ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার প্রায় নয় মাস পর ভারতে বসে সরব হয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। একাধিক গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়ে তিনি দলের ভবিষ্যৎ, রাজনীতির গতিপথ ও আগামী নির্বাচন নিয়ে নিজের অবস্থান তুলে ধরছেন।
শনিবার ঈদুল আজহার দিন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের প্রভাবশালী দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকার সৌরভ পালকে একটি অডিও সাক্ষাৎকার দেন আওয়ামী লীগের এই শীর্ষ নেতা। এতে তিনি নির্বাচন, দলীয় ভবিষ্যৎ, ও ক্ষমতাচ্যুতির পরবর্তী করণীয়সহ নানা বিষয়ে মুখ খুলেছেন।
প্রধান উপদেষ্টা ঘোষিত নির্বাচন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, “ড. ইউনূস নির্বাচনের যে নির্ঘণ্ট ঘোষণা করেছেন, সেটাই নির্বাচন না করার বীজ অঙ্কুরিত করেছে।” তিনি আরও বলেন, “আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে তা জনমতকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা হবে। এখনো বাংলাদেশের ৪৫ শতাংশের বেশি মানুষ আওয়ামী লীগের সমর্থক। এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে নির্বাচনের বাইরে রাখা মানে একটি চরম প্রহসনের জন্ম দেওয়া।”
‘আমাদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে’
সাক্ষাৎকারে সাংবাদিক এক কথায় জানতে চান, আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে কি না। জবাবে দলের তিনবারের সাধারণ সম্পাদক বলেন, “আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এমনকি নির্বাচন কমিশন থেকে আমাদের রেজিস্ট্রেশনও বাতিল করা হয়েছে। আমরা কীভাবে নির্বাচনে অংশ নেব? এখন আমাদের অস্তিত্বই হুমকির মুখে। আমাদের প্রথম কাজ হলো রাজনৈতিক ও সাংগঠনিকভাবে দলকে টিকিয়ে রাখা। কারণ আজ আমাদের আদর্শ ও সংগঠন—দু’টোই সংকটে।”
তিনি আরও বলেন, “আওয়ামী লীগ জনগণের সংগঠন। গণভিত শক্তিশালী করা এখন আমাদের প্রধান এজেন্ডা। আমরা সেই কাজই করছি এবং করে যাব।”
মৌলবাদী গোষ্ঠীর ছায়া
জামায়াতে ইসলামীর নির্বাচনী সমর্থন এবং তাতে প্রধান উপদেষ্টার সাড়া প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, “বাংলাদেশের জনগণের কাছে এখন স্পষ্ট, ড. ইউনূসের ক্ষমতার উৎস হচ্ছে মৌলবাদী ও উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী। এই গোষ্ঠীগুলোই তার রাজনৈতিক অ্যালাই। তাদের সঙ্গে পথচলাই ইউনূসের ক্ষমতায় টিকে থাকার প্রধান ভরসা।”
শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন প্রসঙ্গে
আনন্দবাজার সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা প্রায়ই ঘোষণা দিচ্ছেন তিনি দেশে ফিরবেন, আবার ক্ষমতায় বসবেন এবং ‘চব্বিশের পতনের’ জন্য দায়ীদের শাস্তি দেবেন—এটা কবে ঘটবে? জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, “আমরা কবে দেশে ফিরতে পারব, তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। এটা নির্ভর করছে সমসাময়িক পরিস্থিতি, এই অঞ্চলের ভূরাজনীতি এবং বাংলাদেশের জনগণের চিন্তাভাবনার ওপর।”
নেত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ প্রসঙ্গে
ঈদ উপলক্ষে শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা হয়েছে কি না—এমন প্রশ্নে তিনি জানান, “বিকেলে কথা বলব। তিনি (শেখ হাসিনা) ভালো আছেন, সুস্থ আছেন। সারা বাংলাদেশে তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন, তাদের উজ্জীবিত করছেন। প্রতিদিনই তিনি তাদের সঙ্গে কথা বলছেন।”
ইএইচ