সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) অধীনে সহকারী উপজেলা/থানা শিক্ষা অফিসার (এটিইও) নিয়োগে জটিলতা কাটছেই না। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগ পাওয়া নতুন শিক্ষকরা এ পদে আবেদন করতে পারবেন কি না, তা নিয়েই যত জটিলতা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপে এক দফা জটিলতার নিরসনও হয়। ১ জুলাই থেকে শুরু হয় অনলাইনে আবেদন। ক‍‍`দিন বাদেই একই জটিলতায় পড়েন নতুন নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকরা। তাদের দৌঁড়ঝাঁপ ও অভিযোগের প্রেক্ষিতে এ নিয়োগের আবেদন প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয় পিএসসি। একইসঙ্গে স্থগিত করা হয়েছে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতও।

জানা গেছে, ১৫৯টি এটিইও (বিভাগীয়) পদে গত ২৬ জুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। এতে বলা হয়, বিভাগীয় প্রার্থী বলতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের যেকোনো শিক্ষক (অনূর্ধ্ব ৪৫ বছর) এটিইও পদে আবেদন করতে পারবেন। তবে নিচে আবেদন নির্দেশিকায় বলা হয়- এ পদে আবেদনের জন্য প্রাথমিকের শিক্ষকের কমপক্ষে দুই বছরের অভিজ্ঞতা থাকা লাগবে।

নতুন শিক্ষকরা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দফায় দফায় যোগাযোগ করতে থাকেন। মন্ত্রণালয় থেকে স্পষ্টভাবে শিক্ষকদের জানানো হয়, নতুন নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকরাও এটিইও পদে আবেদন করতে পারবেন। পরে নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের একটি প্রতিনিধি দল মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে লিখিত আবেদন করেন।

গত ১৭ জুলাই মন্ত্রণালয় পিএসসিকে এ বিষয়ে চিঠি দেয়। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মো. আব্দুল মালেকের সই করে পিএসসিতে পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের গেজেটেড অফিসার ও নন-গেজেটেড কর্মচারীদের নিয়োগ বিধিমালা ১৯৮৫ (সংশোধিত ১৯৯৪), বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের ২০১৫ ও ২০১৮ সালের একই পদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সরকারি চাকরি নিয়োগের শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ (বিশেষ বিধান) বিধিমালা, ২০০৩ যাচাই করে পিএসসির প্রকাশিত এটিইও পদে নিয়োগ যোগ্যতার শর্ত সংক্রান্ত জটিলতা অবসান ও বিজ্ঞপ্তি সংশোধনের প্রয়োজন হলে, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।

এরপর আবেদন নির্দেশিকা থেকে দুই বছরের অভিজ্ঞতা থাকার বাধ্যবাধকতা তুলে দেয় পিএসসি। ফলে বিভাগীয় কোটায় পূরণযোগ্য ১৫৯ পদে এটিইও নিয়োগে ১ জুলাই থেকে অনলাইনে যে আবেদন শুরু হয়েছিল, তাতে নতুন নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকরাও আবেদন করার সুযোগ পান। ৩১ জুলাই পর্যন্ত এ পদে আবেদন প্রক্রিয়া চলার কথা ছিল। কিন্তু আবেদন চলাকালে ২৪ জুলাই আবারও নিয়মে পরিবর্তন আনে পিএসসি। কমপক্ষে দুই বছরের অভিজ্ঞতার ঘর হঠাৎ যুক্ত করা হয়। এতে ফের জটিলতায় পড়েন নতুন শিক্ষকরা। তারা পিএসসি এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এ নিয়ে আবারও যোগাযোগ করে অভিযোগ জানাতে থাকেন।

পিএসসির এমন কার্যক্রমে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ও। একপর্যায়ে ৩০ জুলাই এটিইও পদে আবেদন প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয় পিএসসি। পিএসসির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (নন-ক্যাডার) আব্দুল্লাহ আল মামুনের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২৬ জুন প্রকাশিত নন-ক্যাডার পদে নিয়োগের ৪০ নম্বর ক্রমিকের সহকারী উপজেলা/থানা শিক্ষা অফিসার পদের অনলাইনে আবেদন গ্রহণ অনিবার্য কারণে স্থগিত করা হলো।’

হঠাৎ বিজ্ঞপ্তিতে পরিবর্তন ও আবেদন প্রক্রিয়া বন্ধ করায় গত ৩১ জুলাই হাইকোর্টে রিট করেন প্রাথমিকে নতুন নিয়োগ পাওয়া পাঁচজন শিক্ষক। ১ আগস্ট রিটের ওপর শুনানি হয়। সেখানে রাষ্ট্রপক্ষ আদালতের কাছে সময় আবেদন করেন। গত ৬ আগস্ট এ বিষয়ে দ্বিতীয় দফা শুনানি হয়। সেখানে রাষ্ট্রপক্ষ আদালতকে জানান, পিএসসি এ বিষয়ে অবগত এবং সার্কুলারও (বিজ্ঞপ্তি) স্থগিত করেছে।

