ভোটের আগে জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের (ইউএনও) জন্য ২৬১টি গাড়ি প্রতিস্থাপক হিসেবে কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এতে ব্যয় হবে ৩৮০ কোটি টাকা।
বুধবার সরকারি অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এ প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এ তথ্য।
সূত্র মতে, গত কয়েক বছরের মধ্যে এবারই বেশি সংখ্যক গাড়ি পাচ্ছেন মাঠপ্রশাসনের কর্মকর্তারা। শুধু তাই নয়, গাড়ি প্রাপ্যতার শর্ত শিথিল করে তাদের ২৭০০ সিসির গাড়ি দেওয়া হচ্ছে, যা গ্রেড-১ ও ২ (সচিব ও অতিরিক্ত সচিব) পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের প্রাধিকার। যদিও সরকারের কৃচ্ছ্রসাধনের নীতি বহাল আছে।
শর্ত শিথিল করে গাড়ি কেনার যৌক্তিকতা তুলে ধরতে গিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও পরিবহণ সেবা স্বাভাবিক রাখতে এ গাড়ি কেনা প্রয়োজন।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, প্রতিটি গাড়ির মূল্য ধরা হয়েছে এক কোটি ৪৫ লাখ টাকা এবং রেজিস্ট্রেশন ফি ৮০ হাজার ৫শ টাকা। এ হিসাবে একটি গাড়ি কিনতে মোট ব্যয় হবে এক কোটি ৪৫ লাখ ৮৪ হাজার ৫শ টাকা।
সূত্র বলছে, এসব গাড়ি কেনার ব্যয় সরাসরি বাজেট থেকে দেওয়া হয়নি। মোট ব্যয়ের ৩৮০ কোটি টাকার মধ্যে চলতি বাজেটের অপ্রত্যাশিত খাত থেকে ২১০ কোটি টাকা, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিবালয়ের অংশ থেকে ১১০ কোটি টাকা এবং সরকারি যানবাহন অধিদপ্তরের নিজস্ব বাজেট থেকে ৬০ কোটি টাকার সংস্থান করা হয়েছে। সরকারের কৃচ্ছ্রসাধন নীতির আওতায় নতুন গাড়ি কেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে অর্থ বিভাগের। এজন্য এ খাতের পুরো বরাদ্দ স্থগিত আছে।
তবে অর্থ বিভাগের নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে সুকৌশলে গাড়ি কেনার একটি সুযোগও রাখা আছে। সেটি হলো-১০ বছরের অধিক পুরোনো গাড়ি ব্যবহার অযোগ্য হয়ে পড়লে সেক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত উল্লেখ করে নতুন গাড়ি কেনার প্রস্তাব দেওয়া যাবে। এ প্রক্রিয়ায় গাড়ি কেনাকে বলা হয়েছে, প্রতিস্থাপন। তবে এবারের গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে ১০ বছরের সময়সীমাকে বাড়িয়ে ১৪ বছর করা হয়েছে। কেননা, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মনে করেন- কোনো নতুন গাড়ি ১০ বছর পর চলাচলের জন্য অযোগ্য হয় না।
দেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরু হওয়ার বছর অর্থাৎ ২০২০ সাল থেকে সরকারি খাতে গাড়ি কেনা, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিদেশ সফরসহ বিভিন্ন বিষয়ে ব্যয় সাশ্রয়ী পদক্ষেপ গ্রহণের নীতি জারি করে সরকার। যা চলতি অর্থবছরেও বহাল রাখা হয়েছে।
এখন গাড়ি কেনার প্রস্তাবের যৌক্তিকতা উল্লেখ করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বলছে, সরকারি যানবাহন কেনার ১০ বছর পর সংশ্লিষ্ট যান প্রতিস্থাপকের বিধান আছে। চলমান অর্থনৈতিক মন্দা বিবেচনায় প্রথমে ১৩ বছর বা তারও পুরোনো এবং ব্যবহার অনুপযোগী ৪৬১টি গাড়ির চাহিদা দিয়েছিল সরকারি যানবাহন অধিদপ্তর। এটি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিষ্ঠান, যারা সরকারি যানবাহন ক্রয়, মেরামত এবং ভিভিআইপিসহ প্রাধিকারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের গাড়ি বরাদ্দসহ এ সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করে।
আরএস