অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ড. ইউনূসের প্রেস সচিব সম্প্রতি সাংবাদিকদের এক অনানুষ্ঠানিক ব্রিফিংয়ে উল্লেখ করেছেন, "জাতীয় সংসদ নির্বাচন জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি, মার্চ, এপ্রিল অথবা জুনে অনুষ্ঠিত হতে পারে, তবে জুনের পর আর কোনোভাবেই নির্বাচন পেছাবে না।"
তার এই বক্তব্য রাজনৈতিক অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে বিএনপি এই ঘোষণার বাস্তবায়ন নিয়ে প্রকাশ্যেই সন্দেহ প্রকাশ করেছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক বিবৃতিতে বলেন, "আমরা অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের নিশ্চয়তা ছাড়া দিনক্ষণ ঘোষণা শুধুই জনগণকে বিভ্রান্ত করার কৌশল।"
তিনি তার বক্ত্যব্যে আরও যোগ করেন, "নির্বাচনের সময়সূচি নয়, প্রক্রিয়া নিয়ে আস্থার সংকট এখন সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।"
নির্বাচন নিয়ে আশাবাদী এমসিপি, তবুও শর্ত আছে
মধ্যপন্থি রাজনৈতিক দল এমসিপির (মিডল ক্লাস পিপলস্ পার্টি) সাধারণ সম্পাদক ড. হানিফ কায়সার এই ইস্যুতে অপেক্ষাকৃত সংযত প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন।
তিনি বলেন, "নির্বাচনের একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা জানানো আশার আলো দেখায়, তবে সেই সময়ের মধ্যে সকল রাজনৈতিক দলের জন্য সমান সুযোগ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে তা অর্থহীন হবে।"
এমসিপি একাধিকবার "সমঝোতার নির্বাচন" চেয়ে আসছে যাতে বৃহৎ দুই জোটের বাইরে থাকা দলগুলোর কণ্ঠস্বর এবং প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হয়।
অন্যান্য দল ও বিশ্লেষকদের প্রতিক্রিয়া
ছোট ও নবীন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এই ঘোষণাকে কেউ কেউ স্বাগত জানালেও, অধিকাংশ দল প্রক্রিয়া ও পরিবেশ নিয়ে উদ্বিগ্ন।
বিকল্পধারা বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব জহির বলেন, "নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণের আগে রাজনৈতিক সংকট নিরসনে কার্যকর সংলাপের দরকার ছিল।"
রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক সেলিম মাহমুদ বলেন, "এই ধরনের সময়সীমা জনমনে স্বস্তি দিতে পারে, কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা অর্জন না করলে এটি ফলপ্রসূ হবে না। বিশেষ করে বিএনপি যদি নির্বাচনে না আসে, তাহলে নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাবে।"
জুনের পরে নির্বাচন নয়—সরকারের কৌশল নাকি সময়মতো হস্তান্তরের অঙ্গীকার?
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ঘোষণার পেছনে আন্তর্জাতিক চাপ, উন্নয়ন প্রকল্পের সময়সীমা, এবং অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণের কৌশলগত পরিকল্পনা রয়েছে।
অনেকেই বলছেন, সরকারের এই বক্তব্য পশ্চিমা দেশগুলো ও দাতা সংস্থাগুলোর কাছে একটি বার্তা: নির্বাচন অনির্দিষ্টকালের জন্য পিছিয়ে দেওয়ার কোনো ইচ্ছা নেই।
নির্বাচনকে সামনে রেখে যে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে, তা নিরসনে শুধুমাত্র একটি তারিখ উল্লেখ যথেষ্ট নয়—প্রয়োজন বিশ্বাসযোগ্যতা, অংশগ্রহণমূলক প্রক্রিয়া এবং সব দলের জন্য সমান ক্ষেত্র। প্রেস সচিবের বক্তব্য হয়তো একটি বার্তা, তবে তা বিশ্বাসে রূপ নিতে হলে পরবর্তী পদক্ষেপ হবে নির্ধারক।
ইএইচ