তিন দফা দাবি

অনির্দিষ্টকালের জন্য জ্বালানি তেল উত্তোলন-পরিবহন বন্ধের আল্টিমেটাম

মো. মাসুম বিল্লাহ প্রকাশিত: জুলাই ৯, ২০২৩, ০৩:২৪ পিএম
অনির্দিষ্টকালের জন্য জ্বালানি তেল উত্তোলন-পরিবহন বন্ধের আল্টিমেটাম

১ আগস্ট থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সারাদেশে জ্বালানি তেল উত্তোলন ও পরিবহন বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। রোববার (৯ জুলাই) দুপুরে জ্বালানি তেল বিক্রয়ের উপর কমিশন বৃদ্ধিসহ তিন দফা দাবিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে কি-নোট পেপার উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ট্যাংকলরী ওনার্স এসোসিয়েশন কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব শেখ ফরহাদ হোসেন।

তিন দফা দাবিগুলো হলো, জ্বালানি তেল পরিবহনকারী ট্যাংকলরীর ইকোনমিক লাইফ ৫০ বছর করতে হবে, জ্বালানি তেল বিক্রয়ের উপর প্রচলিত কমিশন কমপক্ষে ৭.৫ শতাংশ করতে হবে, জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীরা কমিশন এজেন্ট বিধায় প্রতিশ্রুতি মোতাবেক সুস্পষ্ট গেজেট প্রকাশ করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, জ্বালানি তেল বিক্রয়ের উপর ডিলার্স কমিশন বৃদ্ধির দাবি জ্বালানি ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের। তবে বারবার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা এখনও বাস্তাবায়ন হয়নি। জ্বালানি তেলের মূল্য যখন ৬০ টাকা ছিল তখন যে হারে কমিশন প্রদান করা হতো, তেলের মূল্যে দিগুণ হওয়ার পরও প্রায় একই হারে কমিশন প্রদান করছে। অথচ তেল ক্রয়ে ডিলার/এজেন্টদের দিগুণ ইনভেস্ট করতে হচ্ছে, একই সঙ্গে জিনিসপত্রের মূল্যের ঊর্ধ্বগতির ফলে কর্মচারীর বেতন অনেকাংশ বৃদ্ধি করতে হয়েছে। এছাড়া সব লাইসেন্স ফি প্রায় দিগুণ করা হয়েছে, বিদ্যুতের মূল্যে বৃদ্ধিসহ ট্যাংকলরীর পার্টসের মূল্যে দিগুণ হয়েছে। পাশাপাশি যেখানে অটো গ্যাস স্টেশন (LPG) প্রতি লিটার ৪৬.৫০ টাকা বিক্রয় করে ৮ টাকা অর্থাৎ ১৭ শতাংশ কমিশন পাচ্ছে, সেখানে ১৩০ টাকা পেট্রোল/অকটেন বিক্রয় করে ৪ টাকা অর্থাৎ ৩ শতাংশ কমিশন দেওয়া হচ্ছে। ফলে এলপিজি থেকে প্রায় তিনগুণ বেশি অর্থ বিনিয়োগ করে জ্বালানি ব্যবসায়ীদের নূন্যতম কমিশন দেওয়া হচ্ছে এবং যা দীর্ঘদিন ধরে একই জায়গায় অবস্থান করছে।

এছাড়া তেলের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির পর থেকে তেল বিক্রয় অর্ধেকে নেমে গেছে। ফলে আয়ও কমে গেছে কারণ বিক্রয়ের উপরই আমাদের কমিশন নির্ভরশীল। অথচ সংশ্লিষ্টরা সব কিছু অবগত আছেন এবং আমাদের সঙ্গে বারবার বৈঠক করে কমিশন বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি ও সুপারিশ পেশ করে শুধু কালক্ষেপণ করে চলেছেন। জ্বালানি ব্যবসায়ীরা আশাহত হয়ে অস্তিত্ব সংকটে ভুগছেন। দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভুত এ সমস্যা ও সংকটের আবর্ত থেকে বের হয়ে আসার জন্য আজকের সংবাদ সম্মেলনের মধ্যে দিয়ে জ্বালানি তেলের মূল্যে হ্রাস/বৃদ্ধির সঙ্গে জ্বালানি তেল বিক্রয়ের উপর ডিলার্স কমিশন ৭.৫ শতাংশ করার জোর দাবি জানাচ্ছি। একইসঙ্গে পূর্ব প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী জ্বালানি তেলের মূল্যে হ্রাস/বৃদ্ধির সঙ্গে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডিলার্স কমিশন ও ট্যাংকলরী ভাড়া বিষয়টি নিশ্চিতকরণের দাবি জানাচ্ছি।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, একমাত্র জ্বালানি তেল ক্রয় এবং বিক্রয় সরকার নির্ধারিত অভিন্ন মূল্যে হয়ে থাকে। জ্বালানি তেল বিক্রয়ের উপর সরকার নির্ধারিত হারে কমিশন প্রদান করে থাকে। ফলে ফিলিং স্টেশনের আয় বৃদ্ধির কোনো সুযোগ নাই। জ্বালানি ব্যবসায়ীরা সরকার নির্ধারিত মূল্যে জ্বালানি তেল ক্রয়পূর্বক সরকার নির্ধারিত মূল্যে বিক্রয় করে স্বল্প কমিশন পেয়ে থাকে। ফলে জ্বালানি ব্যবসায়ীরা শতভাগ কমিশন এজেন্ট। তাই জ্বালানি তেল বিপণন কাজে নিয়োজিতদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে গেজেটের মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের অবস্থান/মর্যাদা কমিশন এজেন্ট ঘোষণার জোর দাবি জানাচ্ছি। এক্ষেত্রে দ্বৈত লাইসেন্সসহ বিভিন্ন আইনি ও প্রশাসনিক জটিলতা এড়ানো সম্ভব। এরূপ হলে সরকারি বিভিন্ন দপ্তর কর্তৃক ফিলিং স্টেশন সংক্রান্ত এসআরও এককভাবে জারির প্রবণতা হ্রাস পাবে। এ সংক্রান্ত যাবতীয় দায়িত্ব বিপিসি বা জ্বালানি কোম্পানি বহন করবে। এই সকল সমস্যার প্রতিকারের স্বার্থে এবং তিন দফা দাবি আগামী ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করা না হলে আগামী ১ আগষ্ট থেকে অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত সব ব্যবসায়ীরা জ্বালানি তেল উত্তোলন ও পরিবহনে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। যা আজকের সংবাদ সম্মেলনের মধ্যে দিয়ে ঘোষণা দেওয়া হলো।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ট্যাংকলরী ওনার্স এসোসিয়েশন খুলন বিভাগীয় কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি এম মাহবুব আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ মিরাউল ইসলাম, বাংলাদেশ জ্বালানী তেল পরিবেশক সমিতি খুলনা বিভাগীয় কমিটির সভাপতি আব্দুল গফ্ফার বিশ্বাস, সহ সভাপতি মোড়ল আব্দুস সোবাহান, সাধারণ সম্পাদক শেখ মুরাদ হোসেন, আব্দুল মান্নান খান, শেখ জামিরুল ইসলাম, শেখ জাহাঙ্গীর হোসেন, রফিকুল ইসলাম নন্টু, কামাল হোসেন প্রমুখ।

আরএস