স্মার্ট কৃষির অগ্রযাত্রায় বিশেষ অবদান রাখছেন ড. মো. শাহ কামাল খান

মো. মাসুম বিল্লাহ প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৭, ২০২৩, ০২:১৬ পিএম
স্মার্ট কৃষির অগ্রযাত্রায় বিশেষ অবদান রাখছেন ড. মো. শাহ কামাল খান
ড. মো. শাহ কামাল খান

কৃষির সাফল্য ও বহুমুখী কৃষি পণ্য উৎপাদনের জন্য বহির্বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ একটি রোল-মডেল। প্রসংশনীয় বৈচিত্র্যময় কৃষিপণ্য উৎপাদন ও রপ্তানির জন্য বাংলাদেশ বহির্বিশ্বের জন্য একটি হাব হয়ে উঠতে পারে। তার জন্য দরকার স্মার্ট কৃষি ও তার সফল বাস্তবায়ন। স্মার্ট কৃষি বলতে খামারে ইন্টারনেট অব থিংস, অটোমেশন, রোবটিক্স, সেন্সর, লোকেশন সিস্টেম এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো প্রযুক্তির ব্যবহারকে বোঝায়।  স্মার্ট কৃষির তিনটি প্রধান উদ্দেশ্য হলো টেকসই কৃষি উৎপাদনশীলতা ও আয় বৃদ্ধি করা; জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়ানো এবং স্থিতিস্থাপকতা তৈরি করা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানের জন্য কৃষিকে স্মার্ট করা এখন সময়ের দাবি। বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে স্মার্ট বাংলাদেশের স্মার্ট কৃষির অগ্রযাত্রায় বিশেষ অবদান রেখে চলেছেন বিশ্ব ব্যাংক-এর অর্থায়নকৃত কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কর্তৃক সারাদেশ ব্যাপি বাস্তবায়নাধীন কৃষি মন্ত্রণালয়ের “কৃষি আবহাওয়া তথ্য পদ্ধতি উন্নতকরণ প্রকল্প”-এর প্রকল্প পরিচালক ড. মোঃ শাহ কামাল খান।

প্রকল্প পরিচালক ড. মোঃ শাহ কামাল খান-এর ব্যক্তিগত ও আন্তরিক ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় প্রকল্পের নির্ধারিত কার্য্যক্রমের বাহিরে বাংলাদেশের কৃষিতে পানি ও জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে আনতে বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ইন্টিগ্রেটেড রাইস অ্যাডভাইজরি সিস্টেম (আইআরএএস) শীর্ষক একটি স্মার্ট মডেল উদ্ভাবন করা হয়েছে। মডেলটি তৈরি হয়েছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (NASA) নাসা’র স্যাটেলাইটে ধারণ করা সেচ মানচিত্র ব্যবহার করে যা দেশের কৃষিতে নিয়ে এসেছে এক অসাধারন মাত্রা। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহায়তায় তৈরি মডেলটিতে জমিতে পানির পরিমান, ফসলে পানির চাহিদা ও বৃষ্টিপাতের পু্র্বাভাস বিবেচনা করে জমিতে সেচ প্রয়োজন আছে কিনা সে বিষয়ে কৃষককে সুনির্দিষ্ট পরামর্শ প্রদান করা সম্ভব হবে। নাসা’র স্যাটেলাইট ভিত্তিক ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভাবিত এই অত্যাধুনিক ফলপ্রসু মডেল কাজে লাগিয়ে কৃষকদের আগে থেকেই পূর্বাভাস দেয়া গেলে পানির অপচয় রোধ হবে অন্তত ৩০ শতাংশ। পাশাপাশি জ্বালানির ব্যবহার কমানো সম্ভব ৩০ শতাংশ পর্যন্ত। এতে দেশের প্রায় ১২১০ কোটি টাকার জ্বালানি সাশ্রয় হবে। এছাড়া বছরে প্রায় তিন লাখ টন কার্বন নিঃসরণও কমানো সম্ভব হবে যা দেশের ও বৈশ্বিক জলবায়ুর জন্য ইতিবাচক।

