আনিসুজ্জামান

দুর্নীতি দেখেও ঋণ দিয়েছে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক, তারা দায় এড়াতে পারে না

আমার সংবাদ ডেস্ক প্রকাশিত: জুন ২৮, ২০২৫, ০৭:৫২ পিএম
দুর্নীতি দেখেও ঋণ দিয়েছে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক, তারা দায় এড়াতে পারে না

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদা) ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেছেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থাগুলোও বাংলাদেশের অর্থনীতিতে দুর্নীতির জন্য দায় এড়াতে পারে না। তারা দুর্নীতি দেখেও ঋণ দিয়েছে, তখন সুশাসনের শর্ত কেন দেয়নি? প্রশ্ন করেন তিনি।

শনিবার (২৮ জুন) রাজধানীর ডিসিসিআই অডিটরিয়ামে বর্তমান ব্যাংকিং খাতের চ্যালেঞ্জ: ঋণগ্রহীতাদের দৃষ্টিকোণ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব মন্তব্য করেন।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকিন আহমেদের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক (মুদ্রানীতি বিভাগ) মো. এজাজুল ইসলাম। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রিভারস্টোন ক্যাপিটাল লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী ও ডিসিসিআই-এর সাবেক সভাপতি মো. আশরাফ আহমেদ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, এখন আইএমএফ বিভিন্ন শর্ত আরোপ করছে। অথচ এর আগে তারা দুর্নীতি দেখেও ঋণ দিয়েছে। তখন সুশাসনের শর্ত কেন দেয়নি? আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ঋণ নিয়ে কোনো দেশ অর্থনৈতিক ধস থেকে বাঁচতে পেরেছে বলে আমার জানা নেই। কিন্তু আমরা সেই আইসিইউ থেকে ফিরে এসেছি। আল্লাহর বিশেষ রহমতে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হয়েছে। তা না হলে আমাদের অর্থনীতির করুণ পরিণতি হতো।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আনিসুজ্জামান বলেন, মুদ্রানীতি ও রাজস্বনীতির মধ্যে সমন্বয় না ঘটালে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক কেবল নীতিসুদ বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে, যা এক ধরনের প্যারাসিটামলের মতো। অথচ নীতিসুদ না বাড়িয়েও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের পথ আছে উল্লেখ করে তিনি চীনের উদাহরণ টেনে বলেন, করোনার পরে পৃথিবীর সব দেশ নীতিসুদ বাড়ালেও চীন বাড়ায়নি। তারপরও সেখানে মূল্যস্ফীতি বাড়েনি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বিকল্প কৌশল খুঁজে বের করতে বাংলাদেশ ব্যাংককে পরামর্শ দেন তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. ইজাজুল ইসলাম বলেন, বিগত সময়ে আমাদের আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিশেষ কিছু পরিবারের মধ্যে কুক্ষিতগত করা হয়েছিল। যার ফলে এ খাতে অস্বচ্ছতা ও অস্থিতিশীলতা পরিলক্ষিত হয়েছে। জুলাই-আগস্টের পট-পরিবর্তনের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভের স্থিতিশীলতা ও মুদ্রা বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করার পর উদ্যোক্তাদের আস্থা ফিরে আসতে শুরু করেছে। এর সুফল বিশেষ করে দেশের বেসরকারি খাত দেখতে পাবে।

তিনি বলেন, আর্থিক খাতের বিদ্যমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতি মোকাবিলায় বেশকিছু নীতিমালা সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যা স্থিতিশীলতা আনায়নে সহায়তা করবে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতেও বেশ কিছু ব্যাংক বেশ ভালোভাবে ব্যবসা পরিচালনা করছে। যদিও তাদের ঋণের সুদের হার অনেক বেশি এবং ব্যাংকগুলো চাইলে তা হ্রাস করতে পারে। ফলে উদ্যোক্তারা আরও স্বস্তিতে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করতে সক্ষম হবেন।

তিনি জানান, গত বছরের আগস্টের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে প্রথম ধাপে ২৩ হাজার কোটি টাকা এবং পরবর্তীতে ১৯ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ বৃদ্ধি পাবে। মুদ্রা বিনিময় হারে স্থিতিশীলতা আসলে সামগ্রিক মূল্যস্ফীতিও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। সেই সুদহার বাজারভিত্তিক করতে হবে।

আনোয়ার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি হোসেন খালেদ বলেন, এসএমইরা আমাদের মূল চালিকা শক্তি এবং বড় উদ্যোক্তাদের সাপ্লই চেইনের অন্যতম অংশীদার। ফলে বৃহৎ শিল্প উদ্যোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হলে ব্র্যাকওয়ার্ড লিংকেজে এসএমইদের ওপর এর প্রভাব পড়বে।

তিনি বলেন, ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে গতানুগতিক ব্যাংক-ঋণ গ্রহীতার সম্পর্কের চাইতে ব্যাংকগুলোকে তার গ্রহীতার সঙ্গে অংশীদারত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর জোর দিতে হবে।

বিএবির চেয়ারম্যান আব্দুল হাই সরকার বলেন, আইএমএফসহ আন্তর্জাতিক দাতাসংস্থাগুলোর সঙ্গে সরকারের যোগাযোগ থাকলেও বেসরকারি খাতের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ততটা সুদৃঢ় নয়। ফলে অনেক ক্ষেত্রে তারা ব্যবসা ও বিনিয়োগের প্রকৃত পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত থাকেন না।

বিকেএমই’র নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, ভালো ঋণ গ্রহীতারা আর্থিক খাত থেকে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তি হতে বঞ্চিত হয়ে থাকেন।

আরএস