ইশরাক হোসেন

সরকার শপথ না পড়ালে নিজের শপথ নিজেই পড়বো

আমার সংবাদ ডেস্ক প্রকাশিত: জুন ৩, ২০২৫, ০৬:৩৩ পিএম
সরকার শপথ না পড়ালে নিজের শপথ নিজেই পড়বো

সরকার শপথ না পড়ালে নিজেই শপথ নিয়ে মেয়রের চেয়ারে বসার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন।

‘বহিরাগত’ কোনো প্রশাসক ও উপদেষ্টাকে নগর ভবনে ঢুকতে দেওয়া হবে না- এমন কথাও বলেছেন তিনি।

মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় নগর ভবনের দোতলায় বানানো মঞ্চে দাঁড়িয়ে সমর্থকদের উদ্দেশে এসব কথা বলেন ইশরাক।

তিনি বলেন, “আপনারা দেখেছেন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এবং তার কতিপয় উপদেষ্টা পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে আমাদের এই নির্বাচনের রায়ের পরে তালবাহানা করেছে। আমাকে শপথ না পড়ানোর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সংবিধান লঙ্ঘন করেছে, নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা তারা অসম্মান করেছে।

“তারা আইন আদালত মানে না, তারা নির্বাচন কমিশন মানে না। তারা সংবিধান মানে না, তাহলে তারা মানেটা কী? এই বাংলাদেশের মানুষ, আমরা যদি আগামী কাল থেকে তাদের না মানা শুরু করি, তাহলে এর দায়দায়িত্ব কে নেবে?”

অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করে ইশরাক বলেন, “পুরো বাংলাদেশ আমলে নিলে ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র খুবই সামান্য পদ। সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের পরেও শপথ পড়ানো নিয়ে যারা তালবাহানা করছে, কীভাবে তাদের অধীনে আগামী দিনে একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে, সেটা নিয়ে জনগণের মাঝে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।”

তিনি বলেন, “আমাদের এই আদালতের রায় এবং গেজেট প্রকাশের পর আমরা যখন বার বার সরকারের কাছে আবেদন লিখিতভাবে জানালাম, তারা কিন্তু তোয়াক্কা করল না। এরপর ঢাকা দক্ষিণের ভোটাররা রাজপথে নেমে আসে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে। আমরা আমাদের দাবি আদায়ে এখান থেকে বের হয়ে যমুনা ঘেরাও দিয়ে দুই দিন অবস্থান করেছিলাম।

“তখন আমরা কি দেখতে পেলাম, জাতির সামনে একটা নতুন নাটক করা হলো। যেখানে পদত্যাগের নাটকের মাধ্যমে জাতিকে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে একটা নাটক মঞ্চস্থ করা হলো। রাষ্ট্র পরিচালনায় কোনো আবেগের বিষয় নেই। এখানে ১৮ কোটি মানুষের জীবনযাত্রায় জীবিকা নির্বাহের বিষয়। আবেগ দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করা যায় না। যখন ইচ্ছা নিলাম, যখন আমি বেজার হলাম পদত্যাগ করে চলে গেলাম- এ ধরনের কর্মকাণ্ড জনগণের কল্যাণময় কিছু হবে না।”

তিনি বলেন, “আমাদের দলের পক্ষ থেকে তিনজন উপদেষ্টার নাম বলে আসা হয়েছে অবিলম্বে তাদের পদত্যাগ চাই, যারা দেশ ও জাতির জন্য হুমকি, বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু আমরা এখন পর্যন্ত তাদের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা দেখতে পাই নাই।”

সরকার অবিলম্বে শপথ না পড়ালে ঢাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে শহীদ মিনারে নিজের শপথ নিজেই পড়ে চেয়ারে বসার ঘোষণা দেন ইশরাক।

তিনি বলেন, “ইতঃপূর্বে যখন আমরা যমুনা ঘেরাও করেছিলাম তখন কী হলো, নাটক মঞ্চস্থ করার পর বলা হল, এটার একটা সমাধান হবে। আমরা জনদুর্ভোগের কথা চিন্তা করে নিজেদের সিদ্ধান্তে সড়ক ছেড়ে দিয়েছিলাম; কারও নির্দেশনায় নয়।

“আমরা ভেবেছিলাম সরকার সুরাহা করবে। পরবর্তী সময়ে আমরা দেখলাম, টালবাহানার মাধ্যমে তাদের যে মুখোশ, সেটি উন্মোচিত করা হয়েছে।”

ইশরাক বলেন, “এই নগর ভবন দুই সপ্তাহ যাবৎ আমরাই নিয়ন্ত্রণে রেখেছি, আমরাই দখল করে রেখেছি। এই শপথ যদি তারা না পড়ায়, আমি গিয়ে আমার চেয়ারে বসতে পারি, দুই মিনিটও লাগবে না।

“ঢাকা শহরের জনগণ আমাকে বার বার বলেছে, কেন আমি শহীদ মিনারে গিয়ে শপথ পড়ে নিজেই কেন দায়িত্ব নিচ্ছি না। তখন আমি বলেছি, যেহেতু আমরা একটা নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল করি, আমাদের দলের পক্ষ থেকেও আমাদের নেতারা বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করেছে।”