আদালত ওইদিন রিটকারীদের বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ যেহেতু বলছে- পিএসসি বিষয়টি অবগত এবং সার্কুলারও স্থগিত করেছে। এখন আপনারা অন্তত একমাস অপেক্ষা করেন। এ সময়ের মধ্যে যদি নতুন শিক্ষকদের এটিইও পদে আবেদনের সুযোগ ও বিজ্ঞপ্তিতে সংশোধনী না আনা হয়, তাহলে আদালতকে অবগত করবেন।

রিটকারীদের আইনজীবী মো. তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘পিএসসি কী ধরনের ব্যবস্থা নেয়, সেটা অন্তত একমাস নতুন শিক্ষকদের দেখতে বলেছেন আদালত। যদি নতুন শিক্ষকদের এ পদে সুযোগ না দেওয়া হয়, তাহলে আমরা আবার আদালতে যাবো। বিষয়টি তুলে ধরে সুরাহা চাইবো, যাতে জটিলতার অবসান ঘটে।’

রিটকারী শিক্ষকদের একজন গাইবান্ধার পলাশবাড়ির সুলতানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. রাফিউল ইসলাম রাফি। তিনি বলেন, ‘১ জুলাই আবেদন শুরু হয়। জটিলতা নিরসনে হলে আমরা অনেক পরে আবেদনের সুযোগ পাই। প্রথম দফায় জটিলতা নিরসনের পর ৪-৫ দিন নতুন শিক্ষকরা আবেদন করার সুযোগ পান। এর মধ্যেই অন্তত ২০ হাজার নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক এটিইও পদে আবেদন করেছেন। এজন্য ৫০০ টাকা করে নেওয়াও হয়েছে। অথচ হঠাৎ নিয়ম পাল্টে ফেলা হলো। আবারও সেই দুই বছরের অভিজ্ঞতা যুক্ত করা হয়েছে। এ নিয়ে আমরা উচ্চ আদালতে রিট করেছি। সেখানে আমরা নীতিমালাসহ যেসব নথিপত্র জমা দিয়েছে, তাতে আদালত সন্তুষ্টি প্রকাশও করেছেন।’

তিনি বলেন, ‘আদালতের পরামর্শ অনুযায়ী আমরা একমাস দেখবো। পিএসসি এ সময়ের মধ্যে আমাদের (নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক) সুযোগ না দিলে ফের আদালতে যাবো। আইনি প্রক্রিয়ায় শিক্ষকরা এ পদে আবেদনের যে ন্যায্য সুযোগ, তা আদায় করে নেবেন।’

রিটকারী আরেকজন মো. ইউনুস তালুকদার। তিনি চাঁদপুরের হাইমচরের ৭১নং মুন্সিরকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। ইউনুস তালুকদার বলেন, ‘পিএসসি বিজ্ঞপ্তি পাল্টে যেভাবে নতুন নিয়ম যুক্ত করেছে, তাতে আমরা নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকরা হতাশ। পিএসসির আবেদন নির্দেশিকায় বিভাগীয় প্রার্থী বলতে নতুন করে দুই বছরের যে অভিজ্ঞতা আবারও উল্লেখ করা হয়েছে, তা আমাদের মন্ত্রণালয়ের (প্রাথমিক ও গণশিক্ষা) নিজস্ব নিয়োগ বিধিমালা ১৯৮৫ (সংশোধিত ১৯৯৪) ও ২০০৩-এর পরিপন্থি। আশা করছি, দ্রুত পিএসসি এটা সংশোধন করে আমাদের আবেদন করার সুযোগ দেবে। তা না হলে আমরা আবারও আদালতে যাবো।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিএসসির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘যতটুকু জেনেছি, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাধারণ নিয়োগ বিধিমালা অনুযায়ী- দশম গ্রেডের এটিইও পদে বিভাগীয় প্রার্থীর ক্ষেত্রে দুই বছরের অভিজ্ঞতা প্রযোজ্য। যদিও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য এটা প্রযোজ্য নয় বলে বলা হচ্ছে। এটা অধিকতর যাচাইয়ের জন্য আবেদন স্থগিত করা হয়েছে। নতুন করে নির্দেশনা দেওয়ার পর আবারও অনলাইনে আবেদনের সুযোগ দেওয়া হবে।

যারা আবেদন করেছেন, তাদের ব্যাপারে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‍‍`দুই বছর অভিজ্ঞতা নেই, এমন শিক্ষকরা যদি আর আবেদন করার সুযোগ না পান, তাহলে যারা এ পর্যন্ত আবেদন করেছেন তাদের আবেদন ফি ফেরত দেওয়া হতে পারে অথবা অন্য ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।‍‍` তবে এ বিষয়ে এখনো কোনো আলোচনা বা সিদ্ধান্ত হয়নি বলেও জানান পিএসসির এ সদস্য।

আরএস