প্রকল্প পরিচালক ড. মো. শাহ কামাল খান বলেন, ‘আমাদের দেশে খরার সমস্যা রয়েছে। কৃষক ফসল উৎপাদনে মূলত ঢালাও সেচ দেন। সেচ পাম্প মালিকদের সঙ্গে কৃষক পুরো একটি মৌসুমের চুক্তি করেন। ফলে কৃষক সবসময় চান তার জমিতে যেন পানি ভরপুর থাকে। কিন্তু উৎপাদন ভালো হওয়ার জন্য সবসময় পানি থাকা অপরিহার্য নয়। সেচ মডেলটি মূলত এডব্লিউডি প্রযুক্তির আধুনিক ভার্সন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এ মডেলের মাধ্যমে নাসার ম্যাপ ব্যবহার করে আমরা একটি মডেল তৈরি করতে পেরেছি। কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তাদের মাধ্যমে এ প্রযুক্তি থেকে পাওয়া তথ্য কৃষকদের কাছে পৌঁছে দিতে পারলে পানি, জ্বালানি ও অর্থ সাশ্রয় সম্ভব হবে। আমরা ফিল্ড ট্রায়ালে এর কার্যকরিতা পেয়েছি। এ কর্মসূচির জন্য ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সমঝোতা স্বাক্ষর হয়েছে। আমাদের দেশে এ ধরনের স্যাটেলাইট নেই। নাসা এগিয়ে এসেছে। নাসার এ স্যাটেলাইট খুব কাছের তথ্য দিতে পারে। প্রতি শতাংশ জমির আলাদাভাবে তথ্য দেয়া সম্ভব হবে। এ মডেলটি ভিত্তি করে আখ, গম, ভুট্টা প্রভৃতি ফসলের জন্য মডেল তৈরী পূর্বক জমিতে অনুরুপ সাশ্রয়ী ও লাভজনক সেচ ব্যবস্থাপনা করা সম্ভব হবে।’


ড. মোঃ শাহ কামাল খান ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয় ও নাসা’র সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি নাসা’র আমন্ত্রণে সেখানে গমন করেন, ফলপ্রসু মিটিং করেন, সুসস্পর্ক প্রতিষ্ঠা করেন এবং বিশ্ববিখ্যাত নাসা’র আধুনিক প্রযুক্তি বাংলাদেশের কৃষিতে ব্যবহার করার বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন যা সত্যিই প্রসংশনীয় ও গর্বের।

 

বিশ্ব ব্যাংক-এর অর্থায়নকৃত কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কর্তৃক সারাদেশ ব্যাপি বাস্তবায়নাধীন কৃষি মন্ত্রণালয়ের “কৃষি আবহাওয়া তথ্য পদ্ধতি উন্নতকরণ প্রকল্প”-এর প্রকল্প পরিচালক হিসেবে যোগদান করার পর থেকে ড. কামালের অসাধারণ প্রতিভা, সৃজনশীলতা ও নিরলস পরিশ্রমের কারণে দেশের কৃষি আবহাওয়া সেক্টরে এসেছে নতুন মাত্রা, হয়েছে স্মার্ট। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন, স্মার্ট এবং যুগোপযোগী এ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের কৃষি উৎপাদন টেকসই করার লক্ষ্যে ক্লাইমেট স্মার্ট এগ্রিকালচার নিশ্চিত করার প্রত্যয়ে কৃষকের কাছে কৃষি আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে এবং আবহাওয়া ও জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাবসমূহের সাথে কৃষকের খাপ খাওয়ানোর সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। কৃষি ক্ষেত্রে আবহাওয়া সংক্রান্ত ঝুঁকি মোকাবিলার জন্য কৃষি আবহাওয়া এবং নদ নদীর সামগ্রিক অবস্থা সম্পর্কিত তথ্যাদি কৃষকের উপযোগী ভাষায় বিভিন্ন আধুনিক ও আইসিটি নির্ভর সম্প্রসারণ পদ্ধতির মাধ্যমে সময়মত কৃষকের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।

প্রাপ্ত তথ্য ও কৃষি আবহাওয়া পরামর্শ কাজে লাগিয়ে কৃষকগণ প্রতিকূল আবহাওয়া মোকাবিলার পাশাপাশি অনুকূল আবহাওয়ায় করণীয় বিষয়ক তথ্যসমূহ সদ্ব্যবহার করে মাঠের ফসল রক্ষা, অর্থের সাশ্রয় ও উৎপাদন বৃদ্ধি করে যাচ্ছেন। প্রকল্পের সফল বাস্তবায়ন করে কৃষিতে আধুনিক পূর্বাভাসের মাধ্যমে দেশের কৃষি ‍উন্নয়নে অসাধারণ অবদান রেখে চলেছেন চৌকস ও মেধাবী এই কর্মকর্তা। একজন অসাধারণ প্রতিভাবান, প্রগতিশিল ও সৃজনশীল কর্মকর্তা হিসেবে কৃষি আবহাওয়া পরামর্শ তৈরীতে অটোমেশন, সাব-সিজনাল টু সিজনাল ফোরকাস্ট চালু, অটোমেটিক ওয়েদার স্টেশন স্থাপন, স্মার্ট ডিভাইস কিওস্ক ও ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ড স্থাপন প্রভৃতিতে কৃষিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial Intelligence) ব্যবহার করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশের স্মার্ট কৃষির অগ্রযাত্রায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন তিনি।