তিনি বলেন, “বারবার নির্বাচন কমিশন, বার বার মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করা হয়েছে। কারণ আমরা নিয়মতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিচালনায় বিশ্বাসী। আমরা চাই না, একটা বাজে উদাহরণ সৃষ্টি হোক। কিন্তু এই সরকারকে বাধ্য হয়ে বলতে হচ্ছে, আপনারা যদি অভিলম্বে শপথ পড়ানোর ব্যবস্থা না নেন, তাহলে ঢাকা শহর দক্ষিণের ভোটারদের সঙ্গে নিয়ে আমি নিজেই শপথ পড়ে আমার চেয়ারে বসব।”

সরকারের কোনো উপদেষ্টা, স্থানীয় সরকারের কর্মকর্তা ও প্রশাসক- কাউকে নগরভবনে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দেন বিএনপি নেতা ইশরাক।

সচিবালয়ে আগুন লাগার পর থেকে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বসছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে। স্থানীয় সরকারের কর্মকর্তারাও নিয়মিত অফিস করছিলেন নগর ভবনে।

সেই প্রসঙ্গ তুলে ধরে ইশরাক বলেন, “নগর ভবন কীভাবে চলবে, সেটা ঢাকাবাসী নির্ধারণ করবে। কোনো বহিরাগত উপদেষ্টা বা বহিরাগত কোনো প্রশাসক দিয়ে এই নগর ভবন পরিচালনা করতে দেওয়া হবে না, হবে না। এটাই আমাদের শেষ কথা, শেষ বার্তা।”

ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাক বলেন, “এটা আমাদের সিদ্ধান্ত, এটা বাস্তবায়নের জন্য নগর ভবনের সর্বস্তরের কর্মকর্তা কর্মচারী ও নির্বাচিত কাউন্সিলর ও ঢাকার ভোটারদের বলছি- আমাদের নির্দেশনা ছাড়া বহিরাগত কাউকে এখানে বসতে দিব না।

“যা কিছু করতে হবে আমাদের অনুমতি নিয়ে করতে হবে। প্রয়োজনে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে আমরা প্রশাসক বসাবো। যতদিন পর্যন্ত আগামী নির্বাচন হচ্ছে না, ততদিন পর্যন্ত সব কার্যক্রমের অধিকার আমাদের কাছেই আছে। এটাই আমাদের বার্তা, এটাই আমাদের শেষ কথা।”

তিনি বলেন, “সামনে ইদ, জনগণের ভোগান্তি ও জনগণের যাতায়াতের কথা মাথায় রেখে আমরা বর্তমান নগর ভবনের অবরোধ এবং ঘেরাওয়ের কর্মসূচি কিছুটা শিথিল, কিছুটা বিরতি দিয়েছি।

“ছুটির পরে শপথ অনুষ্ঠানের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট বার্তা না এলে ঢাকা দক্ষিণের সর্বস্তরের জনগণেকে সামনে নিয়ে দুর্বার আন্দোলনের মাধ্যমে ঢাকাবাসীর ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করব।”

২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটির সবশেষ নির্বাচন হয়। তাতে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেনকে পৌনে ২ লাখ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে মেয়র হন আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপস।

ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর গেল ২৭ মার্চ ঢাকার নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল সেই ফল বাতিল করে অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে।

এরপর ২৭ এপ্রিল ইশরাককে ডিএসসিসি মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু তাকে যেন শপথ পড়ানো না হয় সেজন্য গত ১৪ মে হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বাসিন্দা ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মামুনুর রশিদ।

অন্যদিকে ইশরাককে শপথ পড়ানোর দাবিতে ওইদিনই আন্দোলন শুরু করেন তার সমর্থকরা। তাদের আন্দোলনে দুই সপ্তাহ ধরে কার্যত অচল হয়ে আছে নগর ভবন।

আইনি জটিলতার কথা বলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এখনো ইশরাককে শপথ পড়ানোর আয়োজন করেনি। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার পদত্যাগ দাবি করেন ইশরাক।

তার সমর্থকদের আন্দোলনের মধ্যে ‘শপথ না দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে’ দায়ের করা রিট আবেদনটি ২২ মে সরাসরি খারিজ করে দেয় হাই কোর্ট।

বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই আদেশ দেয়।

রিটকারীর এ ধরনের রিট করার এখতিয়ার না থাকার যুক্তিতে আবেদনটি খারিজ করে হাই কোর্ট।

হাই কোর্টের ওই আদেশের বিরুদ্ধে সোমবার আপিল বিভাগে আবেদন করেন রিটকারী আইনজীবী মামুনুর রশিদ। আবেদনে হাই কোর্টের আদেশ স্থগিত চাওয়া হয়।

সেই লিভ টু আপিলের শুনানি করে আপিল বিভাগ বৃহস্পতিবার বিষয়টি পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি করে দেয় বৃহস্পতিবার।

এই জটিলতায় নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করে সর্বোচ্চ আদালত বলেছে, নির্বাচন কমিশন এক্ষেত্রে তার সাংবিধানিক দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারেনি।

আরএস