ঈদযাত্রায় এখন ব্ল্যাক টিকিটের চড়া দাম। জীবনের প্রতিশব্দ হয়ে দাঁড়িয়েছে ভোগান্তি আর হয়রানি। অথচ সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলছেন, ‘সড়ক-মহাসড়কে কোনো যানজট বা হয়রানি নেই। মানুষ নির্বিঘ্নে বাড়ি যেতে পারছে।’ এ যেন ডামি দায়িত্বশীলের মুখে দায়িত্বজ্ঞানহীন তামাশার মন্তব্য, এ যেন জনগণের সঙ্গে এক ডাহা মিথ্যাবাদীর ইয়ার্কি তামাশা। কিন্তু বাস্তবতা হলো, ঈদের প্রাক্কালে বিভিন্ন রুটে কিলোমিটারের পর কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটে ঘরমুখো যাত্রীরা এক দুর্বিষহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
রিজভী বলেন, ‘বিমানের ভাড়া কল্পনাতীত। ট্রেনে টিকিট পাচ্ছে না মানুষ। ট্রেনের টিকিট কাটার প্রক্রিয়াকে দিনদিন জটিলতর করা হচ্ছে। এতে ধীরে ধীরে এলিট শ্রেণির বাহনে পরিণত হচ্ছে রেলওয়ে। যারা তুলনামূলকভাবে পিছিয়ে পড়া প্রান্তিক মানুষ, তারা আসলে অনলাইনের এই জটিল ব্যবস্থা বুঝতে সক্ষম নয়। ফলে নিম্নমধ্যম আয়ের বিপুল সংখ্যক মানুষ ট্রেনে চড়ারই অধিকার হারিয়ে ফেলছে। অথচ এরাই ছিল ট্রেনের প্রকৃত যাত্রী।’
মঙ্গলবার দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আর একদিন পরেই পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে ইনশাল্লাহ। আপনাদের সবাইকে জানাচ্ছি পবিত্র ঈদুল ফিতরের অগ্রিম শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক। লুটপাট ও মহাদুর্নীতির কারণে কেড়ে নিয়েছে ঈদুল ফিতরের আনন্দ... পবিত্র ঈদুল ফিতর সমাগত। বিশ্বের মুসলিমের এটি সর্বোচ্চ আনন্দ ও খুশির দিন। ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবাই এই উৎসব পরিবার স্বজন শুভাকাঙ্খীদের নিয়ে উপভোগ করেন। কিন্তু এই বছরেও আবার জনগণের ভোটের অধিকার, গণতন্ত্র কেড়ে নেওয়ায় জনজীবনের এই উৎসব ম্লান হয়ে গেছে। সেই সঙ্গে ডামি সরকারের রাষ্ট্রীয় অর্থনীতি হরিলুট আর মহাদুর্নীতির কারণেই মানুষের শেষ হাসিটুকুও বিলীন হয়ে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘ঈদে আনন্দ উদযাপনের বিপরীতে মুখ লুকিয়ে কাঁদছেন মধ্যবিত্ত মানুষেরা। সমাজে তৈরি হয়েছে ধনী ও গরিবের বিশাল ব্যবধান। অধিকাংশ মানুষের সামান্য প্রয়োজন মেটানোই যেন দুঃস্বপ্ন। দেড় যুগের বেশি সময় ধরে গণতন্ত্র, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক বৈষম্যের কারণে স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও আমরা দেখতে পাচ্ছি গণতন্ত্রের ধ্বংসস্তুপের ওপর দাঁড়িয়ে কর্তৃত্ব করছে এক নিষ্ঠুর নাৎসী সরকার। দুঃশাসনের ছোবলে সমাজে নেমে এসেছে নৈরাজ্যের এক ঘন অন্ধকার।’
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘দ্রব্যমূল্যের চরম উর্ধ্বগতির কষাঘাতে জনজীবনে নিম্ন আয়ের মানুষের আর্তি শোনা যাচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের লাগাম না টেনে বাজার সিন্ডিকেটের হোতাসহ সরকারের আস্থাভাজন ক্ষমতাধর ব্যক্তিবর্গ ব্যস্ত রয়েছে লুটপাট, দুর্নীতি ও বিরোধী মতকে দমনপীড়নে। ছয় বছরের বেশি সময় ধরে অসুস্থ অবস্থায় বিনা অপরাধে মৌলিক মানবিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করে বন্দি রাখা হয়েছে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় বৃহত্তর রাজনৈতিক দল বিএনপির চেয়ারপারসন আপসহীন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে, যিনি দেশের পাঁচটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৩টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সবকটিতেই জনগণের ভোটে জয়ী হয়েছেন। তার উন্নত চিকিৎসা অতীব জরুরি। অথচ হিংসাশ্রয়ী সরকার গায়ের জোরে গুরুতর অসুস্থ দেশনেত্রীকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসা নিতে দিচ্ছে না। এই ঈদও পরিবার ছাড়া বন্দি অবস্থায় তাকে উদযাপন করতে হবে।’
রিজভী বলেন, ‘প্রতিদিন আমাদের কেউ না কেউ হত্যা, না হয় গুম, না হয় জেলে বন্দি হচ্ছে, না হয় মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে। প্রতিদিন ইউনিয়ন পর্যায় থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ পর্যায়ের নেতাদের সারাদিন ধরে প্রায় প্রতিদিন আদালতে সময় পার করতে হচ্ছে। ফলে অধিকাংশ মানুষের চাকরি নেই, বন্ধ হয়ে গেছে ব্যবসা। ১ লাখ ৫০ হাজারের ওপরে মিথ্যা মামলায় প্রায় ৫০ লাখ নেতাকর্মীর মধ্যে কেউ কারাগারে কেউ মানবেতর অবস্থায় ঘরছাড়া বাড়িছাড়া হয়ে জীবনযাপন করছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি, সীমান্ত অরক্ষিত, ভিন্ন রাষ্ট্রের সন্ত্রাসীরা বাংলাদেশকে অভয়ারণ্য মনে করা, তাদের দ্বারা ব্যাংক লুট, থানা আক্রমণ এখন বাংলাদেশে নিত্যদিনের ছবি। দখলদার সরকার নিজেদের ঘরে ভোট ডাকাতিসহ অহরহ রাষ্ট্রীয় অর্থবিত্ত ডাকাতি করতে পারে, অথচ নিজের ঘরকে বহিঃশত্রু থেকে রক্ষা করতে পারে না।’
রুহুল কবির রিজভী আরও বলেন, ‘হত্যা, রক্তপাত, ছিনতাই আর ডাকাতি এদেশে এখন জনজীবনের অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিহত ও আহত হচ্ছে নিরীহ মানুষ। এই মাসেই নরসিংদীতে ‘নগদ’ এর ২ কর্মীকে গুলি করে ৬০ লাখ টাকা ছিনতাই করা হয়েছে। বাংলাদেশের সড়ক এখন মৃত্যুপুরী।’
বিআরইউ