আমাদের এক দফা সরকারের পদত্যাগ: মির্জা ফখরুল

মো. মাসুম বিল্লাহ প্রকাশিত: নভেম্বর ৭, ২০২২, ০৯:০০ পিএম
আমাদের এক দফা সরকারের পদত্যাগ: মির্জা ফখরুল

গণতন্ত্র ফেরানোর আন্দোলনে ‘আরো ত্যাগ’ স্বীকারের প্রস্তুতি নিতে বললেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সোমবার (৭ নভেম্বর) বিকালে নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক উন্মুক্ত আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব নেতা-কর্মীদের প্রতি এই আহবান জানান।

তিনি বলেন,আমাদের এক দফা এক দাবি সরকারের পদত্যাগ, দফা এক শেখ হাসিনার পদত্যাগ। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে এবং নতুন একটা নির্বাচন কমিশন গঠন করে তার মাধ্যমে একটা নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে হবে। সেই নির্বাচনে জনগনের একটা সরকার গঠন হবে। আমরা ইতিমধ্যে অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছি, আমাদের অনেকেই গ্রেফতার হচ্ছেন, জেলে যাচ্ছেন, নিহত হচ্ছেন। আমাদেরকে আরো ত্যাগ স্বীকার করতে হবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমি বলতে চাই, গণতন্ত্রকে পেতে হলে, স্বাধীনতাকে রক্ষা করতে হলে, আমাদের অধিকারগুলো ফিরে পেতে হলে এই ত্যাগ স্বীকার করেই এর মধ্য দিয়ে আমাদেরকে সামনের দিকে আমাদের পতাকাকে উর্ধেব তুলে ধরতে হবে। ৭ নভেম্বরের পতাকা, আমাদের স্বাধীনতার পতাকাকে রক্ষা করতে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।

আসুন আমরা এই ৭ নভেম্বরে এই শপথ গ্রহন করি যে, আমরা সেই লক্ষ্যকে অর্জন না করে, এই সরকারের পদত্যাগ নিশ্চিত না করে, আমরা গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে না এনে, আমাদের অধিকারকে ফিরিয়ে না এনে আমরা আর ঘরে ফিরে যাবো না।

এই ব্য্যাপারে সকলে একমত কিনা জানতে চেয়ে নেতা-কর্মীদের ‘হ্যা’ সূচক জবাবের পর বিএনপি মহাসচিব বলেন,  চলেন আমরা সেই পথে এগিয়ে চলি। ৭ নভেম্বরের এই শপথ সফল হউক।

৭ নভেম্বরকে তাতপর্য্পূর্ণ দিন হিসেবে অভিহিত করে মির্জা ফখরুল বলেন, এই দিনটিতে দ্বিতীয়বার আমরা আমাদের স্বাধীনতাকে সুসংহত করেছিলাম। ৭ নভেম্বর সিপাহী-জনতার অভূতপূর্ব অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে বন্দিদশা থেকে বের করে নিয়ে এসে তারা এক নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করা হয়েছিলো এবং সেই সঙ্গে এক নতুন অধ্যায় সৃষ্টি হয়েছিলো সেটা ছিলো সত্যিকার অর্থে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ নির্মাণের, একটি সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ তৈরি করবার।

আমাদের নেতা জিয়াউর রহমান সেই কাজটি মাত্র চার বছরের মধ্যে তিনি সমস্ত বিভক্ত বাংলাদেশকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন, তিনি বদ্ধ অর্থনীতি থেকে মুক্ত অর্থনীতি নিয়ে এসেছিলেন, তিনি একদলীয় শাসনব্যবস্থা থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্র নিয়ে এসেছিলেন এবং দেশে তিনি বাক স্বাধীনতা, কথা বলার স্বাধীনতা, সংগঠনের স্বাধীনতা, মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি এই অল্প সময়ের মধ্যে সমগ্রজাতিকে নতুন স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। সেই স্বপ্নটা হচ্ছে একটা জাতি হিসেবে তৈরি হওয়ার স্বপ্ন।

১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান স্বপরিবারের নিহত হওয়ার পর সেনা প্রধানের দায়িত্ব আসেন জিয়াউর রহমান। এরপর মুক্তিযুদ্ধে অন্যতম সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে সেনা বাহিনীতে একটি অভ্যুত্থান হয়, জিয়া হন গৃহবন্দী। ৭ নভেম্বর মুক্তিযুদ্ধের আরেক সেক্টর কমান্ডার কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বে পাল্টা অভ্যুত্থানে আটকাবস্থা থেকে মুক্ত হন জিয়া। এর মধ্য দিয়ে ক্ষমতার কেন্দ্র বিন্দুতে চলে আসেন জিয়া।বিএনপি ৭ নভেম্বর দিবসটিকে ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ হিসেবে পালন করে।

দিবসটি উপলক্ষ্যে উপলক্ষে নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই উন্মুক্ত আলোচনা সভার আয়োজন করে বিএনপি। কার্যালয়ের সামনে অস্থায়ী মঞ্চ নির্মাণ করা হয়। সড়কে বিছানো মাদুরে বসে নেতা-কর্মীরা আলোচকদের বক্তব্য শুনে। নেতা-কর্মীদের অনেকের হাতে জাতীয় পতাকা ছিলো।

একই অনুষ্ঠানে বিএনপির  স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আজকে বর্তমানে তারা  আবার সেই অলিখিত বাকশাল চালাচ্ছে, বাংলাদেশে ঠিক একই অবস্থার সৃষ্টি করেছে। তাই জনগন আজকে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে এবং এই দিন আজকে গুরুত্বপূর্ণ। আসুন ৭ নভেম্বরের সেই স্পিরিটকে সামনে নিয়ে আমরা আজকে যারা অলিখিত বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছে তাদেরকে হটিয়ে এদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করি।

No description available.

মোশাররফ বলেন, ৭ নভেম্বরের মাধ্যমে জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন, অর্থনৈতিক মুক্তি দিয়েছেন, দেশকে বিদেশে আন্তর্জাতিকভাবে সন্মানের স্থানে নিয়েছেন। এই দেশকে আধুনিক ও উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য তিনি বিপ্লব সাধন করেছেন। তার পথ ধরে আজকে যে অর্থনৈতিক মুক্তি দিয়েছেন, আমাদের জাতি সত্ত্বার পরিচয় দিয়েছেন সেই পথ ধরে বাংলাদেশ চলছে।

বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি ও সহ প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিমের  সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ ইব্রাহিম বীর প্রতীক।


ইএফ