রাজধানীতে জ্বলে না ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: জুন ১৭, ২০২৫, ১২:১৫ এএম
রাজধানীতে জ্বলে না ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি

রাজধানীর সড়কে ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি চোখে পড়লেও তা জ্বলে না, কোনো কাজ করে না। অথচ ওসব সিগন্যাল বাতি গত দুই দশকে বিশ্বব্যাংক, জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) মতো ঋণদাতা সংস্থার অর্থে স্থাপিত হয়েছে। 

এক সমীক্ষায় যানজট নিরসনে রাজধানীর মোট ১৭৮টি স্থানে ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি থাকার কথা উঠেছে। তার মধ্যে কেবল গুলশান ২ নম্বরে সিগন্যাল বাতি সচল আছে। তবে বাতি জ্বললেও সেখানে হাতের ইশারায়ই পুলিশ গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করে। স্থাপিত সিগন্যাল বাতিগুলোর এমন বেহাল দশার মধ্যে নতুন করে সরকার আবার একই উদ্যোগ নিয়েছে। 

মূলত ঢাকার পরিবহন খাতে কোনো ধরনের কাঠামোগত সংস্কার না করে সিগন্যাল বাতিগুলো শুধু প্রকল্প হিসেবে স্থাপন করা হয়েছে। যে কারণে সেগুলো কাজ করেনি। পরিবহন খাত সুশৃঙ্খল করতে না পারলে নতুন করে সিগন্যাল বাতি স্থাপন করা হলেও তা কাজে আসবে না। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। 

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, অতীতে ঢাকায় সিগন্যাল বাতি স্থাপনের জন্য চার পাঁচবার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এমনকি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসহ উন্নত প্রযুক্তির অবকাঠামো নির্মাণ ও উপকরণও আনা হয়েছিল। কিন্তু কোনোটিই কাজ করেনি। কারণ ঢাকায় বিদ্যমান নেই সিগন্যাল বাতি কার্যকরের কোনো ব্যবস্থাই। বরং বর্তমান ব্যবস্থায় যত ভালো প্রযুক্তির সিগন্যাল বাতিই আনা হোক না কেন তা কাজ করবে না। কিন্তু তারপরও সরকার ঢাকা মহানগরের জন্য প্রণীত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা (এসটিপি) দ্বিতীয়বারের হালনাগাদের উদ্যোগ নিয়েছে। এরই মধ্যে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ)সর্বশেষ হালনাগাদ এসটিপি ২০২৫-এর একটি খসড়া প্রকাশ করেছে। 

সূত্র জানায় ঢাকায় প্রথমবারের মতো ষাটের দশকে সিগন্যাল বাতি স্থাপন করা হয়। কিন্তু ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সেগুলো অকেজো হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে ১৯৯৯ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাংকের ঋণে ঢাকার ৬৮টি স্থানে সিগন্যাল বাতি স্থাপন করা হয়। ওই সময় ওসব বাতির পেছনে বর্তমান বাজারমূল্যে প্রায় ৫ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার খরচ হয়। কিন্তু চালুর পর খুব একটা কাজ করেনি ওসব বাতি এবং ২০০৯ সালের মধ্যে সবই অকার্যকর হয়ে পড়ে। তারপর বিশ্বব্যাংকের ঋণে ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়নে আরেকটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। ওই প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকায় সব মিলিয়ে ৯১টি ইন্টারসেকশনে সিগন্যাল বাতি গড়ে তোলা হয়।

ওই বাতিগুলোও কোনো কাজে আসেনি। তারপরও ২০১৪ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে জাইকার ঋণে ঢাকার চারটি ইন্টারসেকশনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন সিগন্যাল বাতি স্থাপন করা হয়। সেগুলোও অকার্যকর অবস্থায় পড়ে আছে। ঢাকা মহানগরের ১৭৮টি স্থানে সিগন্যাল বাতির উপস্থিতি আছে। তবে কেবল গুলশান ২ নম্বরে বাতি কার্যকর (জ্বলে-নিভে) আছে। এমন পরিস্থিতিতেই ঢাকায় নতুন করে সিগন্যাল বাতি স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে বর্তমান সরকার। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ২২টি মোড়ে নতুন করে ওসব ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি বসানো হচ্ছে। তাতে প্রায় ১৮ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। 

সূত্র আরও জানায়, অতীতে একাধিকবার দাতা সংস্থাগুলোর সহায়তায় সড়কে ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি বসানো হলেও তা কোনো কাজে আসেনি। ফলে নতুন করে সিগন্যাল বাতি স্থাপনের আগে তা খতিয়ে দেখা জরুরি। কারণ সিগন্যাল বাতি তখনই কাজ করবে, যখন ঢাকার পরিবহন খাত সুশৃঙ্খল হবে। সব যানবাহন নিয়ম মেনে চলবে। পথচারীদের জন্য প্রয়োজনীয় ফুটপাত থাকবে। পার্কিংয়ের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা থাকবে। এমনকি কোম্পানিভিত্তিক বাস পরিষেবার মতো বিষয়গুলো থাকবে। 

এদিকে এ বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী শেখ মইনউদ্দিন জানান, ঢাকায় একটি মডেল সড়ক নির্মাণের পরীক্ষামূলক উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সেজন্য হাইকোর্ট থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত রুটটিকে নির্বাচন করা হয়েছে। এরই মধ্যে ওই সড়কের বিভিন্ন স্থানে সিগন্যাল বাতি বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। আর এ বাতিগুলো সরকারের পরিকল্পনার একটি অংশ মাত্র।

সিগন্যাল বাতি ছাড়াও পুরো করিডরটিতে প্রয়োজনীয় সাইন সিগন্যাল দেয়া হবে। জেব্রা ক্রসিং থাকবে, কাউন্টাডাউন টাইমার থাকবে। বাসে যাত্রী ওঠা-নামানোর জন্য জায়গা নির্ধারণ করে দেয়া হবে। পুরো করিডরের ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণের জন্য ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি প্রশিক্ষিত শিক্ষার্থীদের নিযুক্ত করা হবে। এ মডেল সড়ক কাজ করলে ঢাকার অন্যান্য সড়কেও একই উদ্যোগ নেয়া হবে।